- ১৩ অক্টোবর, ২০২৫
মার্কিন বিমান বাহিনী স্পেসএক্স জড়িত একটি রকেট কার্গো পরিবহন প্রকল্প সাময়িকভাবে স্থগিত করেছে, কারণ এই উদ্যোগ প্রশান্ত মহাসাগরের একটি সংরক্ষিত সামুদ্রিক পাখির অভয়ারণ্যে মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এই প্রকল্পের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগগুলো অনেকটা আগের একটি ঘটনার মতো, যেখানে স্পেসএক্সের একটি উৎক্ষেপণ পাখির বাসা ক্ষতিগ্রস্ত করেছিল। তখন ইলন মাস্ক ঠাট্টা করে বলেছিলেন, “এই ভয়াবহ অপরাধের জন্য আমি এক সপ্তাহ ডিমের অমলেট খাব না।”
‘স্পেস ডট কম’ জানায়, প্রকল্পটি ছিল মার্কিন সামরিক বাহিনীর একটি পরীক্ষামূলক কর্মসূচি, যাতে স্পেসএক্সের মতো বেসরকারি রকেট ব্যবহারের মাধ্যমে যেকোনো স্থানে মাত্র ৯০ মিনিটে ১০০ টন পর্যন্ত সামরিক মালামাল পাঠানোর ধারণা যাচাই করা হচ্ছিল। এই ‘রকেট কার্গো’ প্রকল্পটি তত্ত্বাবধান করছিল বিমান বাহিনীর গবেষণা ল্যাবরেটরি।
পরীক্ষার জন্য বেছে নেওয়া হয়েছিল জনস্টন অ্যাটল নামের একটি নির্জন দ্বীপ, যা হাওয়াই থেকে প্রায় ১৩০০ কিলোমিটার দূরে। দ্বীপটি Pacific Remote Islands Marine National Monument-এর অংশ এবং এটি যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল বন্যপ্রাণী আশ্রয়স্থল হিসেবে ঘোষিত।
বন্যপ্রাণী গবেষক ও সংরক্ষণবাদীরা সতর্ক করেন, এই দ্বীপে রকেট অবতরণ ১৪টি বিরল সামুদ্রিক পাখির প্রজননস্থল ধ্বংস করতে পারে। এর মধ্যে রয়েছে লাল-লেজওয়ালা ট্রপিকবার্ড, হোয়াইট টার্ন ও বুবি প্রজাতি। দ্বীপটি এসব পাখির জন্য নিরাপদ আশ্রয় হিসেবে বিরল এবং ব্যাঘাত ঘটলে তা তাদের প্রজনন চক্রকে ভয়াবহভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।
এই উদ্বেগের পরিপ্রেক্ষিতে রয়টার্স একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করলে বিষয়টি আরও নজর কাড়ে। এরপরই বিমান বাহিনী পরীক্ষা কার্যক্রম স্থগিতের সিদ্ধান্ত নেয়।
যদিও স্পেসএক্সের নাম প্রকল্পে আনুষ্ঠানিকভাবে উল্লেখ করা হয়নি, তবে পরীক্ষার জন্য বিবেচিত বাণিজ্যিক রকেটগুলোর মধ্যে তাদের প্রযুক্তি ছিল অন্যতম। অতীতেও স্পেসএক্সের উৎক্ষেপণ প্রকৃতি ও বন্যপ্রাণের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলায় পরিবেশবাদীদের সমালোচনার মুখে পড়েছে।
২০২৩ সালের এপ্রিল মাসে, টেক্সাসের বোকার চিকায় স্পেসএক্সের একটি স্টারশিপ উৎক্ষেপণে একটি বিস্ফোরণে বিপন্ন পাইপিং প্লোভার পাখির বাসা ও ডিম ধ্বংস হয়। এতে পরিবেশবাদী সংগঠন ও নীতিনির্ধারকদের কড়া সমালোচনার মুখে পড়ে কোম্পানিটি। ঘটনাটি নিউ ইয়র্ক টাইমস-এর প্রথম পাতায়ও উঠে আসে।
এই ঘটনায় প্রতিক্রিয়া জানিয়ে ইলন মাস্ক X-এ লেখেন, “এই জঘন্য অপরাধের প্রতিকারে আমি এক সপ্তাহ ডিমের অমলেট খাব না।”
এই রকেট কার্গো প্রকল্প মূলত যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনীর জন্য একটি নতুন লজিস্টিক প্ল্যাটফর্ম হিসেবে বিবেচিত ছিল, যার মাধ্যমে প্রচলিত পরিবহন পথ এড়িয়ে দ্রুত ও ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় সহজেই কার্গো পাঠানো সম্ভব হতো।
তথ্যসুত্রঃ এন ডি টি ভি