Tuesday, October 14, 2025

সিলেটে পাথর লুট: বিএনপি–আ.লীগ–জামায়াত ও সমন্বয়কদের সিন্ডিকেটের দাপট


সংগৃহীত

স্টাফ রিপোর্টার

আসিফ মাহমুদ | ১৯ আগস্ট ২০২৫


সিলেটের শাহ আরেফিন টিলা—একসময় ৭০০ বছরের ঐতিহাসিক মাজারসহ দৃশ্যমান একটি পাহাড়ি টিলা। অথচ আজ এটি নেই, রূপ নিয়েছে ধ্বংসস্তূপে। মাত্র এক বছরের মধ্যে দেড় কোটি ঘনফুটেরও বেশি পাথর লুট হয়েছে এখান থেকে। অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে ভয়াবহ তথ্য—এই লুটপাটের সঙ্গে জড়িত বিএনপি, আওয়ামী লীগ, জামায়াতসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী এবং বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের পরিচয়ধারী সমন্বয়করা।


আইনের পরও সরকারি ইজারা


১৯৯৫ সালে টিলা রক্ষায় আইন প্রণীত হলেও ১৯৯৯ সালে শাহ আরেফিন টিলা সরকারিভাবে ইজারা দেওয়া হয়। এরপর মামলা-মোকদ্দমায় কিছুদিন কার্যক্রম বন্ধ থাকলেও ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট থেকে আবারও অবাধে শুরু হয় টিলা কেটে পাথর উত্তোলন। এক বছরের মাথায় পাহাড়ি টিলা নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে।


সিন্ডিকেটের দাপট


যমুনা টেলিভিশনের অনুসন্ধানে জানা যায়, অন্তত ২০ জনের একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট এ লুটপাটে সরাসরি জড়িত। এদের মধ্যে আছেন উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক বাবুল আহমদ বাবুল, ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সেবুল আহমদ, উপজেলা আওয়ামী লীগের ধর্মবিষয়ক সম্পাদক হুঁশিয়ার আলী, যুবলীগ সভাপতি ফয়জুর রহমান, জামায়াত কর্মী ইয়াকুব আলীসহ অনেকে।


কোটি টাকার কারবার


পাথর তোলা, পরিবহন, ভাড়া করা জমিতে স্তূপ করে রাখা এবং মিল মালিকদের কাছে বিক্রির মাধ্যমে প্রতিদিন গড়ে সোয়া কোটি টাকা লাভ করত সিন্ডিকেট। এক নৌকা পাথরের দাম যেখানে ৮ হাজার টাকা, সেখানে শ্রমিকদের কাছ থেকে তা কিনে নেওয়া হতো মাত্র ২ হাজার টাকায়।


বিএনপি–আ.লীগ–জামায়াতের সম্পৃক্ততা


অনুসন্ধানে উঠে আসে, উপজেলা বিএনপির সভাপতি সাহাব উদ্দিন, জেলা যুবদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বাহার আহমেদ রুহেল, উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক সাজ্জাদ দুদু, আওয়ামী লীগ নেতা কালাইরাগের দুলাল মিয়া, উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য আমিনুল ইসলাম, স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা শাহাবুদ্দিনসহ একাধিক রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের নাম। এ ছাড়া স্থানীয় ছাত্রদল, যুবদল ও জামায়াতের কর্মীরাও সরাসরি জড়িত ছিলেন বলে অভিযোগ।


প্রশাসনের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ


লুটপাট চলাকালে প্রশাসন নিষ্ক্রিয় ছিল বলে অভিযোগ উঠেছে। জুলাইয়ের ফুটেজে দেখা যায়, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সামনেই নদী থেকে পাথর তোলা হচ্ছে। অথচ পরে তাকেই দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে তদন্তের। পুলিশের বিরুদ্ধেও চাঁদাবাজির অভিযোগ রয়েছে।

পরিবেশবাদীদের ক্ষোভ


এ বিষয়ে বেলা’র বিভাগীয় সমন্বয়ক শাহ সাহেদা আক্তার বলেন, “যারা এ কাজে জড়িত তাদের মুখ বদলেছে, কিন্তু অবৈধ কার্যক্রম বন্ধ হয়নি।”

ভয়াবহ ক্ষয়ক্ষতি

শুধু শাহ আরেফিন টিলা নয়, জাফলং, সাদাপাথর ও রাংপানি থেকেও লুট হয়েছে প্রায় ৩ কোটি ঘনফুট পাথর। উদ্ধার করা গেছে মাত্র ৫ লাখ ঘনফুট। বাকিগুলো ইতোমধ্যেই বাজারে বিক্রি হয়ে গেছে বা ক্রাশারে চূর্ণ করা হয়েছে।

প্রশ্নের মুখে সরকার


স্থানীয়রা বলছেন, প্রশাসন ও রাজনৈতিক প্রভাবশালীদের ছত্রচ্ছায়া ছাড়া এতো ব্যাপক লুটপাট সম্ভব নয়। এখন প্রশ্ন উঠছে—কারা দায় নেবে শাহ আরেফিন টিলা ধ্বংসের, আর ফেরত পাওয়া যাবে কি কোটি কোটি টাকার সেই প্রাকৃতিক সম্পদ?


Super Admin

PNN

প্লিজ লগইন পোস্টে মন্তব্য করুন!

আপনিও পছন্দ করতে পারেন