- ০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫
আন্তর্জাতিক ডেস্ক |PNN
টানা পাঁচ সপ্তাহ ধরে চলা যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসের দীর্ঘতম সরকার অচলাবস্থা (শাটডাউন) শেষ হওয়ার পথে। সোমবার রাতে সিনেট একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যয় বিল পাস করেছে, যা অনুমোদন পেলে আংশিকভাবে সরকারের কার্যক্রম পুনরায় চালু হবে এবং কয়েক লাখ সরকারি কর্মচারী তাদের বকেয়া বেতন ফিরে পাবেন।
সিনেটে ব্যয় বিলটি ৬০–৪০ ভোটে পাস হয়। বিলটিতে আগামী ৩০ জানুয়ারি পর্যন্ত সরকারের কার্যক্রম চালানোর জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এখন বিলটি প্রতিনিধি পরিষদে যাবে, এরপর প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের স্বাক্ষর পেলেই সরকার অচলাবস্থা আনুষ্ঠানিকভাবে শেষ হবে।
হাউস স্পিকার মাইক জনসন জানিয়েছেন, তিনি বুধবারের মধ্যেই ভোট সম্পন্ন করতে চান এবং আইনপ্রণেতাদের অবিলম্বে ওয়াশিংটনে ফিরে আসার আহ্বান জানিয়েছেন।
অচলাবস্থা শুরু হয়েছিল গত ১ অক্টোবর থেকে। বাজেট অনুমোদন না হওয়ায় খাদ্য সহায়তা, প্রতিরক্ষা, ভেটেরান, কৃষি এবং কংগ্রেসের অভ্যন্তরীণ কার্যক্রমের মতো গুরুত্বপূর্ণ খাতের অর্থায়ন বন্ধ ছিল। নতুন বিলটিতে এসব খাতের জন্য তিন বছরের বরাদ্দ অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
তবে স্বাস্থ্য বীমা সংক্রান্ত সবচেয়ে বিতর্কিত বিষয়টি—“অ্যাফোর্ডেবল কেয়ার অ্যাক্ট” বা ওবামাকেয়ার-এর আওতায় ২ কোটি ৪০ লাখ আমেরিকানের ভর্তুকি—এই চুক্তিতে সমাধান পায়নি। রিপাবলিকানরা শুধু প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, ডিসেম্বরের মধ্যে বিষয়টি নিয়ে আলাদা ভোট আয়োজন করবে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এটি আসলে এক ধরনের “স্টপগ্যাপ” চুক্তি, অর্থাৎ অচলাবস্থা সাময়িকভাবে স্থগিত হলেও জানুয়ারিতে নতুন করে সংকট দেখা দিতে পারে।
সিডনি বিশ্ববিদ্যালয়ের যুক্তরাষ্ট্র অধ্যয়ন কেন্দ্রের সহযোগী অধ্যাপক ডেভিড স্মিথ বলেন, “যদি জানুয়ারির মধ্যে স্বাস্থ্য বীমা ভর্তুকি নিয়ে ভোট না হয়, তাহলে পুনরায় শাটডাউনের আশঙ্কা রয়েছে।”
এই বিল পাসের পক্ষে ভোট দেওয়া আট সেনেটর—সাতজন ডেমোক্র্যাট ও একজন স্বতন্ত্র—দলীয় ক্ষোভের মুখে পড়েছেন। তারা হলেন: ডিক ডারবিন (ইলিনয়), অ্যাঙ্গাস কিং (মেইন), জন ফেটারম্যান (পেনসিলভানিয়া), ক্যাথরিন কর্টেজ মাস্টো ও জ্যাকি রোজেন (নেভাদা), ম্যাগি হাসান ও জিন শাহিন (নিউ হ্যাম্পশায়ার), এবং টিম কেইন (ভার্জিনিয়া)।
অনেক ডেমোক্র্যাট মনে করছেন, দলের সাম্প্রতিক নির্বাচনী সাফল্যের পর এমন ছাড় দেওয়া উচিত হয়নি। ইলিনয়ের গভর্নর ও ২০২৮ সালের সম্ভাব্য প্রেসিডেন্ট প্রার্থী জে বি প্রিটজকার এই চুক্তিকে আখ্যা দিয়েছেন “ফাঁকা প্রতিশ্রুতি” বলে।
অন্যদিকে ফেটারম্যান এনবিসি নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, “আমরা দল নয়, দেশকে অগ্রাধিকার দিতে চেয়েছি। দুই মিলিয়ন আমেরিকানের খাদ্য নিরাপত্তা ঝুঁকিতে ফেলে রাজনীতি করা কোনো দায়িত্বশীলতার পরিচয় নয়।”
শাটডাউনের কারণে খাদ্য সহায়তা, চিকিৎসা ও বিমান চলাচলে বড় ধরনের প্রভাব পড়েছে। বিমান নিয়ন্ত্রকদের অনুপস্থিতির কারণে গত সপ্তাহে ফেডারেল এভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন ১০ শতাংশ ফ্লাইট কমানোর ঘোষণা দেয়। অনেক সরকারি কর্মী বেতন ছাড়া কাজ চালিয়ে যেতে বাধ্য হন।
স্বাস্থ্যসেবা ভর্তুকি বন্ধ হলে ২০২৬ সাল নাগাদ ২ কোটি আমেরিকানের প্রিমিয়াম দ্বিগুণ হয়ে যেতে পারে বলে সতর্ক করেছে কাইজার ফ্যামিলি ফাউন্ডেশন। আর কংগ্রেশনাল বাজেট অফিস অনুমান করেছে, ২০৩৪ সালের মধ্যে আরও ১ কোটি ৫০ লাখ মানুষ স্বাস্থ্যবিমা হারাতে পারেন।
সিনেটের ফ্লোরে বক্তৃতায় স্বাধীন সেনেটর বার্নি স্যান্ডার্স বলেন, “আমাদের স্বাস্থ্যব্যবস্থা বিশ্বের সবচেয়ে ব্যয়বহুল এবং সবচেয়ে অমানবিক। এই বিল পাসের মাধ্যমে আমরা সেই ব্যর্থতাকে আরও গভীর করছি।”