- ০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫
আন্তর্জাতিক ডেস্ক। PNN
চীনে মুক্তির অপেক্ষায় থাকা দুটি জনপ্রিয় জাপানি অ্যানিমে চলচ্চিত্র হঠাৎ করেই স্থগিত করেছে দেশটির চলচ্চিত্র পরিবেশকরা। রাজনৈতিক টানাপোড়েনের মধ্যেই ক্রেয়ন শিন-চ্যান: সুপার হট! দ্য স্পাইসি কাসুকাবে ড্যান্সারস এবং সেলস অ্যাট ওয়ার্ক! এই দুই অ্যানিমের প্রদর্শনী স্থগিত হওয়াকে বিশেষজ্ঞরা চীনের কূটনৈতিক বার্তার অংশ হিসেবে দেখছেন।
মঙ্গলবার রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম সিসিটিভি জানায়, জাপানের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক অবস্থান এবং দর্শকদের মনোভাব বিবেচনায় রেখে পরিবেশকরা “সতর্কতার সঙ্গে” চলচ্চিত্র দুটি মুক্তি স্থগিত করেছে। বিশেষ করে জাপানের প্রধানমন্ত্রী সানায়ে তাকাইচির মন্তব্য যেখানে তিনি ইঙ্গিত দেন, চীন যদি তাইওয়ানের নিয়ন্ত্রণ নিতে চায়, তবে টোকিও সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপে যেতে পারে বেইজিংকে ক্ষুব্ধ করেছে।
অর্থনৈতিক কূটনীতি বিষয়ক বিশেষজ্ঞ নোইস ম্যাকডোনাফ বলেন, চীন এমন ক্ষেত্রেই চাপ সৃষ্টি করে যা তাদের নিজস্ব স্বার্থে ঝুঁকি তৈরি করে না, কিন্তু প্রতিপক্ষ দেশের জন্য অর্থনৈতিক ও প্রতীকী ক্ষতির কারণ হয়। তাঁর মতে, অ্যানিমে মুক্তি স্থগিত করা “চীনের সুপরিচিত কৌশল”, যা দেখাতে চায় তাইওয়ান ইস্যুতে কোনো দেশ সীমা লঙ্ঘন করলে তার মূল্য দিতে হবে।
এদিকে তাকাইচির মন্তব্যকে “উসকানিমূলক” আখ্যা দিয়ে চীনে জাপানি চলচ্চিত্রের প্রতি দর্শকদের আগ্রহ কমে যেতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে দেশটির মিডিয়া। তাই পরিবেশকরা বাজারের পরিস্থিতি ও জনমত বিবেচনায় সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে দাবি করছে বেইজিং।
সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে চীন ও জাপানের পাল্টাপাল্টি কার্যক্রমে উত্তেজনা আরও তীব্র হয়েছে। চীন তাদের নাগরিকদের জাপানে ভ্রমণে সতর্কতা জারি করেছে। বিতর্কিত সেনকাকু দ্বীপপুঞ্জের কাছে যুদ্ধজাহাজ মোতায়েন করেছে বেইজিং। পাল্টা হিসেবে জাপানও তাদের নাগরিকদের চীনে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছে।
টোকিওর শীর্ষ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তারা সংলাপের জন্য উন্মুক্ত; তবে এ সপ্তাহে দক্ষিণ আফ্রিকায় জি-২০ সম্মেলনের সাইডলাইনে জাপান–চীন শীর্ষ বৈঠক হবে না বলে ইতোমধ্যেই জানিয়েছে বেইজিং।
চীন দাবি করে, স্বশাসিত তাইওয়ান তাদের অবিচ্ছেদ্য অংশ এবং প্রয়োজনে শক্তি প্রয়োগ করে একীকরণ করা হবে। জাপান এই অবস্থানকে তাদের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি মনে করে, কারণ দ্বীপটি জাপানি ভূখণ্ডের খুব কাছেই এবং গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যপথের ওপর অবস্থিত।
বিশ্বের বেশিরভাগ দেশ বেইজিংকে স্বীকৃতি দিলেও, তারা তাইপেইয়ের সঙ্গে অর্থনৈতিক ও অনানুষ্ঠানিক সম্পর্ক বজায় রাখে। এই সূক্ষ্ম ভূরাজনীতির মাঝেই সিনেমা মুক্তির মতো সাংস্কৃতিক ইস্যুও পরিণত হয়েছে কূটনৈতিক চাপে।
চলমান পরিস্থিতিতে দুই দেশের সম্পর্ক কোন দিকে গড়াবে, তা এখনো অনিশ্চিত তবে অ্যানিমে প্রদর্শনী স্থগিতের ঘটনা যে বড় উত্তেজনারই ছোট প্রতিচ্ছবি, তা স্পষ্ট।