- ১৩ অক্টোবর, ২০২৫
টেক্সাসের মধ্যাঞ্চলে ভয়াবহ আকস্মিক বন্যার এক সপ্তাহ পরও নিখোঁজদের সন্ধানে তীব্র তৎপরতা চলছে। এই দুর্যোগে এখন পর্যন্ত অন্তত ১২১ জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে স্থানীয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও গভর্নর গ্রেগ অ্যাবট। নিখোঁজ রয়েছেন আরও ১৭০ জনের বেশি মানুষ।
সর্বোচ্চ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কার কাউন্টি, যেখানে গুয়াদালুপ নদীর পানি দ্রুত গতিতে ২৬ ফুট পর্যন্ত বৃদ্ধি পায়, যা এলাকার বাসিন্দাদের প্রস্তুতিহীন অবস্থায় ফেলে দেয়। এই নদী অঞ্চলকে ‘ফ্ল্যাশ ফ্লাড অ্যালি’ বলা হয়, কারণ এখানে আকস্মিক বন্যার আশঙ্কা সবচেয়ে বেশি।
কার কাউন্টিতে নিখোঁজ ব্যক্তিদের সংখ্যা ১৬১ জন এবং মৃত্যু হয়েছে অন্তত ৯৬ জনের। বন্যার পর ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা ও পানির নিচে চাপা পড়া অঞ্চলগুলোতে এখনও জীবিতদের খোঁজে অভিযান চালাচ্ছেন উদ্ধারকর্মীরা।
সবচেয়ে মর্মান্তিক ঘটনাগুলোর একটি ঘটেছে ক্যাম্প মিস্টিকে, একটি গার্লস সামার ক্যাম্প যা কার কাউন্টির হান্ট শহরের কাছে অবস্থিত। সেখানে ২৭ জন কিশোরী ক্যাম্পার ও কাউন্সেলরের মৃত্যু হয়েছে। অনেকে জানায়, তারা ঘুম থেকে উঠে দেখে পানি জানালা দিয়ে ঢুকছে। এখনও নিখোঁজ রয়েছেন পাঁচজন ক্যাম্পার ও একজন কাউন্সেলর।
এছাড়া, একটি বাচ্চা সন্তান, যিনি ক্যাম্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নন, তিনিও নিখোঁজ রয়েছেন বলে জানিয়েছেন গভর্নর অ্যাবট।
দুর্যোগ মোকাবিলায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প কার কাউন্টিকে ফেডারেল ডিজাস্টার এরিয়া হিসেবে ঘোষণা দিয়েছেন, যার ফলে ফেমা (FEMA) সহায়তায় উদ্ধার কার্যক্রম জোরদার হয়েছে।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী রবার্ট এফ. কেনেডি জুনিয়র জানিয়েছেন, অঞ্চলটিকে জনস্বাস্থ্য জরুরি অবস্থা হিসেবে ঘোষণা দেওয়ার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। এতে বাইরের রাজ্য থেকে চিকিৎসা ও মানসিক স্বাস্থ্য সহায়তাকারীদের সরাসরি বা টেলিমেডিসিনের মাধ্যমে সহায়তা প্রদান সহজ হবে।
“একজন মানুষের মৃত্যু যেমন বেদনাদায়ক, একটি শিশুর প্রাণহানি আরও বেদনাদায়ক,” বলেন টেক্সাস গেম ওয়ার্ডেন বেন বেকার, যিনি জানান উদ্ধারকর্মীদের মানসিক চাপ অনেক বেড়ে গেছে।
কার কাউন্টির বাইরেও মৃত্যুর খবর মিলেছে ট্রাভিস, বারনেট, কেনডাল, উইলিয়ামসন এবং টম গ্রিন কাউন্টিতে।
টানা বৃষ্টিপাতে উদ্ধার কাজ ব্যাহত হলেও স্থানীয় প্রশাসন, ফেডারেল দল ও শত শত স্বেচ্ছাসেবক এখনো মাঠে সক্রিয়। তারা জানিয়েছেন, যতক্ষণ না শেষ ব্যক্তি খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে, ততক্ষণ অভিযান চালিয়ে যাওয়া হবে।
গভর্নর অ্যাবট টেক্সাসবাসীদের সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেন, “বন্যা কবলিত এলাকা এড়িয়ে চলুন, এবং প্রার্থনা করুন যেন ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো এই দুঃসময় কাটিয়ে উঠতে পারে।”
এটি সাম্প্রতিক ইতিহাসে টেক্সাসের অন্যতম ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ হিসেবে চিহ্নিত হয়ে রইল।