- ১৩ অক্টোবর, ২০২৫
সিরিয়ার দক্ষিণাঞ্চলের সুয়েইদা প্রদেশে ড্রুজ ও বেদুইন গোত্রের মধ্যে ফের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ শুরু হয়েছে। সংঘর্ষের মাত্র কয়েক দিনের ব্যবধানে শতাধিক মানুষ নিহত হওয়ার পর অঞ্চলটিতে নতুন করে সরকার বাহিনী মোতায়েন করেছে সিরিয়ার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। সংঘাত প্রশমনে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে মন্ত্রণালয়।
তবে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠেছে ইসরায়েলের হস্তক্ষেপে। শুক্রবার (১৮ জুলাই) সিরিয়ার পালমিরা-হোমস মহাসড়কে একটি বেদুইন যোদ্ধাদের বহরে বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। ইসরায়েলের সরকারি সম্প্রচারমাধ্যম কান নিউজ জানায়, ওই যোদ্ধারা সুয়েইদার দিকে রওনা দিয়েছিল।
এই হামলার মাত্র দুই দিন আগেই ইসরায়েল সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কে বড় ধরনের বিমান হামলা চালিয়েছিল।
এদিকে, বৃহস্পতিবার রাতে বেদুইন যোদ্ধারা জানিয়েছে, তারা ড্রুজ গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে নতুন আক্রমণ শুরু করেছে। যদিও এর আগেই সিরিয়ার সরকার বাহিনী সুয়েইদা থেকে সেনা প্রত্যাহার করেছিল। প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারআ চেষ্টা করেছিলেন সংঘর্ষ থামাতে, কিন্তু তা ব্যর্থ হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
স্থানীয়দের আহ্বানে সেনা মোতায়েন
আল জাজিরার সাংবাদিক জেইনা খদর দামেস্ক থেকে জানিয়েছেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক সূত্র জানায় যে, সুয়েইদার স্থানীয়দের অনুরোধেই সরকার সেখানে নতুন করে সেনা পাঠিয়েছে।
“এই অঞ্চলে কিছু বেদুইন পরিবার বসবাস করলেও, তারা অন্যান্য প্রদেশের গোত্রগুলোকেও সাহায্যের জন্য আহ্বান জানিয়েছে,” বলেন খদর।
তিনি আরও বলেন, “বাশার আল-আসাদ পতনের পর ড্রুজ ও বেদুইনদের মধ্যে যে পুরনো বিভেদ ছিল তা আরও প্রবল রূপ নিচ্ছে। আগেও ছোটখাটো সহিংসতা হয়েছে, কিন্তু এবার পরিস্থিতি ভিন্ন। কারণ এবার বেদুইন গোষ্ঠীগুলো নিজেরাই সরকারের সহায়তা চাইছে।”
ইসরায়েলের হুঁশিয়ারি ও হামলা
ইসরায়েল পূর্বেই হুঁশিয়ারি দিয়েছিল যে তারা সিরিয়ার দক্ষিণাঞ্চলে সরকারি বাহিনীর উপস্থিতি মেনে নেবে না। সেই সূত্র ধরেই পালমিরা-হোমস মহাসড়কে বেদুইন যোদ্ধাদের বহরে ইসরায়েলের বিমান হামলা হয়। তবে এতে কতজন হতাহত হয়েছে, সে বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য এখনো জানা যায়নি।
বেদুইন যোদ্ধাদের অবস্থান
রয়টার্সকে দেওয়া এক বিবৃতিতে বেদুইন সামরিক কমান্ডার জানিয়েছেন, সরকার বাহিনীর সঙ্গে যে যুদ্ধবিরতি হয়েছে, তা তাদের জন্য প্রযোজ্য নয়। তিনি বলেন, “ড্রুজ সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর হাতে যেসব বেদুইন আটক রয়েছেন, তাদের মুক্ত করতেই আমরা লড়ছি।”
এর মধ্যেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে একটি ভিডিও, যেখানে বেদুইন গোত্রের নেতা আবদুল মুন্নিম আল নাসিফ অস্ত্রধারী যোদ্ধাদের সঙ্গে দাঁড়িয়ে অন্য গোত্রগুলোর প্রতি আহ্বান জানাচ্ছেন। তিনি বলেন, “আমাদের জনগণকে গণহত্যা থেকে রক্ষা করতে ও আল্লাহর নির্দেশ পালনে আমরা সিরিয়ার সব গোত্রকে সুয়েইদায় আসার আহ্বান জানাই। ইসলামের নৈতিকতা ও আরব জাতিসত্তা রক্ষা করতে আমরা কেবলমাত্র আত্মরক্ষার জন্য লড়ব।”
জাতিসংঘের উদ্বেগ
এদিকে চলমান এই রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয়। সংস্থাটির হাইকমিশনার ভল্কার তুর্ক বলেন, “এই সহিংসতা বন্ধ হওয়া জরুরি। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের আলোকে, সব মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সিরিয়ার কর্তৃপক্ষের প্রধান দায়িত্ব।”
সূত্র: আল জাজিরা, রয়টার্স, কান নিউজ