- ০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫
আন্তর্জাতিক ডেস্ক |PNN
গাজার দক্ষিণাঞ্চলের খান ইউনুসের পূর্ব এলাকায় ইসরায়েলি বাহিনীর চালানো এক ড্রোন হামলায় অন্তত দুই ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে একজন শিশু। আল জাজিরার স্থানীয় সংবাদদাতারা জানিয়েছেন, হামলাটি সোমবার বিকেলে সংঘটিত হয় এবং ঘটনাস্থলেই হতাহতের ঘটনা ঘটে।
হামাস এই হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেছে, যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পরও ইসরায়েল প্রতিদিনই “নিয়মিত ও পরিকল্পিত লঙ্ঘন” চালিয়ে যাচ্ছে। সংগঠনটি দাবি করেছে, ১০ অক্টোবর যুদ্ধবিরতি শুরুর পর থেকে ইসরায়েলি হামলায় ২৭১ জন নিহত হয়েছেন—এর মধ্যে ৯০ শতাংশই সাধারণ নাগরিক। আহত হয়েছেন অন্তত ৬২২ জন।
অন্যদিকে, ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর দাবি—সোমবার যাদের লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে তারা “তাৎক্ষণিক হুমকি” সৃষ্টি করেছিল।
স্থানীয় প্রশাসনের তথ্যমতে, ইসরায়েলি বাহিনী “ইয়েলো লাইন” নামে পরিচিত অস্থায়ী প্রত্যাহার সীমার ভেতরে ধারাবাহিকভাবে বাড়িঘর ধ্বংস করছে। বানী সুহাইলা এলাকার মেয়র হামদান রাদওয়ান জানিয়েছেন, “দুইতলা বিশিষ্ট কোনো বাড়ি এখন আর টিকে নেই; প্রতিটি বাড়িই হামলার লক্ষ্য।”
গাজার কেন্দ্রীয় অংশেও একই চিত্র। স্যাটেলাইট চিত্র ও মাঠ পর্যায়ের ভিডিওতে দেখা গেছে—বড় বড় আবাসিক ব্লক মাটির সঙ্গে মিশে গেছে।
যুদ্ধবিরতির অন্যতম শর্ত ছিল প্রতিদিন কমপক্ষে ৬০০ ট্রাক মানবিক সহায়তা গাজায় প্রবেশ করবে। কিন্তু বাস্তবে রবিবার মাত্র ২৭০টি ট্রাক ঢুকতে পেরেছে। এর মধ্যে ১২৬টি ছিল মানবিক সাহায্য, ১২৭টি বাণিজ্যিক পণ্যবাহী, ১০টি জ্বালানি ও ৭টি রান্নার গ্যাসবাহী ট্রাক।
জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএ জানায়, গাজার মৌলিক চাহিদা পূরণে প্রতিদিন ৫০০ থেকে ৬০০ ট্রাক প্রয়োজন। কিন্তু ইসরায়েলের আরোপিত সীমাবদ্ধতার কারণে সংস্থাটির নিজস্ব গাড়িগুলো প্রবেশ করতে পারছে না। সংস্থার কর্মকর্তা জন হোয়াইট বলেন, “ইসরায়েল আমাদের কোনো চিহ্নযুক্ত ট্রাক ঢুকতে দিচ্ছে না। অন্য সংস্থার মাধ্যমে পণ্য পাঠাতে হচ্ছে, ফলে বিপুল সময় নষ্ট হচ্ছে।”
উত্তর গাজায় সহায়তার পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ। আল জাজিরার প্রতিবেদক হিন্দ খুদারি জানান, সেখানে গত ৭৫ দিন ধরে কোনো সরাসরি সহায়তা পৌঁছায়নি। “মানুষ ঘণ্টার পর ঘণ্টা পানির জন্য লাইনে দাঁড়ায়, অনেক পরিবার দিনে একবেলা খাবারও জোগাড় করতে পারছে না,” তিনি বলেন।
যুদ্ধবিরতির অংশ হিসেবে সোমবার ইসরায়েল ১৫ ফিলিস্তিনির মৃতদেহ গাজা কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করেছে। এটি ছিল দ্বাদশ দফা দেহ বিনিময়, যার মাধ্যমে মোট ৩১৫টি মরদেহ ফেরত এসেছে। এর মধ্যে মাত্র ৮৯ জনের পরিচয় শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে।
একই দিনে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) ঘোষণা করে যে খান ইউনুসের আল-খাইর হাসপাতাল পুনরায় চালু হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি বিদ্যুৎ, পানি ও স্যানিটেশন পুনর্বহাল করে হাসপাতালটি পুনর্গঠন করেছে এবং একটি নতুন ২০ শয্যার পুষ্টি পুনর্বাসন কেন্দ্র চালু করেছে। এই কেন্দ্রগুলো অপুষ্টি ও সংক্রমণে ভোগা শিশুদের চিকিৎসা দেয়, যা গাজায় বর্তমান পরিস্থিতিতে অতি জরুরি হয়ে উঠেছে।
প্রায় দুই বছরের অবিরাম হামলায় গাজার অসংখ্য মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়েছে। খাদ্য, পানি, ওষুধ এবং জ্বালানির তীব্র ঘাটতি দেখা দিয়েছে। ত্রাণ সংস্থাগুলো বারবার সতর্ক করছে—যদি সহায়তার প্রবাহ দ্রুত স্বাভাবিক না হয়, তবে গাজার মানবিক পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিতে পারে।