- ০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫
আন্তর্জাতিক ডেস্ক। PNN
সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কের গ্রামীণ অঞ্চলে ইসরায়েলি বাহিনীর নতুন করে চালানো স্থল ও আকাশ অভিযান অন্তত ১৩ জনের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে। নিহতদের মধ্যে কয়েকজন শিশু রয়েছে বলে সিরিয়ার রাষ্ট্রীয় মাধ্যম জানিয়েছে। এ ঘটনায় আরও অন্তত ২৫ জন আহত হয়েছেন। অভিযানের সময় স্থানীয়দের প্রতিরোধে কয়েকজন ইসরায়েলি সেনাও আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
শুক্রবার ভোরে বেইত জিন্ন শহরের বিভিন্ন এলাকায় ইসরায়েলি বাহিনী হঠাৎ অভিযান শুরু করলে আতঙ্কে শতাধিক পরিবার বাড়িঘর ছেড়ে নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নেয়। সিরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই হামলাকে “সরাসরি যুদ্ধাপরাধ” বলে অভিহিত করেছে।
সিরিয়ান আরব নিউজ এজেন্সি (সানা) জানিয়েছে, নিহতদের মধ্যে দুই শিশুসহ পাঁচজনের মরদেহ কুনেইত্রার আল-সালাম হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। ইসরায়েলি ড্রোন হামলা ও গুলি বর্ষণ চলমান থাকায় সিরিয়ান সিভিল ডিফেন্স বেইত জিনে প্রবেশ করতে পারেনি। তারা জানিয়েছে, যে কোনো নড়াচড়াই সেখানে লক্ষ্যবস্তু হয়ে উঠছে।
স্থানীয় সূত্র বলছে, স্থল অভিযানে ব্যর্থ হয়ে ইসরায়েলি সেনারা ভারী গোলাবর্ষণ শুরু করে। এতে বহু বাসিন্দা হতাহত হয়। হামলার পর সিরিয়ার স্থানীয় প্রতিরোধ গোষ্ঠী ও সাধারণ মানুষের সঙ্গে ইসরায়েলি বাহিনীর সংঘর্ষও ঘটে।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী সামাজিকমাধ্যমে এক বিবৃতিতে জানায়, সংঘর্ষে তাদের ছয় সেনা আহত হয়েছে, যার মধ্যে তিনজনের অবস্থা গুরুতর। তারা দাবি করে, “অভিযান সম্পন্ন” হয়েছে এবং যাদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল, তারা “গ্রেপ্তার বা নিহত” হয়েছে।
তবে ইসরায়েলি গণমাধ্যম ইয়েদিওথ আহরোনোথ জানিয়েছে, অভিযানে অংশ নেওয়া ইসরায়েলি একটি ইউনিট বেইত জিন্নে প্রবেশের পর অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে। তাদের বের করে আনতেই বিমান হামলা ও গোলাবর্ষণের মাত্রা বাড়ানো হয়, যার ফলে বহু সিরীয় নাগরিক হতাহত হন।
১৯৬৭ সালের যুদ্ধের পর থেকে গোলান মালভূমির একটি বড় অংশ ইসরায়েলের দখলে। কিন্তু ২০২৪ সালে বাশার আল–আসাদের পতনের পর ইসরায়েল আরও ভেতরে প্রবেশ করে নতুন করে “বাফার জোন” বিস্তৃত করে। সিরিয়া অভিযোগ করছে এই আগ্রাসনের সুযোগ নিয়ে ইসরায়েল সীমান্তজুড়ে নতুন চেকপোস্ট, টহল ও গেট স্থাপন করেছে এবং সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে প্রায় ৪০ জন সিরীয়কে অপহরণ বা আটক করেছে।
ইসরায়েলের রাজনৈতিক বিশ্লেষক আকিভা এলদার আল জাজিরাকে বলেন, সীমান্তে যেকোনো অস্থিতিশীলতাকে ইসরায়েল “নতুন নিরাপত্তা অঞ্চল” তৈরির অজুহাত হিসেবে দেখছে।
২০২৪ সালের ডিসেম্বরের বিদ্রোহের মাধ্যমে আসাদ পতনের পর ক্ষমতায় আসা প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারাআর সরকারের জন্য এই হামলা নতুন সংকট তৈরি করেছে। দেশটি এখনও গৃহযুদ্ধের ক্ষত ও সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা সামলানোর চেষ্টা করছে। বৃহস্পতিবার বিদ্রোহের প্রথম বর্ষপূর্তিতে দেওয়া ভাষণে শারাআ সিরীয়দের পুনর্গঠনের পথে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানান। এর একদিন পরই ঘটে এই বড় হামলা।