Tuesday, October 14, 2025

জাপানের তোয়োকে শহরে স্মার্টফোন ব্যবহারে সময়সীমা প্রস্তাব: দেশজুড়ে তীব্র বিতর্ক


ছবিঃ সংগৃহীত

জাপানের আইচি প্রিফেকচারের তোয়োকে (Toyoake) শহর সম্প্রতি একটি অভিনব উদ্যোগের প্রস্তাব করেছে। প্রায় ৬৯ হাজার বাসিন্দার জন্য প্রতিদিন সর্বোচ্চ দুই ঘণ্টার বেশি স্মার্টফোন ব্যবহার না করার সুপারিশ করেছে নগর কর্তৃপক্ষ। দেশটিতে এ ধরনের প্রস্তাব এই প্রথম, যা ইতোমধ্যেই জাতীয় পর্যায়ে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

তোয়োকে পৌর কর্তৃপক্ষ চলতি সপ্তাহে খসড়া প্রস্তাব স্থানীয় আইনসভায় উত্থাপন করেছে। এটি অক্টোবর মাসে পাস হলে আনুষ্ঠানিকভাবে কার্যকর হবে। তবে শহরের মেয়র মাসাফুমি কোকি (Masafumi Koki) জোর দিয়ে বলেছেন, এটি কোনো বাধ্যতামূলক আইন নয়; বরং স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রা গড়ে তুলতে একটি সচেতনতামূলক পদক্ষেপ।

তিনি বলেন “দুই ঘণ্টার সীমা কেবলমাত্র একটি দিকনির্দেশনা। এর মাধ্যমে আমরা নাগরিকদের অধিকার খর্ব করছি না, বরং প্রত্যেক পরিবারকে স্মার্টফোন ব্যবহারের সময় নিয়ে ভাবতে ও আলোচনা করতে উৎসাহিত করতে চাই।”

প্রস্তাব অনুযায়ী, শুধুমাত্র বিনোদনমূলক ব্যবহার—যেমন অকারণে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সময় কাটানো বা উদ্দেশ্যহীন ভিডিও দেখা—এই সীমার মধ্যে আসবে। তবে রান্নার সময় ভিডিও রেসিপি দেখা, শরীরচর্চার সময় নির্দেশনা নেওয়া, অনলাইন শিক্ষা কিংবা ই-স্পোর্টস প্রতিযোগিতার প্রস্তুতির মতো কার্যক্রম এতে অন্তর্ভুক্ত হবে না।

মেয়র কোকি স্বীকার করেছেন যে স্মার্টফোন আধুনিক জীবনের অপরিহার্য উপকরণ। তবে অতিরিক্ত ব্যবহার শিশু-কিশোর ও প্রাপ্তবয়স্ক উভয়ের জীবনযাত্রায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। তিনি জানান, শহরের কিছু শিক্ষার্থী মোবাইল ফোন ছাড়া বাড়ি থেকে বের হতে অস্বীকার করছে এবং স্কুলে যেতে অনীহা প্রকাশ করছে। একইসঙ্গে অনেক প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিক রাত জেগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করছেন, যার ফলে ঘুম ও পরিবারের সঙ্গে সময় কাটানো ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

এই প্রস্তাব নিয়ে নাগরিকদের মধ্যে তীব্র মতভেদ তৈরি হয়েছে। স্থানীয় সংবাদমাধ্যম মাইনিচি (Mainichi)-এর তথ্যানুযায়ী, প্রস্তাব প্রকাশের পরপরই পৌরসভায় ১২০টির বেশি ফোনকল ও ইমেইল এসেছে। এর মধ্যে প্রায় ৮০ শতাংশ নাগরিক প্রস্তাবের বিরোধিতা করেছেন।

বিরোধীদের মতে, মাত্র দুই ঘণ্টায় একটি সিনেমা দেখা কিংবা ই-বুক পড়া সম্ভব নয়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও অনেক ব্যবহারকারী ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। এক টুইটার ব্যবহারকারী লিখেছেন, “মাত্র দুই ঘণ্টার মধ্যে তো একটি পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রও শেষ করা যায় না।”

তবে সমর্থকরা মনে করছেন, এ পদক্ষেপ অন্তত পরিবারগুলিকে আলোচনার সুযোগ দেবে এবং বিশেষ করে তরুণদের প্রযুক্তি আসক্তি থেকে কিছুটা দূরে রাখবে।

প্রস্তাবে উল্লেখ করা হয়েছে—

  • প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা রাত ৯টার পর আর স্মার্টফোন ব্যবহার করবে না।

  • উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষার্থী ও প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য এই সময়সীমা রাত ১০টা পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়েছে।

তোয়োকে এর এই প্রস্তাব দেশজুড়ে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যদিও এটি বাধ্যতামূলক আইন নয়, তবুও এটি জাপানে প্রযুক্তি আসক্তি মোকাবিলার একটি নতুন মডেল তৈরি করতে পারে।

Super Admin

PNN

প্লিজ লগইন পোস্টে মন্তব্য করুন!

আপনিও পছন্দ করতে পারেন