- ০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫
আন্তর্জাতিক ডেস্ক। PNN
ভারতে বিমানভাড়া লাগামহীনভাবে বেড়ে যাওয়ায় মধ্যবিত্ত থেকে শুরু করে নিম্ন মধ্যবিত্ত যাত্রীরা ক্রমেই বিমানের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছেন। বিশেষ করে শ্রীনগর ও নয়াদিল্লির মধ্যে যাতায়াতকারী যাত্রীদের জন্য পরিস্থিতি আরও কঠিন হয়ে উঠেছে।
শ্রীনগর নয়াদিল্লি রুটে যাতায়াত করা সালমান শাহিদ জানান, পাঁচ বছর আগেও যেখানে একমুখী ভাড়া ছিল গড়ে সাড়ে তিন হাজার রুপি, সেখানে এখন সেই ভাড়া বেড়ে দাঁড়িয়েছে পাঁচ হাজার রুপিরও বেশি। নিয়মিত ভ্রমণ কমিয়ে দিতে বাধ্য হয়েছেন তিনি। “আগে মাসে চারবার যাওয়া আসা করতাম, এখন দুইবারও পারি না,” বলেন তিনি।
শুধু সালমান নন, সারা দেশেই একই চিত্র। এয়ারপোর্টস কাউন্সিল ইন্টারন্যাশনালের (ACI) এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৪ সালের প্রথম ছয় মাসে ভারতের অভ্যন্তরীণ ফ্লাইটের ভাড়া ২০১৯ সালের তুলনায় ৪৩ শতাংশ বেড়েছে। আন্তর্জাতিক ভাড়ার ক্ষেত্রেও বৃদ্ধি ১৬ শতাংশ।
এর পেছনে তিনটি প্রধান কারণ চিহ্নিত করেছেন বিশেষজ্ঞরা জ্বালানি মূল্য বৃদ্ধি: ২০১৯ সালের তুলনায় এভিয়েশন টারবাইন ফুয়েলের দাম বেড়েছে ৩৮ শতাংশ, চাহিদা বেড়ে যাওয়া: নতুন রুট ও বিমানবন্দর বাড়লেও মধ্যবিত্ত যাত্রী কম ভ্রমণ করছেন, আর উচ্চ আয়ের যাত্রীরা বাজার ধরে রেখেছেন। প্রতিযোগিতা কমে যাওয়া: গো ফার্স্ট ও জেট এয়ারের মতো বড় কোম্পানি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বাজারে আধিপত্য করছে কয়েকটি বড় প্রতিষ্ঠান। ফলে তারা ভাড়া বাড়িয়ে চলেছে।
এদিকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ‘উড়ান’ প্রকল্প যেখানে ফ্লিপ ফ্লপ পরা সাধারণ মানুষকে বিমানে ওঠানোর প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল, এখন ‘খালি স্লোগান’ হয়ে উঠছে বলে মত বিশেষজ্ঞদের। নতুন বিমানবন্দর ও রুট বাড়লেও ভাড়া বৃদ্ধির কারণে সেই সুবিধা কাজে লাগাতে পারছেন না নিম্ন আয়ের যাত্রীরা।
বিমানের ভাড়া বৃদ্ধিতে সরকারি করও বড় ভূমিকা রাখছে। ভারতে এভিয়েশন ফুয়েলে এশিয়ার সর্বোচ্চ কর আরোপ করা হয়, যা টিকিটের মোট দামের ৪৫ শতাংশ পর্যন্ত গঠন করে। যাত্রীদের দিতে হয় নানা ধরনের ফি ইউজার ডেভেলপমেন্ট ফি, অ্যাভিয়েশন সিকিউরিটি ফি, সার্ভিস ফি যা যোগ হয়ে ভাড়াকে আরও বাড়িয়ে দেয়।
দুই শীর্ষ এয়ারলাইন ইন্ডিগো ও এয়ার ইন্ডিয়া এখন বাজারের ৯১ শতাংশ দখল করে রেখেছে। ফলে সংকটের সময় বা উৎসবের মৌসুমে টিকেটের দাম অসহনীয় হয়ে ওঠে। কাশ্মীরের পাহালগাম হামলার পর শ্রীনগর থেকে একমুখী ভাড়া বেড়ে দ্বিগুণেরও বেশি হয়ে যাওয়ার ঘটনা তার সাম্প্রতিক উদাহরণ।
ট্রাভেল অপারেটরদের মতে, কোভিড পরবর্তী সময়ে ভাড়ার যে উর্ধ্বমুখী প্রবণতা শুরু হয়েছে, তা এখনো থামার কোনো লক্ষণ নেই।
বিশেষজ্ঞদের মতে, সাশ্রয়ী বিমানভ্রমণ নিশ্চিত করতে হলে জ্বালানি কর কমানো এবং প্রতিযোগিতা বাড়ানো এই দুটি পদক্ষেপ সবচেয়ে জরুরি। তা না হলে, ভারতীয়দের বিশাল জনগোষ্ঠীর জন্য বিমানযাত্রা কেবল ‘স্বপ্ন’ হিসেবেই থেকে যাবে।