- ০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫
PNN নিউজ ডেস্ক | ঢাকা:
ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় সোমবার একযোগে ককটেল বিস্ফোরণ ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় রাজধানীজুড়ে উদ্বেগ ও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। সারাদিনে অন্তত ১১টি স্থানে ককটেল হামলার ঘটনা ঘটেছে এবং তিনটি বাসে আগুন দেওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে। কোনো বড় ধরনের হতাহতের খবর না থাকলেও পুলিশ ও র্যাব তৎপরতা বাড়িয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখছে।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে জানানো হয়, ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) ও র্যাব যৌথভাবে তদন্ত শুরু করেছে। বিশেষভাবে ধর্মীয় সম্প্রীতি ক্ষুন্ন করার চেষ্টা প্রতিহত করার জন্য কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ১৩ নভেম্বর পর্যন্ত রাজধানীর সব থানাকে টহল, নজরদারি ও প্রতিরোধ ব্যবস্থা জোরদার করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। উল্লেখ্য, ওইদিন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল থেকে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলার রায়ের দিন নির্ধারণ করা হয়েছে।
ঘটনার ধারাবাহিকতায় ভোররাতে প্রথম বিস্ফোরণ ঘটে গ্রামীণ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের সামনে। মিরপুর মডেল থানার ওসি জানান, মোটরসাইকেলে এসে দুই ব্যক্তি ভবনের সামনে ককটেল নিক্ষেপ করে পালিয়ে যায়। একই সময়ে মোহাম্মদপুরের মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টার মালিকানাধীন একটি প্রতিষ্ঠানের সামনেরেও ককটেল হামলার ঘটনা ঘটে। ধানমন্ডির মাইডাস সেন্টার ও ইবনে সিনা হাসপাতালে মোট চারটি ককটেল নিক্ষেপের ঘটনা রেকর্ড করা হয়েছে।
সন্ধ্যায় মৌচাক, আগারগাঁওয়ের বাংলাদেশ বেতার, খিলগাঁও ফ্লাইওভার এলাকা ও মিরপুর শাহ আলী মার্কেট সংলগ্ন এলাকায় বিস্ফোরণ ঘটে। রাত ১০টার দিকে ফ্লাইওভার থেকে আরেকটি ককটেল নিক্ষেপ হয়। দিনের শেষ বিস্ফোরণটি রাত ১১টা ১০ মিনিটে বাংলামোটরে এনসিপি কার্যালয়ের সামনে ঘটে; এতে এক পথচারী সামান্য আহত হন। ঘটনাস্থল থেকে একটি অবিস্ফোরিত বোমা উদ্ধার করা হয়েছে। পুলিশের অভিযানে মোট পাঁচজনকে আটক করা হয়েছে।
পুলিশি সূত্রে জানা গেছে, আগের দিন কাকরাইলের সেন্ট মেরি’স ক্যাথেড্রালে ও মোহাম্মদপুরের সেন্ট জোসেফ স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষকদের বাসভবনের সামনে ককটেল হামলার ঘটনা ঘটে। এছাড়া ভোরে শাহজাদপুর ও মেরুলবাড্ডায় দুটি বাসে আগুন লাগানো হয় এবং সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে ধানমন্ডির ল্যাবএইড হাসপাতালের সামনে আরেকটি বাসে আগুন দেয়া হয়।
ডিবি প্রধান শফিকুল ইসলাম জানিয়েছেন, হামলায় জড়িতদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তারের জন্য গোয়েন্দা তৎপরতা বাড়ানো হয়েছে। আওয়ামী লীগের কিছু কর্মী প্রকাশ্যে বলে ফেলেছেন তারা নেতাদের জন্য যেকোনো কিছু করতে প্রস্তুত। এই প্রেক্ষিতে সোমবার পৃথক অভিযান চালিয়ে আড়াই ডজনের বেশি ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
সরকার ধর্মীয় সম্প্রীতি রক্ষায় অটল থাকার বার্তা দিয়েছে। ঢাকার গির্জা, মন্দির, মসজিদসহ সব ধর্মীয় উপাসনালয়ে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক সিনিয়র কর্মকর্তা বলেন, “দেশকে অস্থিতিশীল করার প্রতিটি চেষ্টা দ্রুত ও কঠোরভাবে প্রতিহত করা হবে; জননিরাপত্তা, জাতীয় ঐক্য ও গণতান্ত্রিক রূপান্তরের সুরক্ষা আমাদের অগ্রাধিকার।”
রাজধানীতে সর্বোচ্চ সতর্কতা জারি করা হয়েছে, গুরুত্বপূর্ণ সরকারি ও জনগুরুত্বপূর্ণ স্থানে টহল, আলোকসজ্জা, সিসিটিভি নজরদারি এবং জরুরি প্রতিরোধ ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। রেলওয়ে, মেট্রো ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ পরিকাঠামোতেও বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।