- ১৩ অক্টোবর, ২০২৫
আফগানিস্তানে তালেবান সরকারকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি প্রদানকারী প্রথম দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে রাশিয়া। তালেবানের কাবুল দখলের প্রায় চার বছর পর এই সিদ্ধান্ত তাদের জন্য একটি বড় মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। তবে, এই পদক্ষেপের বিরুদ্ধে আফগান বিরোধী ব্যক্তিবর্গ তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
তালেবানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকী আশা প্রকাশ করেছেন যে, রাশিয়ার এই স্বীকৃতি অন্যান্য দেশগুলোর জন্য একটি উদাহরণ হিসেবে কাজ করবে, যারা শরিয়া আইনের কঠোর প্রয়োগ এবং নারী ও মেয়েদের ওপর গুরুতর বিধিনিষেধ আরোপের কারণে তালেবান সরকারকে স্বীকৃতি দিতে ইতস্তত করছিল।
তবে, আফগানিস্তানের প্রাক্তন রাজনীতিবিদ ফজিয়া কুফি রাশিয়ার এই পদক্ষেপের তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, "যেকোনো দেশের পক্ষ থেকে তালেবানের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার যেকোনো পদক্ষেপ শান্তি আনবে না, বরং এটি দায়মুক্তির বৈধতা দেবে।" কুফি আরও সতর্ক করে বলেন যে, "এই ধরনের পদক্ষেপ শুধু আফগানিস্তানের জনগণের জন্যই নয়, বৈশ্বিক নিরাপত্তার জন্যও বিপদ ডেকে আনবে।"
এদিকে, আফগান উইমেনস পলিটিক্যাল পার্টিসিপেশন নেটওয়ার্ক এই পদক্ষেপকে "একটি স্বৈরাচারী, নারী-বিরোধী এবং মৌলিক নাগরিক অধিকার সক্রিয়ভাবে ধ্বংসকারী শাসনব্যবস্থাকে বৈধতা দেওয়া" বলে অভিহিত করেছে।
তালেবান সরকার এর আগে দাবি করেছিল যে, তারা আফগান সংস্কৃতি ও ইসলামিক আইন অনুসারে নারীর অধিকারকে সম্মান করে। কিন্তু ২০২১ সাল থেকে ১২ বছরের বেশি বয়সী মেয়েদের শিক্ষা গ্রহণ থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে এবং নারীদের অনেক কাজ থেকে বিরত রাখা হয়েছে। এছাড়া, পুরুষ সঙ্গী ছাড়া নারীদের ভ্রমণের দূরত্ব এবং জনসমক্ষে তাদের কণ্ঠস্বর তোলার ক্ষেত্রেও বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে।
রাশিয়ার এই স্বীকৃতিকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মুত্তাকী "ইতিবাচক সম্পর্ক, পারস্পরিক শ্রদ্ধা এবং গঠনমূলক সম্পৃক্ততার এক নতুন পর্যায়" হিসেবে বর্ণনা করেছেন এবং এই সিদ্ধান্তকে "সাহসী" বলে আখ্যায়িত করেছেন।
রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, তারা "শক্তি, পরিবহন, কৃষি এবং অবকাঠামোতে" "বাণিজ্যিক ও অর্থনৈতিক" সহযোগিতার সম্ভাবনা দেখছে এবং সন্ত্রাসবাদ ও মাদক পাচারের হুমকির বিরুদ্ধে কাবুলকে সহায়তা অব্যাহত রাখবে।
প্রসঙ্গত, ২০২১ সালে মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের পর যখন তালেবান আফগানিস্তান জুড়ে ক্ষমতা দখল করে, তখন খুব কম দেশই তাদের দূতাবাস বন্ধ করেনি, রাশিয়া তাদের মধ্যে অন্যতম। ২০২২ সালে রাশিয়া তালেবানের সাথে একটি আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক চুক্তি স্বাক্ষরকারী প্রথম দেশ ছিল, যেখানে তারা আফগানিস্তানে তেল, গ্যাস এবং গম সরবরাহে সম্মত হয়েছিল। চলতি বছরের এপ্রিলে রাশিয়া তালেবানকে তাদের সন্ত্রাসী সংগঠনের তালিকা থেকে বাদ দিয়েছে।
গত বছরের জুলাই মাসে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনও তালেবানকে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে "সহযোগী" হিসেবে উল্লেখ করেছিলেন। এমনকি ২০১৮ সালের প্রথম দিকেও তালেবানের প্রতিনিধিরা মস্কো সফর করে আলোচনা করেছিলেন।
তবে, এই দুটি দেশের একটি জটিল ইতিহাস রয়েছে। সোভিয়েত ইউনিয়ন – যার মধ্যে রাশিয়াও অন্তর্ভুক্ত ছিল – ১৯৭৯ সালে আফগানিস্তান আক্রমণ করে এবং একটি নয় বছরের যুদ্ধ করে, যেখানে তাদের ১৫,০০০ সেনা নিহত হয়। কাবুলে সোভিয়েত-সমর্থিত সরকার প্রতিষ্ঠার তাদের সিদ্ধান্ত সোভিয়েতদের আন্তর্জাতিকভাবে একঘরে করে তুলেছিল এবং অবশেষে ১৯৮৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে তাদের প্রত্যাহারের দিকে পরিচালিত করেছিল।
আফগান উইমেনস পলিটিক্যাল পার্টিসিপেশন নেটওয়ার্ক তাদের বিবৃতিতে উল্লেখ করেছে যে, তারা "সোভিয়েত আগ্রাসনের সময় আফগানিস্তানের ধ্বংসযজ্ঞে রাশিয়ার ভূমিকা" ভুলে যায়নি। তারা বলেছে, "আজ, তাদের রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ এবং তালেবানকে সরাসরি সমর্থন একই ধ্বংসাত্মক কৌশলের ধারাবাহিকতা, যা এখন কূটনীতির আবরণে চলছে।"