- ০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫
আন্তর্জাতিক ডেস্ক |PNN
দীর্ঘ পাঁচ বছর পর মুখোমুখি বৈঠকে বসে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিনপিং তাদের দুই দেশের মধ্যে চলমান বাণিজ্যযুদ্ধের উত্তাপ কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর) দক্ষিণ কোরিয়ার বুসানে অনুষ্ঠিত এশিয়া-প্যাসিফিক ইকোনমিক কোঅপারেশন (এপেক) সম্মেলনের ফাঁকে অনুষ্ঠিত এই বৈঠকে তারা এক বছরের বাণিজ্য যুদ্ধবিরতি ঘোষণায় সম্মত হন।
দুই নেতার আলোচনায় চীন বিরল খনিজ (Rare Earth) রপ্তানিতে আরোপের পরিকল্পিত নিয়ন্ত্রণ এক বছরের জন্য স্থগিত রাখতে সম্মত হয়েছে। এর বিপরীতে যুক্তরাষ্ট্র চীনা পণ্যের ওপর ঘোষিত ১০০ শতাংশ শুল্ক হুমকি প্রত্যাহার করছে।
এছাড়া ট্রাম্প ঘোষণা দেন, চীন যদি ফেন্টানিল নামের কৃত্রিম মাদকদ্রব্যের অবৈধ রপ্তানি রোধে সক্রিয় ভূমিকা নেয়, তাহলে যুক্তরাষ্ট্র ফেন্টানিল-সম্পর্কিত ২০ শতাংশ শুল্ক কমিয়ে ১০ শতাংশে আনবে।
ট্রাম্প বলেন, “আমি বিশ্বাস করি, প্রেসিডেন্ট সি এই মৃত্যুঝড় থামাতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করবেন।”
দুই ঘণ্টার বৈঠক শেষে ট্রাম্প বলেন, “এটি ছিল এক অসাধারণ বৈঠক। আমরা বিরল খনিজ নিয়ে জটিলতা মিটিয়ে ফেলেছি। এখন থেকে বিষয়টি আর বাধা হয়ে থাকবে না।”
তিনি জানান, চীন বিপুল পরিমাণ আমেরিকান সয়াবিন কেনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। অন্যদিকে সি চিনপিং বলেন, দুই দেশ আলোচনার মাধ্যমে বিভিন্ন সমস্যার “সমাধানে সম্মত হয়েছে” এবং দ্রুত ফলপ্রসূ পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় পরে জানায়, চীন শুধু রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ স্থগিতই নয়, বরং প্রযুক্তিনির্ভর রপ্তানিতে যুক্তরাষ্ট্রের অতিরিক্ত নিষেধাজ্ঞা স্থগিতের প্রতিশ্রুতি পেয়েছে। উভয় দেশ পারস্পরিক বন্দর ফি স্থগিত করতেও সম্মত হয়েছে।
এশিয়ার শেয়ারবাজারে এ চুক্তির প্রভাব খুব একটা দেখা যায়নি। হংকং, সাংহাই ও সিডনির সূচক সামান্য কমেছে, আর জাপানের বাজার বন্ধ হয়েছে প্রায় স্থিতিশীল অবস্থায়।
জর্জটাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডেনিস ওয়াইল্ডার বলেন, “এই চুক্তি আসলে যুদ্ধবিরতির মতো। উভয় পক্ষ অস্ত্র নামিয়ে রাখল, কিন্তু ফেলে দেয়নি।”
সিঙ্গাপুরভিত্তিক হিনরিচ ফাউন্ডেশনের প্রধান ডেবোরা এলমস মনে করেন, “এটি একটি আংশিক স্থবিরতা বা সামান্য শিথিলতা, কিন্তু সম্পূর্ণ সমাধান নয়।”
অন্যদিকে সাংহাইভিত্তিক পরামর্শক প্রতিষ্ঠান টিডালওয়েভ সলিউশনের পার্টনার ক্যামেরন জনসন বলেন, “এই সমঝোতা পরিস্থিতি অনুযায়ী যতটা সম্ভব বাস্তবসম্মত সিদ্ধান্ত। তবে ট্রাম্প যেহেতু বলেছেন, প্রতি বছর চুক্তিটি পর্যালোচনা করা হবে—তাতে দুই দেশের পারস্পরিক সম্পর্কের ভারসাম্য রক্ষার সুযোগ তৈরি হবে।”
চীনের বিরল খনিজের ওপর নিয়ন্ত্রণ পরিকল্পনা বৈশ্বিক সরবরাহব্যবস্থায় বিপর্যয়ের আশঙ্কা তৈরি করেছিল। কারণ, এই খনিজগুলো স্মার্টফোন থেকে শুরু করে যুদ্ধবিমান পর্যন্ত আধুনিক প্রযুক্তির উৎপাদনে অপরিহার্য।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, এই চুক্তি যদিও দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা কিছুটা প্রশমিত করেছে, তবু শুল্ক বাধা ও রপ্তানি নিয়ন্ত্রণের মূল কাঠামো এখনো বহাল রয়েছে। ফলে, বিশ্ব অর্থনীতি আপাতত স্বস্তি পেলেও অনিশ্চয়তা এখনো কাটেনি।