- ১৩ অক্টোবর, ২০২৫
বেইজিংয়ের সামরিক মহড়ায় ঝকঝকে রৌদ্রে চোখ ধাঁধানোভাবে ধীরে ধীরে উজ্জ্বল DF-17 হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র প্রদর্শিত হয়। ১১ মিটার দীর্ঘ ও ১৫ টন ওজনের এই ক্ষেপণাস্ত্রগুলো বিশ্বকে দেখাল চীনের আধুনিক হাইপারসনিক প্রযুক্তি।
২০১৯ সালের ১ অক্টোবর জাতীয় দিবসের প্যারেডে প্রথম প্রকাশ করা হয় Dongfeng-17 (DF-17) ক্ষেপণাস্ত্রের এই প্রতিরক্ষা সামগ্রী। তখনই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র জানত যে চীন এই ক্ষেপণাস্ত্রগুলোর উন্নয়ন করছে। গত কয়েক বছরে চীন এগিয়ে গেছে, প্রতিটি ক্ষেপণাস্ত্রকে দ্রুতগতিতে ও যেকোনো সময় দিক পরিবর্তন করতে সক্ষম করে তুলেছে।
হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্রগুলো শব্দের গতির পাঁচগুণেরও বেশি গতিতে ভ্রমণ করতে পারে এবং লক্ষ্যবস্তুতে অপ্রত্যাশিতভাবে দিক পরিবর্তন করতে সক্ষম। ফলে এগুলোকে সনাক্ত ও প্রতিহত করা অত্যন্ত কঠিন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ধরনের অস্ত্র যুদ্ধের ধরণ পরিবর্তন করতে পারে।
বিশ্বে বর্তমানে চীন সবচেয়ে এগিয়ে, তার পরে রয়েছে রাশিয়া। যুক্তরাষ্ট্র এখনও পিছিয়ে রয়েছে এবং যুক্তরাজ্যের কোনো হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র নেই। অন্যদিকে ইসরায়েল Arrow 3 ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে প্রতিরক্ষা করছে, এবং ইরান ও উত্তর কোরিয়াও নিজেদের হাইপারসনিক প্রোগ্রামে কাজ করছে।
হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র মূলত দুই প্রকার:
বুস্ট-গ্লাইড মিসাইল: রকেটের মাধ্যমে আকাশে ছোড়া হয়, এরপর লক্ষ্যবস্তুতে দ্রুত নেমে আসে এবং যেকোনো দিক পরিবর্তন করতে পারে।
হাইপারসনিক ক্রুজ মিসাইল: ভূ-পৃষ্ঠের নিকটে উড়ে, রাডার থেকে গোপন থাকে এবং লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানে।
এগুলি ডুয়াল-ইউজ অস্ত্র, অর্থাৎ পারমাণবিক বা প্রচলিত বিস্ফোরক হেড বহন করতে সক্ষম। তাদের দ্রুতগতি ও অপ্রত্যাশিত উড়ান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার জন্য বড় চ্যালেঞ্জ।
যুক্তরাষ্ট্র ইতিমধ্যেই Dark Eagle নামের হাইপারসনিক অস্ত্রের উদ্বোধন করেছে। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, চীন ও রাশিয়ার হাতে এ প্রযুক্তি অনেক বেশি উন্নত এবং এটি যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটোর জন্য উদ্বেগের বিষয়।
বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করছেন, হাইপারসনিক প্রযুক্তি যুদ্ধের প্রকৃতি পরিবর্তন না করলেও যুদ্ধ পরিচালনার সময়সীমা উল্লেখযোগ্যভাবে ছোট করে দেয়। ক্ষেপণাস্ত্র লক্ষ্যবস্তুতে পৌঁছানোর আগে প্রতিরক্ষার সুযোগ সীমিত থাকে।
চীন ও রাশিয়ার এই অগ্রগতি পশ্চিমা দেশগুলোর জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র সনাক্তকরণ ও প্রতিহত করতে সেটেলাইট ও স্পেস-ভিত্তিক সেন্সর বাড়ানোর প্রয়োজনীয়তা অত্যন্ত জরুরি।
তবে কিছু বিশ্লেষক মনে করছেন, হাইপারসনিকের বিপুল হাইপ কিছুটা অতিরঞ্জিত। তাদের মতে, দ্রুতগতি ও কৌশলগত ক্ষমতা গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করার ক্ষেত্রে কার্যকর, কিন্তু সঠিক সনাক্তকরণ ও প্রতিহতের প্রযুক্তি থাকলে এ ধরনের ক্ষেপণাস্ত্রকে মোকাবিলা করা সম্ভব।