- ২০ অক্টোবর, ২০২৫
আন্তর্জাতিক ডেস্ক । PNN:
পেরুতে নতুন করে রাজনৈতিক সংকট দেখা দিয়েছে জনপ্রিয় তরুণ র্যাপার ও আন্দোলনকারী এদুয়ার্দো রুইজের মৃত্যুর পর। পুলিশের গুলিতে নিহত হওয়ার অভিযোগ ঘিরে দেশজুড়ে সহিংস বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে, যার নেতৃত্বে রয়েছে জেনারেশন জেডের তরুণ সমাজ। তবে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হলেও প্রেসিডেন্ট হোসে জেরি পদত্যাগে অনড় অবস্থান নিয়েছেন।
বৃহস্পতিবার (১৭ অক্টোবর) রাতে সরকার ঘোষণা করেছে, রাজধানী লিমায় শিগগিরই জরুরি অবস্থা জারি করা হবে। এর আগে বুধবারের ব্যাপক বিক্ষোভে ৩২ বছর বয়সী র্যাপার রুইজ গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন। ঘটনায় পেরুর প্রসিকিউটর অফিস আনুষ্ঠানিক তদন্ত শুরু করেছে।
পেরুর পুলিশ প্রধান জেনারেল অস্কার আরিওলা জানান, পুলিশের সদস্য লুইস মাগালানেসই রুইজের বুকে গুলি চালিয়েছিলেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। ঘটনাটির পর মাগালানেসকে গ্রেপ্তার করে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে। তবে বিক্ষুব্ধ জনতার হাতে মারধরের শিকার হয়ে তিনি বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।
রুইজের মৃত্যু এই আন্দোলনে প্রথম প্রাণহানি ঘটাল। প্রায় এক মাস আগে তরুণদের জন্য ভালো কর্মসংস্থান, পেনশন ও ন্যায্য বেতনের দাবিতে শুরু হওয়া আন্দোলন এখন দুর্নীতি ও অপরাধবিরোধী জাতীয় আন্দোলনে রূপ নিয়েছে। গত সপ্তাহে প্রেসিডেন্ট দিনা বলুয়ার্তের অপসারণের পর থেকেই বিক্ষোভ আরও বিস্তৃত হয়।
বুধবার দেশজুড়ে হাজারো মানুষ বিক্ষোভে অংশ নেন। রাজধানী লিমায় কংগ্রেস ভবনের সামনে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ান শত শত বিক্ষোভকারী। তাঁরা সদ্য নিযুক্ত প্রেসিডেন্ট হোসে জেরির পদত্যাগ দাবি করেন।
প্রেসিডেন্ট জেরি এক বিবৃতিতে বলেন, “দেশের স্থিতিশীলতা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করা আমার সাংবিধানিক দায়িত্ব। সেটিই আমি পালন করছি।”
তিনি পার্লামেন্ট সফরে গিয়ে অপরাধ দমনে বিশেষ ক্ষমতা প্রদানের আবেদন জানান। রুইজের মৃত্যুর ঘটনায় জেরি এক্সে (টুইটার) প্রকাশিত বার্তায় দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, এ বিষয়ে “নিরপেক্ষ ও বস্তুনিষ্ঠ তদন্ত” হবে। একইসঙ্গে তিনি অভিযোগ করেন, “শান্তিপূর্ণ মিছিলে কিছু দুষ্কৃতকারী অনুপ্রবেশ করে সহিংসতা ছড়িয়েছে।”
“আইনের সর্বোচ্চ কঠোরতা তাঁদের ওপর প্রয়োগ করা হবে,” জেরির মন্তব্য।
আল জাজিরার লিমা প্রতিনিধি মারিয়ানা সানচেজ বলেন, “রুইজের মৃত্যু দেশটির চলমান রাজনৈতিক সংকটে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। এতে আরও ক্ষুব্ধ হয়েছেন সাধারণ পেরুবাসী, যারা দুর্নীতি, বেকারত্ব ও নিরাপত্তাহীনতায় ক্লান্ত।”
রুইজের এক সহকর্মী ও আন্দোলনকর্মী মিলাগ্রোস সামিলান বলেন, “সে শুধু বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটাচ্ছিল। দুর্ভাগ্যবশত, পুলিশের গুলি তার বুকে লাগে। আমরা রুইজের জন্য ন্যায়বিচার চাই।”
প্রসিকিউটর অফিস জানিয়েছে, নিহত রুইজের মরদেহ হাসপাতাল থেকে সরিয়ে নিয়ে ফরেনসিক পরীক্ষা ও ঘটনাস্থল থেকে অডিওভিজ্যুয়াল এবং বেলিস্টিক প্রমাণ সংগ্রহ করা হচ্ছে। কর্তৃপক্ষ এ ঘটনাকে “গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রেক্ষাপটে সংঘটিত অপরাধ” হিসেবে বিবেচনা করছে।
নতুন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ভিসেন্তে তিবুরসিও জানান, বুধবারের সংঘর্ষে ৮৯ জন পুলিশ সদস্য ও ২২ জন সাধারণ মানুষ আহত হয়েছেন। এ ঘটনায় ১১ জনকে আটক করা হয়েছে।
পেরু গত এক দশকে সাতজন প্রেসিডেন্টের হাতবদল দেখেছে। দুর্নীতি, মাদকচক্র ও রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে দিয়ে দেশটি ক্রমেই অনিশ্চিত পথে এগোচ্ছে। রুইজের মৃত্যু ও তরুণ প্রজন্মের ক্ষোভে এবার প্রেসিডেন্ট জেরির প্রশাসনও সেই অনিশ্চয়তার কেন্দ্রবিন্দুতে দাঁড়িয়েছে।
তথ্যসূত্রঃ আল জাজিরা