Friday, December 5, 2025

ভারতে ভয়াবহ বিমান দুর্ঘটনার তদন্তে বিতর্ক, পাইলটদের দায় নিয়ে বিভক্ত মত


ফাইল ছবিঃ ভারতে ভয়াবহ বিমান দুর্ঘটনার তদন্তে বিতর্ক (সংগৃহীত । বিবিসি নিউজ)

আন্তর্জাতিক ডেস্ক |PNN 

ভারতের আহমেদাবাদ থেকে লন্ডনের উদ্দেশে উড্ডয়নের মাত্র ৩২ সেকেন্ড পর ভয়াবহ বিমান দুর্ঘটনায় ২৬০ জনের মৃত্যু ঘটে। দুর্ঘটনার পাঁচ মাস পার হলেও তদন্ত এখনো বিতর্কে জড়িয়ে পড়েছে। সর্বশেষ ভারতের সুপ্রিম কোর্ট এ বিষয়ে মন্তব্য করেছে, যেখানে আদালত স্পষ্টভাবে বলেছে, “কেউই বিমানের পাইলটকে দোষ দিতে পারে না।”

গত ১২ জুন এয়ার ইন্ডিয়ার ফ্লাইট ১৭১ আহমেদাবাদ বিমানবন্দর থেকে উড্ডয়নের পরপরই একটি ভবনের সঙ্গে ধাক্কা খায়। জুলাইয়ে প্রকাশিত প্রাথমিক তদন্ত প্রতিবেদনে ইঙ্গিত করা হয়েছিল, পাইলটদের ত্রুটির কারণেই দুর্ঘটনাটি ঘটে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রতিবেদনে ইচ্ছাকৃতভাবে বিমানের যান্ত্রিক ত্রুটি থেকে মনোযোগ সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।

শুক্রবার বিচারপতি সুর্য কান্ত বলেন, “এই দুর্ঘটনা নিঃসন্দেহে দুঃখজনক, কিন্তু আপনার ছেলে (ক্যাপ্টেন সুমিত সাবারওয়াল) কোনো দোষ করেননি। কেউই তাঁকে দোষারোপ করতে পারে না।” এই মন্তব্য ক্যাপ্টেন সাবারওয়ালের বাবা, ৯১ বছর বয়সী পুষ্কররাজ সাবারওয়ালের দায়ের করা এক আবেদনের শুনানিতে আসে। তিনি স্বাধীন বিচার বিভাগীয় তদন্তের আবেদন করেছিলেন।

দুর্ঘটনার তদন্ত করছে ভারতের এয়ার অ্যাকসিডেন্ট ইনভেস্টিগেশন ব্যুরো (AAIB), যেখানে যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারাও অংশ নিচ্ছেন, কারণ বিমানের নকশা ও ইঞ্জিন তৈরি করেছে মার্কিন প্রতিষ্ঠান বোয়িং।

১৫ পৃষ্ঠার প্রাথমিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, উড্ডয়নের কিছুক্ষণ পর বিমানের ফুয়েল কাট-অফ সুইচ “রান” অবস্থান থেকে “কাট-অফ” অবস্থানে চলে যায়—যা ইঞ্জিনে জ্বালানি সরবরাহ বন্ধ করে দেয়। পাইলটরা দ্রুত সুইচ ফিরিয়ে আনলেও তখন অনেক দেরি হয়ে যায়।

রিপোর্টে আরও উল্লেখ আছে, ককপিট ভয়েস রেকর্ডারে এক পাইলট অপরজনকে জিজ্ঞাসা করেন, “তুমি কেন ফুয়েল কাট করলে?” উত্তরে অপরজন বলেন, “আমি করিনি।” এই সংলাপ থেকেই অনেকে ধারণা করছেন, এটি পাইলটের ভুল বা আত্মহত্যার চেষ্টা হতে পারে।

অভিযুক্ত পাইলটদের পরিবার ও আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এসব তথ্য আংশিক এবং বিভ্রান্তিকর। ভারতীয় এভিয়েশন নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ ক্যাপ্টেন অমিত সিং দাবি করেছেন, “ইঞ্জিন বন্ধ হয়ে যাওয়ার পেছনে বৈদ্যুতিক ত্রুটি ছিল মূল কারণ।” তিনি মনে করেন, বিমানের “ফুল অথরিটি ডিজিটাল ইঞ্জিন কন্ট্রোল (FADEC)” নামক সিস্টেমের গোলযোগের কারণে ইঞ্জিনে জ্বালানি সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ফাউন্ডেশন ফর এভিয়েশন সেফটির (FAS) প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক বোয়িং ব্যবস্থাপক এড পিয়ারসনও এই মতের পক্ষে। তিনি বলেন, “রিপোর্টটি বিব্রতকরভাবে অসম্পূর্ণ এবং স্পষ্টতই দোষ চাপানোর উদ্দেশ্যে লেখা হয়েছে।”

অন্যদিকে মার্কিন পরিবহন মন্ত্রণালয়ের সাবেক পরিদর্শক জেনারেল মেরি শিয়াভো মনে করেন, তদন্তকারীরা চাপে পড়ে দ্রুত তথ্য প্রকাশ করতে গিয়েই ভুল করেছেন। তাঁর মতে, “তারা শুধু দ্রুত কিছু প্রকাশ করতে চেয়েছিল, কিন্তু ফলাফল হয়েছে পাইলটদের প্রতি অন্যায্য দোষারোপ।”

আন্তর্জাতিক নিয়ম অনুযায়ী, বড় কোনো বিমান দুর্ঘটনার এক বছরের মধ্যে চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রকাশের কথা। তবে অনেক সময় তা বিলম্বিত হয়। এয়ার ইন্ডিয়ার এই দুর্ঘটনার ক্ষেত্রেও একই অবস্থা দেখা যাচ্ছে।

বোয়িং জানিয়েছে, তারা ভারতের তদন্ত সংস্থার কাজেই ভরসা রাখছে এবং নিজেরা সরাসরি মন্তব্য করবে না।

Super Admin

PNN

প্লিজ লগইন পোস্টে মন্তব্য করুন!

আপনিও পছন্দ করতে পারেন