Tuesday, October 14, 2025

রাশিয়াকে ট্রাম্পের ৫০ দিনের আল্টিমেটাম, ১০০% শুল্কের হুঁশিয়ারি


ফাইল ছবিঃ ডোনাল ট্রাম্প (সংগৃহীত । সিবিএস)

ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে একটি শান্তি চুক্তি না হলে আগামী ৫০ দিনের মধ্যে রাশিয়ার সঙ্গে ব্যবসা করা দেশগুলোর ওপর ১০০ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের প্রতি তার ক্রমবর্ধমান হতাশার মধ্যে ট্রাম্প এই "সেকেন্ডারি স্যাংশন" বা পরোক্ষ নিষেধাজ্ঞার পরিকল্পনা উন্মোচন করলেন।


সোমবার (১৪ জুলাই) ওভাল অফিসে ন্যাটোর মহাসচিব মার্ক রুটের সঙ্গে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প বলেন, "৫০ দিনের মধ্যে যদি কোনো চুক্তি না হয়, তাহলে আমরা পরোক্ষ শুল্ক আরোপ করব। এটি খুবই সহজ।" তিনি আরও বলেন, "এই শুল্ক হবে ১০০ শতাংশ।" ট্রাম্প স্পষ্ট করে জানান, "আমরা রাশিয়া নিয়ে খুব অসন্তুষ্ট, আমি অন্তত।"


তবে ট্রাম্পের এই হুমকিকে মঙ্গলবার উড়িয়ে দিয়েছেন সাবেক রুশ প্রেসিডেন্ট দিমিত্রি মেদভেদেভ। তিনি এক্স-এ (সাবেক টুইটার) লিখেছেন, "ট্রাম্প ক্রেমলিনকে একটি নাটুকে আল্টিমেটাম দিয়েছেন। বিশ্ব কাঁপছে, পরিণতি আশা করছে। যুদ্ধংদেহী ইউরোপ হতাশ। রাশিয়ার এতে কিছু যায় আসে না।"


ইউক্রেনে অস্ত্র সরবরাহ এবং ন্যাটোর ভূমিকা

ট্রাম্প আরও জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্র ন্যাটো দেশগুলোর কাছে অস্ত্র বিক্রির একটি চুক্তি সম্পন্ন করেছে, এবং এই দেশগুলো তাদের মজুত পূরণের জন্য ইউক্রেনে অস্ত্র পাঠাবে। গত সপ্তাহে ট্রাম্প ইউক্রেনে সামরিক সহায়তা পুনরায় শুরু করার ঘোষণা দেন, যেখানে তিনি ইউক্রেনের আত্মরক্ষার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন।


ট্রাম্প বলেন, "আমরা আজ একটি চুক্তি করেছি যেখানে আমরা তাদের (ন্যাটো দেশগুলোকে) অস্ত্র পাঠাবো এবং তারা সেগুলোর জন্য অর্থ পরিশোধ করবে। আমরা, যুক্তরাষ্ট্র, কোনো অর্থ নেব না। আমরা কিনছি না, তবে আমরা উৎপাদন করব এবং তারা সেগুলোর জন্য অর্থ দেবে।"


ন্যাটোর মহাসচিব রুট এই চুক্তিকে "খুব বড়" বলে অভিহিত করেছেন এবং জানান যে, গত সপ্তাহে ট্রাম্প তাকে ফোন করে এই সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছিলেন। রুট বলেন, "সিদ্ধান্ত হলো, ইউক্রেনের যা প্রয়োজন, তা তাদের থাকবে যাতে তারা রাশিয়ার বিরুদ্ধে নিজেদের রক্ষা করতে পারে, কিন্তু আপনারা (ইউরোপীয়রা) তার জন্য অর্থ পরিশোধ করবেন, যা সম্পূর্ণ যৌক্তিক।"

পুতিনের প্রতি ট্রাম্পের হতাশা


জানুয়ারিতে দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে রুশ নেতা পুতিনের সঙ্গে একাধিকবার ফোনালাপের পরও ট্রাম্প পুতিনের প্রতি তার হতাশা প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, "আমি সবসময় ফোন রেখে বলি, 'ভালো একটি ফোন আলাপ ছিল।' আর তারপরই কিয়েভ বা অন্য কোনো শহরে ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয় এবং আমি বলি, 'এটা অদ্ভুত।' তিন-চারবার এমন ঘটনার পর আপনি বুঝতে পারেন, কথার কোনো মানে নেই।"


পুতিনকে উদ্দেশ্য করে ট্রাম্প বলেন, "আমি বলতে চাই না যে তিনি একজন খুনি, কিন্তু তিনি একজন কঠিন মানুষ।" তিনি আরও যোগ করেন যে, পুতিন অন্যান্য প্রেসিডেন্টদের বোকা বানিয়েছেন, "কিন্তু আমাকে বোকা বানাতে পারেননি।" ট্রাম্পের মতে, "অবশেষে, কথা কথা নয়, এটি হতে হবে কাজ, এটি হতে হবে ফলাফল।"


ট্রাম্প আরও  বলেন, "আমাদের একটি দারুণ কথোপকথন হবে। আমি বলব: 'এটা ভালো, মনে হচ্ছে আমরা প্রায় কাছাকাছি চলে এসেছি,' আর তারপর তিনি কিয়েভে একটি বিল্ডিং উড়িয়ে দেবেন।" ট্রাম্প জানান, তিনি চারবার ভেবেছিলেন রাশিয়ার সঙ্গে একটি চুক্তি প্রায় সম্পন্ন হয়ে গেছে।


