Tuesday, October 14, 2025

তাইওয়ানের ইতিহাসের সর্ববৃহৎ যুদ্ধ মহড়া: চীনের হামলার সম্ভাব্যতা মাথায় রেখে ব্যাপক প্রস্তুতি


তাইওয়ানের তাওইয়ানে একটি জুনিয়র হাই স্কুলে বার্ষিক হান কুয়াং সামরিক মহড়ার সময় প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন তাইওয়ানের রিজার্ভ সেনারা [অ্যান ওয়াং / রয়টার্স]

তাইওয়ান চীনের সম্ভাব্য আক্রমণ রুখতে শুরু করেছে তাদের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় পরিসরের বার্ষিক সামরিক মহড়া "হান কুয়াং"। ১০ দিনব্যাপী এই মহড়া বুধবার(৯ জুলাই ২০২৫) থেকে শুরু হয়েছে, যেখানে চীনা হামলার পূর্ব মুহূর্তে সাইবার ও বৈদ্যুতিন হামলার জবাবে প্রতিরক্ষা কৌশল অনুশীলন করছে তাইওয়ানের সেনাবাহিনী।

এই মহড়ার ঠিক আগের দিন চীনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানায়, তাইওয়ানের সঙ্গে তাদের “পুনর্মিলন অনিবার্য” এবং তা কেউ ঠেকাতে পারবে না। এরই প্রেক্ষিতে মহড়ার গুরুত্ব বেড়ে যায় বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

তাইওয়ানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা রয়টার্সকে জানান, ইউক্রেন যুদ্ধ থেকে শিক্ষা নিয়ে এই মহড়ার পরিকল্পনা করা হয়েছে, যাতে বাস্তব যুদ্ধ পরিস্থিতিতে প্রস্তুত থাকা যায়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই কর্মকর্তা বলেন, “আমরা বাস্তবসম্মত অনুশীলনের মাধ্যমে বুঝে নিতে চাই, চীনের আক্রমণের সময় আমাদের কীভাবে প্রতিক্রিয়া জানাতে হবে।”

এবারের মহড়ায় সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীর পাশাপাশি রেকর্ডসংখ্যক ২২ হাজার রিজার্ভ সদস্য অংশ নিয়েছেন। তাওইয়ান শহরের একটি স্কুলকে সাময়িক প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে রূপান্তর করে সেখানে প্রায় ৩০০ রিজার্ভ সেনাকে অস্ত্র প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে।

কৌশল ও সামরিক প্রস্তুতি

প্রথম দিনেই তাইওয়ান চীনা নৌযান দ্বারা উপদ্রবের শিকার দ্বীপগুলোর চারপাশে প্রতিরোধমূলক মহড়া চালিয়েছে। আগামী দিনগুলোতে চীনা সেনাদের সম্ভাব্য উপকূলীয় অবতরণ রুখে দেওয়ার অনুশীলন, বন্দর সুরক্ষা এবং কৌশলগত স্থানে প্রতিরক্ষা গড়ে তোলার ওপর জোর দেওয়া হবে।

এছাড়া মহড়ার শুরুতেই তাইওয়ান চীনের সম্ভাব্য যোগাযোগ ব্যবস্থা লক্ষ্য করে সাইবার বা বৈদ্যুতিন হামলার পরিণতি কল্পনা করে কমান্ড কাঠামো বিকেন্দ্রীকরণ অনুশীলন শুরু করেছে।

এ বছর প্রথমবারের মতো যুক্তরাষ্ট্র থেকে সংগৃহীত হাই মোবিলিটি আর্টিলারি রকেট সিস্টেম (HIMARS) এবং নিজস্ব উন্নয়নে তৈরি স্কাই সোর্ড ভূমি-থেকে-আকাশ ক্ষেপণাস্ত্র মহড়ায় ব্যবহৃত হচ্ছে। তাইওয়ান সম্প্রতি নতুন ট্যাংক, জলচালিত ড্রোনসহ উন্নত অস্ত্র সংগ্রহ করেছে।

চীনের প্রতিক্রিয়া ও উত্তেজনার মাত্রা

চীনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র কর্নেল জিয়াং বিং মহড়াটিকে “ভয় দেখানো ও আত্মপ্রবঞ্চনার প্রচেষ্টা” বলে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেন, “ডিপিপি সরকার এই মহড়ার মাধ্যমে জনগণকে স্বাধীনতার পথ দেখিয়ে দ্বীপকে বিপদে ফেলছে। তবে PLA-এর শক্তির কাছে এ ধরনের প্রস্তুতি কোনো কাজেই আসবে না।”

চীনের সাম্প্রতিক মন্তব্য, যুদ্ধজাহাজ ও বিমান টহলের মাধ্যমে তাইওয়ানের চারপাশে উত্তেজনা আরও বেড়েছে। তাইওয়ানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, চীনের এসব তৎপরতা মহড়ার প্রস্তুতি ব্যাহত করতে পারে, তবে তারা নজরদারি ও প্রতিরক্ষা প্রস্তুতি বাড়িয়ে দিয়েছে।

তাদের ভাষ্য, মঙ্গলবার থেকেই তাইওয়ানের আকাশ ও সমুদ্রপথে নজরদারি চালানো হয়েছে এবং প্রয়োজনে প্রতিক্রিয়া জানাতে বিমান, নৌযান এবং ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন রয়েছে।

ভবিষ্যৎ প্রেক্ষাপট

বিশ্লেষকদের মতে, এই মহড়া শুধু তাইওয়ানের অভ্যন্তরীণ প্রস্তুতিরই অংশ নয়, বরং আন্তর্জাতিক বার্তাও—যেখানে তাইওয়ান দেখাতে চায়, তারা আক্রমণ প্রতিহত করতে প্রস্তুত এবং ভবিষ্যৎ নির্ধারণে জনগণের মতই চূড়ান্ত। চীনের “পুনর্মিলন অনিবার্য” দাবি এবং তাইওয়ানের স্বাধীনতা রক্ষার সংকল্প—এই দ্বন্দ্ব ভবিষ্যতে আরও বড় সংঘাতের ইঙ্গিত দিচ্ছে।

এদিকে আন্তর্জাতিক মহলের দৃষ্টি এখনো মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপীয় যুদ্ধক্ষেত্রে থাকায় তাইওয়ান পরিস্থিতিকে নীরবে মূল্যায়ন করছে। তবে একাধিক ফ্রন্টে উত্তেজনা ক্রমশ বিশ্ব নিরাপত্তা পরিস্থিতিকে জটিল করে তুলছে।


Super Admin

PNN

প্লিজ লগইন পোস্টে মন্তব্য করুন!

আপনিও পছন্দ করতে পারেন