Friday, December 5, 2025

তানজানিয়ায় টানা তৃতীয় দিনের বিক্ষোভে উত্তপ্ত পরিস্থিতি, সেনা মোতায়েন ও ইন্টারনেট বন্ধ


ছবিঃ তানজানিয়ার আরুশা শহরের রাস্তায় মানুষ নির্বাচনের দিনে, বুধবার, ২৯ অক্টোবর ২০২৫ তারিখে বিক্ষোভ করছে (সংগৃহীত । আল জাজিরা । এপি)

আন্তর্জাতিক ডেস্ক |PNN 

বিতর্কিত নির্বাচনকে কেন্দ্র করে তানজানিয়ার বাণিজ্যিক রাজধানী দারুস সালাম সহ বিভিন্ন শহরে টানা তৃতীয় দিনের মতো চলছে সহিংস বিক্ষোভ। শুক্রবার (৩১ অক্টোবর) সকাল পর্যন্ত বিক্ষোভকারীরা পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়, আর সরকার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেনাবাহিনী মোতায়েন করেছে এবং ইন্টারনেট বন্ধ রেখেছে।

বুধবারের ভোটকে কেন্দ্র করে শুরু হওয়া এই অস্থিরতা বৃহস্পতিবার রাতে চরম আকার ধারণ করে। রাজধানীর মবাগালা, গঙ্গো লা এমবোটো এবং কিলুভিয়া এলাকায় কারফিউ উপেক্ষা করে হাজারো মানুষ রাস্তায় নেমে এলে পুলিশ টিয়ারগ্যাস ছুড়ে ছত্রভঙ্গ করে। স্থানীয় গণমাধ্যম জানায়, কিছু এলাকায় গুলির শব্দও শোনা গেছে।

মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল জানিয়েছে, এ সপ্তাহের সহিংসতায় অন্তত দুইজন নিহত হয়েছেন। বিক্ষোভকারীরা নির্বাচন ফল ঘোষণা বন্ধের দাবি জানিয়ে রাস্তায় অবস্থান নেন এবং কিছু এলাকায় গাড়ি, একটি ফুয়েল স্টেশন ও পুলিশ বক্সে আগুন ধরিয়ে দেন।

বুধবারের সাধারণ নির্বাচনে ক্ষমতাসীন চামা চা মাপিনডুজি (CCM) দল ১৯৬১ সাল থেকে টানা ক্ষমতায় থাকার ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে চায়। কিন্তু নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট সামিয়া সুলুহু হাসানের প্রধান দুই প্রতিদ্বন্দ্বীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে বাদ দেওয়া হয়, যা দেশজুড়ে ক্ষোভ সৃষ্টি করেছে।

প্রধান বিরোধী দল চাদেমা এপ্রিল মাসে নির্বাচন আচরণবিধিতে স্বাক্ষর না করায় বাতিল হয়। দলের নেতা টুন্ডু লিসুকে নির্বাচন সংস্কারের আহ্বান জানিয়ে সমাবেশ করার সময় রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়। অন্যদিকে দ্বিতীয় বৃহত্তম দল এসি‌টি-ওয়াজালেন্ডো–এর প্রার্থী লুহাগা ম্পিনাকেও অ্যাটর্নি জেনারেলের আপত্তিতে প্রতিযোগিতা থেকে বাদ দেওয়া হয়।

জাতিসংঘের নয়জন বিশেষজ্ঞের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৯ সাল থেকে তানজানিয়ায় রাজনৈতিকভাবে অনুপ্রাণিত নিখোঁজের ঘটনা ২০০-র বেশি। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ সেপ্টেম্বর মাসে অন্তত ১০টি রাজনৈতিক হামলা, অপহরণ, নির্যাতন এবং সংবাদমাধ্যমের ওপর দমন-পীড়নের প্রমাণ তুলে ধরে সতর্ক করেছিল যে, “অক্টোবরের নির্বাচন মারাত্মক ঝুঁকিতে রয়েছে।”

এই প্রেক্ষাপটে এই সপ্তাহের সহিংসতা আন্তর্জাতিক মহলে উদ্বেগ তৈরি করেছে। জাতিসংঘ ও মানবাধিকার সংস্থাগুলো তানজানিয়া সরকারকে বিরোধী মত দমনের নীতি বন্ধ করে “স্বচ্ছ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিতের” আহ্বান জানিয়েছে।

অন্যদিকে, আধা-স্বায়ত্তশাসিত দ্বীপপুঞ্জ জানজিবারে শাসক দল সিসিএমের প্রার্থী হুসেইন মুইনি ৭৮.৮ শতাংশ ভোট পেয়ে পুনর্নির্বাচিত হয়েছেন বলে স্থানীয় নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে। তবে বিরোধী দলগুলো এই ফলাফলকে “বড় ধরনের জালিয়াতি” বলে দাবি করেছে এবং পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণার হুমকি দিয়েছে।

সহিংসতা বাড়তে থাকায় সরকার আগামী সোমবার থেকে কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় খোলার সিদ্ধান্ত স্থগিত করেছে। সেনাবাহিনীর প্রধান জ্যাকব জন মকুন্দা বৃহস্পতিবার বলেন, “রাষ্ট্রের স্থিতিশীলতা রক্ষায় সেনাবাহিনী আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করবে।”

দারুস সালাম সহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বর্তমানে ব্যাপক সেনা ও পুলিশের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। তানজানিয়ার রাজনৈতিক সংকট আফ্রিকার অন্য কয়েকটি দেশে চলমান ক্ষমতা ধরে রাখার প্রবণতার সঙ্গে নতুন করে যুক্ত হলো বলে আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকেরা মন্তব্য করছেন।

Super Admin

PNN

প্লিজ লগইন পোস্টে মন্তব্য করুন!

আপনিও পছন্দ করতে পারেন