- ২০ অক্টোবর, ২০২৫
স্টাফ রিপোর্টার | PNN:
এক অভিনব উপায়ে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রশিক্ষণ দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক কোম্পানি টিউরিং (Turing)। প্রতিষ্ঠানটি সম্প্রতি শিল্পী, নির্মাণশ্রমিক, ইলেকট্রিশিয়ান, এমনকি রাঁধুনিদেরও সঙ্গে নিচ্ছে—তাদের দৈনন্দিন কাজের ভিডিও ধারণ করে একটি নতুন ভিশন মডেল (Vision Model) তৈরির জন্য।
এক সপ্তাহ ধরে শিল্পী টেইলর ও তার সহবাসী একসঙ্গে মাথায় গোপ্রো ক্যামেরা বেঁধে দিনভর ছবি আঁকা, ভাস্কর্য তৈরি ও ঘরের কাজ করেছেন। তাদের সেই ভিডিওগুলো ব্যবহার করা হচ্ছে টিউরিং-এর এআই মডেল প্রশিক্ষণে। উদ্দেশ্য—যেন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা শুধু দৃশ্য চিনতে না পারে, বরং বাস্তব জীবনের কাজের ধরণ ও ধাপে ধাপে সমস্যার সমাধান প্রক্রিয়াও বুঝতে শেখে।
টেইলর বলেন, “আমরা সকালে উঠে দৈনন্দিন কাজ শুরু করতাম, তারপর ক্যামেরা অন করে রান্না, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, তারপর আর্ট তৈরি করতাম। দিনে পাঁচ ঘণ্টার ফুটেজ দিতে হতো, কিন্তু আসলে সাত ঘণ্টা কাজ করতে হতো, কারণ এটা শারীরিকভাবে ক্লান্তিকর ছিল।”
টিউরিং-এর চিফ এজিআই অফিসার সুদর্শন শিবরামন জানান, তাঁদের লক্ষ্য হচ্ছে মানুষের নানান ধরণের হাতের কাজ রেকর্ড করা, যাতে মডেলটি শিখতে পারে কিভাবে ভিন্ন ভিন্ন পেশার কাজ সম্পন্ন হয়। “আমরা হাতের কাজ করেন এমন মানুষদেরই বেছে নিচ্ছি—রাঁধুনি, রাজমিস্ত্রি, মেকানিক, শিল্পী। এই বৈচিত্র্যময় ডেটাই ভবিষ্যতের ভিশন মডেলের শক্তি হবে,” বলেন তিনি।
বর্তমানে টিউরিং-এর প্রায় ৭৫ থেকে ৮০ শতাংশ ডেটা সিনথেটিক, অর্থাৎ বাস্তব ভিডিও থেকে তৈরি কৃত্রিম ফুটেজ। কিন্তু সংস্থাটির মতে, মূল ভিডিওর মান যত ভালো হবে, সিনথেটিক ডেটাও তত বেশি কার্যকর হবে।
এআই গবেষণার এই নতুন দিকটি তুলে ধরেছে একটি বড় পরিবর্তন—যেখানে আগে অনলাইন থেকে অগণিত ছবি ও ভিডিও সংগ্রহ করে মডেল প্রশিক্ষণ দেওয়া হতো, এখন সেখানে কোম্পানিগুলো নিজেরাই “মানব-কেন্দ্রিক” ডেটা তৈরি করছে।
শুধু টিউরিং নয়, ফিক্সার (Fyxer) নামের আরেক এআই কোম্পানিও একই পথ অনুসরণ করছে। ইমেইল সাজানো ও উত্তর তৈরিতে ব্যবহৃত এআই সিস্টেমটির প্রতিষ্ঠাতা রিচার্ড হলিংসওয়ার্থ বলেন, “আমরা বুঝেছি, ডেটার পরিমাণ নয়, গুণগত মানই আসল। ভালো ডেটা মানেই ভালো পারফরম্যান্স।”
তিনি আরও জানান, তাদের মডেল প্রশিক্ষণে অভিজ্ঞ নির্বাহী সহকারীদের ব্যবহার করা হয়েছে, কারণ “ইমেইলের প্রেক্ষাপট ও মানবিক যোগাযোগের সূক্ষ্মতা বোঝার জন্য মানব অভিজ্ঞতা অপরিহার্য।”
বিশ্লেষকদের মতে, টিউরিং ও ফিক্সারের এই কৌশল কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা উন্নয়নের এক নতুন ধারা তৈরি করছে—যেখানে গোপন প্রতিযোগিতার মূল অস্ত্র আর অ্যালগরিদম নয়, বরং মানুষের হাতে তৈরি উচ্চমানের ডেটা।
যেভাবে হলিংসওয়ার্থ বলেন, “যে কেউ ওপেন সোর্স মডেল ব্যবহার করতে পারে, কিন্তু সবাই অভিজ্ঞ মানুষ খুঁজে ডেটা তৈরি করতে পারে না—এটাই আমাদের প্রকৃত শক্তি।”