বিবিসি-এর খবরে বলা হয়েছে, পুতিনের সঙ্গে তার "সম্পর্ক শেষ" কিনা জানতে চাওয়া হলে ট্রাম্প উত্তর দেন: "আমি তার প্রতি হতাশ, কিন্তু তার সঙ্গে আমার সম্পর্ক শেষ নয়। তবে আমি তার প্রতি হতাশ।"


ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি সোমবার বিকেলে এক্স-এ জানিয়েছেন যে, তিনি ট্রাম্পের সঙ্গে কথা বলেছেন এবং ইউক্রেনকে "সমর্থন করার ইচ্ছার জন্য" তাকে ও যুক্তরাষ্ট্রকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। জেলেনস্কি লিখেছেন, "আমরা প্রেসিডেন্টকে রাশিয়ান হামলা থেকে জনগণকে আরও ভালোভাবে সুরক্ষা দিতে এবং আমাদের অবস্থান শক্তিশালী করতে প্রয়োজনীয় উপায় ও সমাধান নিয়ে আলোচনা করেছি। আমরা শান্তি অর্জনের জন্য সম্ভাব্য সবচেয়ে উৎপাদনশীলভাবে কাজ করতে প্রস্তুত।"


কংগ্রেসের কিছু সদস্য রাশিয়ার ওপর আরও কঠোর পরোক্ষ নিষেধাজ্ঞার জন্য চাপ দিচ্ছেন। রিপাবলিকান সিনেটর লিন্ডসে গ্রাহাম এবং ডেমোক্র্যাটিক সিনেটর রিচার্ড ব্লুমেন্থাল সিনেটে একটি বিলের প্রস্তাব করেছেন, যা প্রেসিডেন্টকে রাশিয়ার সঙ্গে ব্যবসা করা যেকোনো দেশের ওপর ৫০০% পর্যন্ত শুল্ক আরোপের ক্ষমতা দেবে। গ্রাহাম রবিবার "ফেস দ্য নেশন উইথ মার্গারেট ব্রেনান" অনুষ্ঠানে বলেন যে, এই নিষেধাজ্ঞাগুলো ট্রাম্পকে যুদ্ধ শেষ করার জন্য একটি "হ্যামার" দেবে।


সোমবার একটি যৌথ বিবৃতিতে গ্রাহাম এবং ব্লুমেন্থাল বলেন যে, প্রেসিডেন্টের ঘোষণা "পক্ষগুলোকে আলোচনার টেবিলে আনার জন্য একটি বাস্তব নির্বাহী হ্যামার।" তারা বলেন, "লক্ষ্য আরও বেশি শুল্ক ও নিষেধাজ্ঞা নয় – লক্ষ্য পুতিনকে শান্তি আলোচনার টেবিলে আসতে প্রলুব্ধ করা।" সিনেটররা আরও জানান যে, তারা রুশ তেল ও গ্যাস ক্রয়কারী দেশগুলোর ওপর ৫০০% পর্যন্ত শুল্ক বাস্তবায়নের জন্য তাদের আইন প্রণয়নের কাজ চালিয়ে যাবেন।


গ্রাহাম "ফেস দ্য নেশন" অনুষ্ঠানে আরও বলেন যে, যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনকে "অনেক দিয়েছে। আমরা তাদের অর্থ দিই, আমরা তাদের সামরিক সহায়তা দিই।" তবে তিনি উল্লেখ করেন যে, এমন একটি "পরিকল্পনা থাকতে পারে যেখানে আমেরিকা আমাদের ইউরোপীয় মিত্রদের কাছে প্রচুর পরিমাণে অস্ত্র বিক্রি শুরু করবে যা ইউক্রেনকে উপকৃত করতে পারে।"


সাবেক বাইডেন প্রশাসনের সময় বিদেশি সম্পদ জব্দ করার ক্ষমতা সংক্রান্ত বিলের নেতৃত্ব দেওয়া রিপাবলিকান প্রতিনিধি ফ্রেঞ্চ হিল রবিবার "ফেস দ্য নেশন" অনুষ্ঠানে বলেন যে, এখন পদক্ষেপ নেওয়ার সময়। হিল বলেন, "আমি মনে করি প্রেসিডেন্টের উচিত সেই জব্দকৃত সম্পদগুলো ইউক্রেনের সুবিধার জন্য একটি ট্রাস্ট অ্যাকাউন্টে স্থানান্তর করা।"

তবে কোনো মার্কিন প্রেসিডেন্ট এমন কোনো দেশের সার্বভৌম কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সম্পদ জব্দ করেননি যার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধ নেই। সাবেক মার্কিন কর্মকর্তারা জানিয়েছেন যে, বাইডেন প্রশাসন সেই ক্ষমতা ব্যবহার করতে অস্বীকার করেছিল ইউরোপীয় দেশগুলোর বিরোধিতার কারণে, কারণ এতে তাদের নিজস্ব ব্যাংকিং ব্যবস্থা এবং অর্থনীতিতে অপ্রত্যাশিত পরিণতি হতে পারত।

Super Admin

PNN

প্লিজ লগইন পোস্টে মন্তব্য করুন!

আপনিও পছন্দ করতে পারেন