- ১৩ অক্টোবর, ২০২৫
PNN আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে আগামী রোববার যখন ভারত ও পাকিস্তানের খেলোয়াড়রা মাঠে নামবেন, তখন শুধুমাত্র দুই পয়েন্টের লড়াই নয় বরং সীমান্ত সংঘাত-পরবর্তী উত্তেজনা, আবেগ ও রাজনৈতিক পরিস্থিতিও ম্যাচটিকে ঘিরে থাকবে।
গত মে মাসে চার দিনব্যাপী সীমান্ত সংঘাতের পর আন্তর্জাতিক মধ্যস্থতায় যুদ্ধ এড়ানো সম্ভব হলেও দুই দেশের সম্পর্ক এখনো তিক্ততায় আচ্ছন্ন। এই প্রেক্ষাপটে ভারত-পাকিস্তান দ্বৈরথকে ঘিরে উত্তেজনা নতুন মাত্রা পেয়েছে।
ভারতের ক্রীড়া সাংবাদিক কুদিপ লাল মনে করেন, এই সময়ে ম্যাচ আয়োজন সঠিক সিদ্ধান্ত নয়। তার ভাষায়, “ভারতের অনেকেই মনে করছেন, যখন কূটনৈতিক সম্পর্ক কার্যত স্থগিত, তখন ক্রিকেট ম্যাচ আয়োজন আসলে বাণিজ্যিক স্বার্থ পূরণের কৌশল।” তিনি প্রশ্ন তোলেন, যদি ভিসা বন্ধ থাকে, কূটনৈতিক কার্যক্রম স্থগিত হয় এবং সীমান্তে উত্তেজনা জারি থাকে, তবে কেন ক্রিকেটারদের খেলতে বাধ্য করা হচ্ছে?
অতীতে ভারত-পাকিস্তান ম্যাচে মাঠের ভেতরে ও বাইরে এক ধরনের সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশ দেখা গেছে। যেমন ২০২৩ সালের এশিয়া কাপে কোহলির ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি ভক্তদের নাচ-গান ও দুই দলের খেলোয়াড়দের সৌহার্দ্যপূর্ণ আচরণ আলোচনায় ছিল। পাকিস্তানের শাহীন আফ্রিদি ভারতীয় পেসার জসপ্রিত বুমরাহকে নবজাতক সন্তানের জন্য উপহার দেন, আর কোহলি-শাদাব খানের "ব্রোম্যান্স" সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছিল।
তবে ক্রিকেট বিশেষজ্ঞদের মতে, এবার এমন দৃশ্যের সম্ভাবনা খুবই কম। সাবেক আইসিসি কর্মকর্তা সামি উল হাসান বলেন, “এবারের রাজনৈতিক আবহে ছোট্ট কোনো বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণও উল্টো ব্যাখ্যা পেতে পারে এবং তা জনগণের ক্ষোভ উসকে দিতে পারে।”
বিশ্লেষকদের মতে, খেলোয়াড়রা রাজনৈতিক প্রশ্ন এড়ানোর চেষ্টা করবেন। তবে বাস্তবে খেলাধুলা ও রাজনীতিকে পুরোপুরি আলাদা করা সম্ভব নয়। পাকিস্তানি ভক্ত আসাদ খানের মতে, ক্রিকেটকে রাজনৈতিক এজেন্ডা চাপানোর ক্ষেত্র বানানো ঠিক নয়। তার ভাষায়, “খেলাকে উপভোগ করতে দিন, রাজনৈতিক স্লোগান বা ধর্মীয় উস্কানি দিয়ে পরিবেশ নষ্ট করবেন না।”
তবে কুদিপ লালের মতে, সীমান্তে যা ঘটেছে, তার ছায়া খেলোয়াড়দের মানসিকতায় প্রভাব ফেলবে। তিনি বলেন, “মাঠে নামলেই খেলোয়াড়রা সব ভুলে যাবে—এটা আশা করা অবাস্তব।”
দীর্ঘদিন দ্বিপাক্ষিক সিরিজ বন্ধ থাকায় ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ এখন শুধু বহুপাক্ষিক টুর্নামেন্টেই সীমাবদ্ধ। এশিয়া কাপে রোববারের ম্যাচ তাই ভক্তদের জন্য বিরল সুযোগ। তবে খেলা যতই আনন্দময় হোক, বাস্তবতা হলো—সীমান্তের উত্তাপ, রাজনৈতিক অচলাবস্থা ও জনগণের আবেগ এই দ্বৈরথকে সাধারণ কোনো ম্যাচ হতে দিচ্ছে না।