- ০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫
আন্তর্জাতিক ডেস্ক। PNN
সুদানের দক্ষিণাঞ্চলের পশ্চিম করদোফানে আল-নুহুদ শহরের প্রধান হাসপাতালটি এখন আর চিকিৎসাকেন্দ্র নয় এটি পরিণত হয়েছে সেনা ঘাঁটিতে। স্থানীয় চিকিৎসক সংগঠন সুদান ডক্টরস নেটওয়ার্ক জানায়, গত পাঁচ মাস আগে শহরটি দখল করার পর থেকে দ্রুত-সমর্থন বাহিনী (আরএসএফ) হাসপাতালের বড় একটি অংশকে সামরিক কমান্ড সেন্টার ও থাকার ব্যারাকে রূপান্তর করেছে।
সংগঠনটির দাবি, এই দখলদারিত্বের কারণে হাসপাতালটি এখন জনগণের চিকিৎসাসেবা দেওয়ার মতো অবস্থায় নেই। ফেসবুকে দেওয়া এক বিবৃতিতে তারা জানায়, সামরিক উদ্দেশ্যে স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র ব্যবহার করা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন লঙ্ঘন। এর ফলে সাধারণ মানুষের চিকিৎসা পাওয়ার অধিকার মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, হাসপাতালের চিকিৎসাকর্মীদের একটি অংশকে সেনাবাহিনীর সঙ্গে যোগসাজশের অভিযোগে হুমকির মুখে পড়তে হয়েছে। অনেকে প্রাণ বাঁচাতে এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ায় সেখানে এখন গুরুতর জনবল সংকট দেখা দিয়েছে। ফলে সীমিত সংখ্যক কর্মী নিয়ে হাসপাতালের বাকি সেবা টিকিয়ে রাখা কঠিন হয়ে পড়েছে।
২০২৩ সালের এপ্রিল থেকে সুদানের সেনাবাহিনী (এসএএফ) ও আরএসএফের মধ্যে তীব্র গৃহযুদ্ধ চলছে। আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক মধ্যস্থতার সব প্রচেষ্টাই ব্যর্থ হয়েছে। এই সংঘাতে এখন পর্যন্ত হাজারো মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে, আর ঘরছাড়া হয়েছে কয়েক মিলিয়ন মানুষ। জাতিসংঘ এটিকে বিশ্বের সবচেয়ে বড় মানবিক বিপর্যয় হিসেবে আখ্যা দিয়েছে।
পশ্চিম দারফুরের তাওইলা শহরে সম্প্রতি শত শত শিশু একা এসে পৌঁছেছে কোনো অভিভাবক ছাড়াই। নরওয়েজিয়ান রিফিউজি কাউন্সিল (এনআরসি) জানায়, এল-ফাশের শহর দখলের পর সংঘাত ও সহিংসতার ভয়ে অন্তত ৪০০ শিশু পালিয়ে এসেছে। প্রকৃত সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে।
গত ২৬ অক্টোবর ১৮ মাস অবরোধের পর এল-ফাশের দখল নেয় আরএসএফ। খাবার, ওষুধসহ প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম বন্ধ হয়ে যাওয়ায় শহরটি মানবিক সংকটে পড়েছিল। দখলের সময় আরএসএফের বিরুদ্ধে গণহত্যা, অপহরণ ও যৌন সহিংসতার অভিযোগ উঠেছে। সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধেও একই ধরনের অভিযোগ আছে।
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র দুই পক্ষকে একটি যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব দিয়েছে। তবে এখনো কোনো পক্ষ আনুষ্ঠানিকভাবে তা গ্রহণ করেনি। মার্কিন চাপের মুখে আরএসএফ একতরফাভাবে তিন মাসের যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করলেও পরদিন এসএএফ জানায় পশ্চিম করদোফানের বাবনুসায় তাদের ঘাঁটিতে নতুন হামলা হয়েছে, যা তারা প্রতিহত করেছে।
এরই মধ্যে সুদানের সেনাপ্রধান আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহান যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন যুদ্ধ থামাতে উদ্যোগ নেওয়ার জন্য। তিনি বলেন, “সুদানের মানুষ এখন ওয়াশিংটনের দিকে তাকিয়ে আছে।”
বারবার আলোচনায় বসা সত্ত্বেও বুরহান ও তার সাবেক উপ-সহযোগী, আরএসএফ নেতা মোহাম্মদ হামদান ‘হেমেদতি’ দাগালো কারোর সঙ্গেই স্থায়ী শান্তিচুক্তি হয়নি। তিন বছরে এই সংঘাত লাখো মানুষের জীবন ও ভবিষ্যৎ কেড়ে নিয়েছে। সৃষ্টি হয়েছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় দুর্ভিক্ষ ও বাস্তুচ্যুত জনগোষ্ঠীর সঙ্কট।
সুদানের এই অনিশ্চিত পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হয়ে উঠছে চিকিৎসাসেবা ভেঙে পড়া, গণহত্যার অভিযোগ এবং যুদ্ধবিরতির ব্যর্থ প্রচেষ্টায়।