- ১৩ অক্টোবর, ২০২৫
খুলনা, ২০ জুলাই ২০২৫:
ছাত্ররাজনীতি নিয়ে সংঘর্ষের পাঁচ মাস পেরিয়ে গেলেও খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) স্থবিরতা এখনো কাটেনি। বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য না থাকায় সংকটের সমাধানে প্রশাসনিক উদ্যোগও কার্যকরভাবে এগোচ্ছে না। ফলে প্রায় সাড়ে সাত হাজার শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবনে নেমে এসেছে অনিশ্চয়তা ও সেশনজটের আশঙ্কা।
এই পরিস্থিতির মধ্যেই দীর্ঘ পাঁচ মাস পর আজ রবিবার (২০ জুলাই) শ্রেণিকক্ষে ফিরেছেন ২১-২২ ব্যাচের শিক্ষার্থীরা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শিক্ষার্থীদের একটি প্ল্যাটফর্ম 'রক্তাক্ত কুয়েট'–এর আহ্বানে সাড়া দিয়ে শিক্ষার্থীরা ক্লাসে ফিরলেও শিক্ষকরা এখনও অনুপস্থিত।
'রক্তাক্ত কুয়েট' নামের ফেসবুক পেজে শনিবার (১৯ জুলাই) এক পোস্টে বলা হয়, “সকল নেতিবাচকতা ভুলে, ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে আগামীকাল সবাই শ্রেণিকক্ষে ফিরে যাব। শিক্ষকেরা আমাদের কল্যাণ চেয়েছেন, মুখ ফিরিয়ে নিতে পারেন না। তাই আমরা ক্লাসে ফিরছি।”
আজ শ্রেণিকক্ষে উপস্থিত হয়ে শিক্ষার্থীরা তাদের বিভাগের শিক্ষকদের সঙ্গে ক্লাস শুরু নিয়ে আলোচনা করেন। শিক্ষার্থীদের ভাষ্যমতে, শিক্ষকরা ক্লাস চালুর বিষয়ে আন্তরিকতা প্রকাশ করেছেন এবং উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি হলে ক্লাস ও পরীক্ষা শুরুর আশ্বাস দিয়েছেন।
এদিকে, ক্লাস চালুর দাবিতে অভিভাবকগণও সক্রিয় হয়েছেন। ‘গার্ডিয়ান ফোরাম’ নামের একটি সংগঠন গত বৃহস্পতিবার (১৭ জুলাই) বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যান বরাবর স্মারকলিপি জমা দিয়েছে। আজ কুয়েট প্রশাসনিক ভবনের সামনে অভিভাবকদের মানববন্ধন কর্মসূচিও রয়েছে।
২১ ব্যাচের শিক্ষার্থী আশির মুনতাকিম ফেরদৌস বলেন, “আমরা বাধ্য হয়েই ক্লাসে এসেছি। পাঁচ মাস চলে গেছে। সাবেক উপাচার্যের সময় সিদ্ধান্ত হয়েছিল ৪ মে থেকে ক্লাস শুরু হবে। এরপর আর কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি ক্লাস বন্ধ থাকবে বলে। স্যারদের বলছি—আমরা আসছি, আপনারা সদয় হয়ে ক্লাস নিন।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রকল্যাণ পরিচালক অধ্যাপক আবদুল্লাহ ইলিয়াস আক্তার বলেন, “উপাচার্য ছাড়া বড় কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব নয়। ক্লাস নেওয়া যায়, কিন্তু তাতে কোনো বিশৃঙ্খলা হলে তার দায় কে নেবে?”
উল্লেখ্য, গত ১৮ ফেব্রুয়ারি ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের দাবিকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে শতাধিক ব্যক্তি আহত হন। পরবর্তীতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে উপাচার্য ও উপ-উপাচার্যকে অপসারণ করা হয়। এরপর ১ মে চুয়েটের অধ্যাপক হজরত আলীকে কুয়েটের অন্তর্বর্তী উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হলেও শিক্ষক মহলের বিরোধিতায় ২২ মে তিনি পদত্যাগ করেন।
পরবর্তী সময়ে, ১০ জুন উপাচার্য নিয়োগের জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হলেও এখনো পর্যন্ত কোনো নিয়োগ সম্পন্ন হয়নি। পরিস্থিতি এতটাই সংকটাপন্ন যে, কুয়েটের শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ইউজিসির পরিচালক মোহাম্মদ জামিনুর রহমানকে সাময়িক আর্থিক ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে, যা ১৫ জুলাই পর্যন্ত কার্যকর ছিল।
বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রশাসনিক শূন্যতা, শিক্ষক-শিক্ষার্থী বিভাজন ও শ্রেণিকক্ষের অচলাবস্থা মিলে দেশের একটি প্রধান প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় এখন অচলাবস্থায়। শিক্ষার্থীরা ফিরে আসলেও শিক্ষকরা এখনও দ্বিধায়—সমাধানের জন্য প্রয়োজন জরুরি প্রশাসনিক উদ্যোগ।
তথ্যসূত্রঃ দ্য ডেইলি ক্যাম্পাস