- ২০ অক্টোবর, ২০২৫
স্টাফ রিপোর্টার | PNN:
বিখ্যাত নাগরিক অধিকার আন্দোলনের নেতা মার্টিন লুথার কিং জুনিয়রের চেহারা ব্যবহার করে এআই ভিডিও তৈরির সুযোগ সাময়িকভাবে বন্ধ করেছে ওপেনএআই। বৃহস্পতিবার (১৬ অক্টোবর) প্রতিষ্ঠানটি জানায়, তাদের নতুন ভিডিও জেনারেশন মডেল ‘সোরা’-এর মাধ্যমে কিছু ব্যবহারকারী কিং–এর অসম্মানজনক ভিডিও তৈরি করায় কিং পরিবারের অনুরোধে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
ওপেনএআই এক্স (X)–এ তাদের অফিসিয়াল অ্যাকাউন্ট থেকে জানায়, “ঐতিহাসিক ব্যক্তিত্বদের উপস্থাপনের ক্ষেত্রে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা গুরুত্বপূর্ণ হলেও, আমরা বিশ্বাস করি তাঁদের উত্তরাধিকারী বা পরিবারকেই সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার থাকা উচিত যে তাঁদের চেহারা কীভাবে ব্যবহৃত হবে।” প্রতিষ্ঠানটি আরও জানায়, কিং পরিবারের মতো অনুমোদিত প্রতিনিধি বা উত্তরাধিকারীরা চাইলে তাঁদের চেহারা ‘সোরা’তে ব্যবহার নিষিদ্ধ করতে পারবেন।
সাম্প্রতিক সপ্তাহে চালু হওয়া সোরা প্ল্যাটফর্মটি ব্যবহারকারীদের বাস্তবসম্মত এআই ভিডিও তৈরি করতে দেয়, যেখানে ঐতিহাসিক ব্যক্তিত্ব কিংবা পরিচিত মুখের মতো অবয়ব দেখা যায়। কিন্তু এর সূচনার পর থেকেই সামাজিক মাধ্যমে তীব্র বিতর্ক শুরু হয়েছে—এই প্রযুক্তি দিয়ে মানুষ, সংস্কৃতি বা ইতিহাসকে বিকৃত করার আশঙ্কা নিয়ে।
মার্টিন লুথার কিং–এর কন্যা ড. বার্নিস কিং সম্প্রতি ইনস্টাগ্রামে পোস্ট দিয়ে অনুরোধ করেছেন, যেন কেউ তাঁর বাবার এআই ভিডিও তৈরি না করেন। এর আগেও প্রয়াত অভিনেতা রবিন উইলিয়ামসের মেয়ে একই ধরনের আবেদন করেছিলেন।
ওয়াশিংটন পোস্ট–এর প্রতিবেদনে বলা হয়, কিছু সোরা ব্যবহারকারী কিং–এর এআই ভিডিও তৈরি করেছেন যেখানে তাঁকে অবমাননাকরভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে—এমনকি এক ভিডিওতে তাঁকে মালকম এক্স–এর সঙ্গে লড়াই করতে দেখা গেছে। এসব ভিডিওর পাশাপাশি অ্যাপে দেখা গেছে হুইটনি হিউস্টন, জন এফ. কেনেডি, এমনকি বব রসের মতো ব্যক্তিত্বদের অবাস্তব ও অশোভন রূপায়ণ।
কিং পরিবারের প্রতিনিধি এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো মন্তব্য করেননি। তবে সোরা–এর এই বিতর্কের পর ওপেনএআই জানিয়েছে, তারা কপিরাইটধারী ও ঐতিহাসিক ব্যক্তিদের পরিবারকে আরও নির্দিষ্ট নিয়ন্ত্রণের সুযোগ দিতে কাজ করছে।
এদিকে সোরা চালুর পর থেকে ওপেনএআই একাধিক নতুন সীমাবদ্ধতা আরোপ করেছে। প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে, তারা কপিরাইট–সংক্রান্ত ভিডিও তৈরিতে আরও কঠোর নিয়ন্ত্রণ আনবে।
ওপেনএআই প্রধান নির্বাহী স্যাম অল্টম্যান নিজেও স্বীকার করেছেন যে সোরা চালুর দিন প্রতিষ্ঠানটির ভেতরে কিছুটা ‘উদ্বেগ’ ছিল। তিনি বলেন, “নতুন প্রযুক্তি শেখার সেরা উপায় হলো সেটিকে বাস্তব দুনিয়ায় ব্যবহার করা। কিন্তু সেটি দায়িত্বশীলভাবে করাই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।”
বিশ্লেষকদের মতে, সোরা এখন ওপেনএআই–এর জন্য এক পরীক্ষার ক্ষেত্র—যেখানে প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন ও নৈতিক সীমারেখার ভারসাম্য বজায় রাখা হবে তাদের সবচেয়ে কঠিন কাজ।