- ১৩ অক্টোবর, ২০২৫
দীর্ঘ ১৫ বছরের স্থবিরতা কাটিয়ে বাংলাদেশ-পাকিস্তানের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক নতুন এক পর্যায়ে প্রবেশ করতে যাচ্ছে। পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার আগামী আগস্টের তৃতীয় সপ্তাহে ঢাকায় একটি উচ্চপর্যায়ের সফর করবেন। এই সফরের সময় একাধিক গুরুত্বপূর্ণ চুক্তি স্বাক্ষর হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
সরকারি কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, গত এপ্রিল মাসে স্থগিত হওয়া সফরটি এবার সফল হওয়ার পথে রয়েছে এবং ২২ অথবা ২৩ আগস্ট ইসহাক দারের ঢাকা আগমনের সম্ভাবনা রয়েছে। ওই সময় ইসলামাবাদের পক্ষ থেকে সম্পর্ক আরও দৃঢ় করার সংকেত দেওয়া হবে।
গত ২৭ এপ্রিল ভারতের পাহেলগামে সন্ত্রাসী হামলার পর সীমান্তে উত্তেজনা বৃদ্ধির কারণে সফরটি পিছিয়ে যায়। তবে বর্তমানে রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর পাকিস্তানের ঢাকা সফরের আগ্রহ বেড়েছে বলে কূটনৈতিক পর্যবেক্ষকরা জানাচ্ছেন। বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর দুই দেশের সম্পর্কেও ইতিবাচক সাড়া দেখা যাচ্ছে।
এই সফরের পর পাকিস্তান দুই দেশের যৌথ অর্থনৈতিক কমিশনের (জেইসি) বৈঠক ইসলামাবাদে আয়োজন করতে চায়। উল্লেখ্য, সর্বশেষ (অষ্টম) জেইসি বৈঠক ২০০৫ সালের সেপ্টেম্বরে ঢাকায় অনুষ্ঠিত হয়েছিল।
সাম্প্রতিককালে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ ও বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের মধ্যে দুইবার সাক্ষাৎ হয়েছে। বিশেষ করে মিশরে দ্বিতীয় সাক্ষাতে একাত্তরের প্রসঙ্গে ক্ষমা চাওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করেন ড. ইউনূস, যা দুই দেশের সম্পর্কের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।
ঢাকায় ইসহাক দারের প্রধান বৈঠক হবে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেনের সঙ্গে। এছাড়া তিনি প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গেও সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন। নিউইয়র্কে এক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে ইসহাক দার এবং তৌহিদ হোসেনের বৈঠকে বাংলাদেশের জন্য ভিসা সহজীকরণ ও বাণিজ্য বৃদ্ধির বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ পায়।
একজন কূটনীতিক জানান, সফরের প্রস্তুতি প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে এবং কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ চুক্তি সই হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়া ইসহাক দার বাংলাদেশি রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গেও আলোচনা করতে পারেন।
যদিও বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের গণহত্যার জন্য নিঃশর্ত ক্ষমা চাওয়া, যুদ্ধক্ষতিপূরণ, আটকে থাকা পাকিস্তানি নাগরিকদের প্রত্যাবাসন ও সম্পদের হিস্যা সংক্রান্ত অমীমাংসিত ইস্যুগুলো গুরুত্ব সহকারে উত্থাপিত হতে পারে।
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন বারবার উল্লেখ করেছেন, “একাত্তর বাদ দিয়ে পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের কোনো চেষ্টা নেই” এবং পাকিস্তান আন্তরিকভাবে ক্ষমা চাইলে তা সম্পর্কের উন্নতির জন্য সুযোগ তৈরি হবে।
আগামী ঢাকা-ইসলামাবাদ পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকের সূচি এখনো চূড়ান্ত হয়নি, তবে আগস্টের শুরুতে তা নির্ধারণের আশা করা হচ্ছে।
বিগত বছরগুলোতে দুই দেশের উচ্চ পর্যায়ের সফর খুবই সীমিত ছিল; ২০১২ সালে পাকিস্তানের তখনকার পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিনা রাব্বানি খার ঢাকায় এসেছিলেন, এরপর কোনো মন্ত্রী পর্যায়ের সফর হয়নি। এবার এই সফর নতুন সম্পর্ক গড়ে তোলার পথে বড় পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে।