- ০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫
আন্তর্জাতিক ডেস্ক |PNN
মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতিতে এক ঐতিহাসিক পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিয়েছে সিরিয়া। দীর্ঘ এক দশক পর দেশটি যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক জোটে যোগ দিচ্ছে, যার লক্ষ্য ইসলামিক স্টেট (আইএস) সন্ত্রাসী গোষ্ঠীকে সম্পূর্ণ নির্মূল করা।
হোয়াইট হাউসে সোমবার অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট আহমদ আল-শারা এই সিদ্ধান্তের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেন। যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে এটাই প্রথমবার, কোনো সিরীয় নেতা হোয়াইট হাউস সফর করলেন।
ফক্স নিউজের স্পেশাল রিপোর্ট-এ দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে আল-শারা বলেন, “এটি সিরিয়ার জন্য এক নতুন যুগের সূচনা। আমরা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সহযোগিতার মাধ্যমে ভবিষ্যৎ গড়তে চাই।”
ট্রাম্প বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের বলেন, “আমরা চাই সিরিয়া আবারও একটি সফল দেশ হিসেবে গড়ে উঠুক। আমি বিশ্বাস করি, এই নেতা তা করতে পারবেন।”
বৈঠকের পর হোয়াইট হাউসের এক শীর্ষ কর্মকর্তা জানান, যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি, স্টেট ও কমার্স ডিপার্টমেন্ট একযোগে সিরিয়ার ওপর আরোপিত বেশ কিছু অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার পদক্ষেপ নিচ্ছে। এর অংশ হিসেবে ২০১৯ সালে প্রণীত সিজার অ্যাক্ট সাময়িকভাবে ১৮০ দিনের জন্য স্থগিত করা হচ্ছে।
এছাড়া, যুক্তরাষ্ট্র সিরিয়ার দূতাবাস পুনরায় ওয়াশিংটনে খোলার অনুমতি দেবে—যা ২০১২ সাল থেকে বন্ধ ছিল।
আহমদ আল-শারার রাজনৈতিক উত্থানকে অনেকেই “অবিশ্বাস্য পুনর্জন্ম” হিসেবে দেখছেন। একসময় আল-কায়েদা সংশ্লিষ্ট সংগঠনের নেতা ছিলেন তিনি, যাকে যুক্তরাষ্ট্র সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে ‘বিশ্ব সন্ত্রাসী’ হিসেবে ঘোষণা করেছিল। মাত্র এক সপ্তাহ আগেই যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি বিভাগ তাঁর নাম সেই তালিকা থেকে সরিয়ে নেয়।
বর্তমানে অন্তর্বর্তীকালীন সিরীয় প্রেসিডেন্ট হিসেবে তিনি দেশের পুনর্গঠন ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
ট্রাম্প বলেন, “তার অতীত কঠিন ছিল, কিন্তু আমি মনে করি সেই অভিজ্ঞতাই তাকে এখন নেতৃত্ব দেওয়ার যোগ্যতা দিয়েছে।”
সিরিয়া যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন জোটের ৯০তম সদস্য দেশ হিসেবে যোগ দিচ্ছে। এই জোটের মূল লক্ষ্য আইএসের অবশিষ্ট নেটওয়ার্ক ধ্বংস করা এবং বিদেশি জঙ্গিদের প্রবাহ ঠেকানো।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রশাসন জানিয়েছে, সিরিয়ার নতুন সরকার ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার পদক্ষেপ এবং বিদেশি সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণে নেওয়া পদক্ষেপের মাধ্যমে “স্থিতিশীলতা ও শান্তির পথে” অগ্রসর হচ্ছে।
ওয়াশিংটনের কূটনৈতিক পর্যবেক্ষকরা বলছেন, এই বৈঠক মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন কৌশলের ইঙ্গিত দেয়, যেখানে তারা সংঘাত নয়, বরং পুনর্গঠন ও অংশীদারিত্বের পথে হাঁটছে।