- ০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫
আন্তর্জাতিক ডেস্ক |PNN
আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) উগান্ডার কুখ্যাত বিদ্রোহী নেতা জোসেফ কোনির বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধ ও মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের অভিযোগ আনুষ্ঠানিকভাবে নিশ্চিত করেছে। প্রায় দুই দশক আগে আদালত তাঁর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছিল।
কোনি বর্তমানে পলাতক রয়েছেন এবং তাঁর বিরুদ্ধে হত্যাকাণ্ড, ধর্ষণ, যৌন দাসত্বসহ মোট ৩৯টি অভিযোগ আনা হয়েছে। আইসিসির ইতিহাসে সবচেয়ে দীর্ঘদিন ধরে পলাতক আসামি তিনি।
আইসিসির প্রি-ট্রায়াল চেম্বার–৩-এর বিচারকরা জানিয়েছেন, ২০০২ থেকে ২০০৫ সালের মধ্যে উত্তর উগান্ডায় লর্ডস রেজিস্ট্যান্স আর্মি (এলআরএ) নেতৃত্বের সময় কোনি যুদ্ধাপরাধে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত ছিলেন, এমন ‘যথেষ্ট প্রমাণ’ রয়েছে।
রায়ের বিবৃতিতে বিচারকরা বলেন, “জোসেফ কোনি সাধারণ মানুষের বসতি আক্রমণ, হত্যা, লুণ্ঠন, সম্পদ ধ্বংস এবং নারী-শিশুদের অপহরণের নির্দেশ দিয়েছিলেন। তিনি অন্তত দুই নারীকে জোর করে স্ত্রী বানিয়ে নিজের হাতে অপরাধ করেছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।”
এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে প্রথমবারের মতো আদালত কোনো আসামির অনুপস্থিতিতে অভিযোগ নিশ্চিত করল। অর্থাৎ, কোনিকে গ্রেপ্তার করা গেলে তাঁর বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক বিচার কার্যক্রম শুরু করা যাবে।
১৯৮০-এর দশকের শেষ দিকে উত্তর উগান্ডার আচোলি অঞ্চলে এলআরএ গোষ্ঠীটি আবির্ভূত হয়। ধর্মীয় বিশ্বাসের সঙ্গে সশস্ত্র বিদ্রোহের মিশ্রণে কোনি প্রেসিডেন্ট ইয়োওয়েরি মুসেভেনির সরকারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করেন।
জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, এলআরএর সহিংসতায় প্রায় এক লাখ মানুষ নিহত এবং সাড়ে ২৫ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়। সংগঠনটির যোদ্ধারা শুধু উগান্ডায় নয়, দক্ষিণ সুদান, কঙ্গো ও মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্রেও হামলা চালায়—গ্রাম পোড়ানো, শিশু অপহরণ, নারীদের যৌন দাসে পরিণত করা ছিল তাদের সাধারণ কৌশল।
আইসিসির এই সিদ্ধান্ত আসে চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে অনুষ্ঠিত তিন দিনের শুনানির পর, যেখানে প্রসিকিউশন ও ভুক্তভোগীদের আইনজীবীরা কোনির অনুপস্থিতিতেই প্রমাণ উপস্থাপন করেন।
৬৪ বছর বয়সী কোনিকে ধরতে আন্তর্জাতিক সংস্থা ও নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযান চলমান রয়েছে।
২০১২ সালে ‘#Kony2012’ নামের একটি ভাইরাল ভিডিও প্রচারণার মাধ্যমে তাঁর নৃশংসতার বিষয়টি আবারও বৈশ্বিক মনোযোগে আসে। এরপর বহু সামরিক অভিযান চালানো হলেও কোনিকে এখনো ধরা যায়নি।
বিশ্লেষকরা বলছেন, আইসিসির এই সিদ্ধান্ত ইতিহাসে এক নতুন নজির, যা পলাতক যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের আওতায় আনার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে গুরুত্বপূর্ণ দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।