Friday, December 5, 2025

২৯ বছর পর সালমান শাহর মৃত্যুর ঘটনায় হত্যা মামলা করার নির্দেশ আদালতের


ফাইল ছবিঃ সালমান শাহ ও সামিরা (সংগৃহীত)

স্টাফ রিপোর্টার | PNN: 

বাংলাদেশি চলচ্চিত্রের ক্ষণজন্মা তারকা সালমান শাহর মৃত্যুর রহস্য ২৯ বছরের বেশি সময় ধরে বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে। কিছু পক্ষ দাবি করেন এটি আত্মহত্যা, আবার কেউ কেউ বলছেন হত্যা। সম্প্রতি এক টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে প্রয়াত অভিনেতার সাবেক স্ত্রী সামিরা হক বলেছেন, সালমান মানসিকভাবে ‘আত্মহত্যাপ্রবণ’ ছিলেন।

সালমান শাহ, যাঁর আসল নাম শাহরিয়ার চৌধুরী ইমন, ১৯৯২ সালে মাত্র ২১ বছর বয়সে খালার বান্ধবীর মেয়ে সামিরা হককে বিয়ে করেছিলেন। সামিরা হক ছিলেন জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক শফিকুল হক হীরার মেয়ে। তিনি তখন বিউটি পার্লার ব্যবসায় জড়িত ছিলেন এবং সালমানের দুটি চলচ্চিত্রের পোশাক পরিকল্পনাতেও অংশ নিয়েছিলেন। সিনেমায় স্টাইল ও ফ্যাশনের বিষয়েও সালমান প্রায়ই তাঁর পরামর্শ নিতেন।

২০২৩ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর সালমান শাহর জন্মদিনে চ্যানেল টোয়েন্টিফোরে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সামিরা হক স্পষ্টভাবে বলেছেন, সালমান আত্মহত্যা করেছেন এবং আগেও তিনবার আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন। তিনি বলেন, “মেট্রোপলিটন হাসপাতালের রেকর্ডে দুবারের তথ্য আছে, আরেক হাসপাতালে তৃতীয়টি। সবই আমাদের বিয়ের আগে ঘটেছে। একবার মায়ের সঙ্গে ঝগড়ার পর, একবার আমাকে বিয়েতে রাজি করানোর জন্য, আরেকবার অন্য একটি ঘটনার কারণে।”

সামিরা আরও বলেন, “ইমন সিনেমায় ক্যারিয়ার করতে চায়নি, পড়াশোনা করতে চেয়েছিল। ছোটবেলায় যে মানসিক কষ্টগুলো দেখেছে, তা তার ওপর গভীর প্রভাব ফেলেছিল। তখন কাউন্সেলিং বা রিহ্যাবের ব্যবস্থা ছিল না। একজন সুপারস্টার ‘সালমান শাহ’ হওয়ার পর এসব ব্যক্তিগত কষ্ট আর বলতে পারত না। যেটি বলত, তা নিউজ হয়ে যেত।”

সালমান শাহর মা নীলা চৌধুরী বরাবর দাবি করে আসছেন, তাঁর ছেলে হত্যা করা হয়েছে, আত্মহত্যা নয়। অন্যদিকে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)-এর সাবেক প্রধান বনজ কুমার মজুমদার জানান, সালমান আত্মহত্যা করেছেন এবং তাদের তদন্তে পাঁচটি কারণ চিহ্নিত করা হয়েছে।

সালমান শাহ মাত্র ২৫ বছর বয়সে ২৭টি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছিলেন, যার সবকটিই বাণিজ্যিকভাবে সফল। নব্বইয়ের দশকে রোমান্টিক হিরোর নতুন ধারা তিনি দেশের চলচ্চিত্রে চালু করেন। ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’, ‘স্বপ্নের পৃথিবী’, ‘অন্তরে অন্তরে’, ‘বিক্ষোভ’, ‘চাওয়া থেকে পাওয়া’, ‘প্রেমযুদ্ধ’—সব সিনেমাই বক্স অফিসে হিট হয়।

১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর ঢাকার ইস্কাটনের বাসায় ফ্যানের সঙ্গে ঝুলন্ত অবস্থায় সালমান শাহর মরদেহ উদ্ধার করা হয়। একাধিক সংস্থা—থানা, পুলিশ, সিআইডি, র‍্যাব, পিবিআই—তদন্ত চালিয়েও সব প্রতিবেদনে ঘটনাটিকে আত্মহত্যা বলা হয়। তবে পরিবারের আপত্তিতে তদন্ত সংস্থা প্রতিবার পরিবর্তন করা হয়।

সাম্প্রতিক আপডেটে জানা গেছে, ২৯ বছর পর আদালত সালমান শাহর মৃত্যুর ঘটনায় হত্যা মামলা করার নির্দেশ দিয়েছে। ঢাকার ষষ্ঠ অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ জান্নাতুল ফেরদৌস ইবনে হক এই আদেশ দেন। সালমান শাহর মায়ের আইনজীবী ফারুক আহমেদ প্রথম আলোকে জানান, পিবিআই নিরপেক্ষ তদন্ত করেনি। সেই কারণে ২০২১ সালে নীলা চৌধুরী চূড়ান্ত প্রতিবেদনে নারাজি জানিয়েছিলেন। আদালত সেই রিভিশন আবেদন মঞ্জুর করেছেন এবং হত্যা মামলা করার নির্দেশ দিয়েছেন।

সালমান শাহর অকালমৃত্যু বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের জন্য এক অবিস্মরণীয় ক্ষতি, এবং তাঁর মৃত্যুর রহস্য এখনো আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে।

Super Admin

PNN

প্লিজ লগইন পোস্টে মন্তব্য করুন!

আপনিও পছন্দ করতে পারেন