- ১৩ অক্টোবর, ২০২৫
আন্তর্জাতিক ডেস্ক | PNN:
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্র যদি দীর্ঘপাল্লার টমাহক ক্ষেপণাস্ত্র সরবরাহ করে, তবে সেগুলো কেবলমাত্র রাশিয়ার সামরিক স্থাপনাগুলোকেই লক্ষ্য করে ব্যবহার করা হবে। তার এই মন্তব্য এমন সময়ে এসেছে, যখন ওয়াশিংটনের সম্ভাব্য এই সিদ্ধান্তে ক্রেমলিন তীব্র উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
রবিবার মার্কিন সংবাদমাধ্যম ফক্স নিউজ-এ প্রচারিত এক সাক্ষাৎকারে জেলেনস্কি বলেন, “আমরা এই অস্ত্র ব্যবহার করব শুধুমাত্র প্রতিরক্ষা ও সামরিক লক্ষ্য অর্জনের জন্য। আমাদের উদ্দেশ্য যুদ্ধ ছড়িয়ে দেওয়া নয়।” একই দিনে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গেও ফোনে কথা বলেন।
জেলেনস্কি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ লিখেছেন, “ট্রাম্পের সঙ্গে আমাদের আলোচনা ছিল অত্যন্ত ফলপ্রসূ। আমরা ইউক্রেনের আকাশ প্রতিরক্ষা, দীর্ঘপাল্লার সক্ষমতা এবং স্থিতিশীলতা বৃদ্ধির বিষয়ে কথা বলেছি।”
সোমবার ট্রাম্প বলেন, ইউক্রেনকে টমাহক ক্ষেপণাস্ত্র দেওয়ার আগে তিনি জানতে চান, সেগুলোর ব্যবহার কীভাবে হবে। তবে তিনি ইঙ্গিত দেন যে এ বিষয়ে তিনি “প্রায় সিদ্ধান্তে পৌঁছে গেছেন।” ট্রাম্প বলেন, “টমাহক একটি অসাধারণ অস্ত্র। রাশিয়ার জানা উচিত, যদি যুদ্ধ থামানো না হয়, আমি এই ক্ষেপণাস্ত্র ইউক্রেনের হাতে দিতে পারি।”
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ এই সম্ভাবনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। রুশ রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, “এটি অত্যন্ত বিপজ্জনক সময়। উত্তেজনা সব দিক থেকেই বেড়ে চলেছে। টমাহকের কিছু সংস্করণ পারমাণবিক ওয়ারহেড বহন করতে পারে—এই বিষয়টি আমরা উপেক্ষা করতে পারি না।”
ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ ইউক্রেনের জ্বালানি অবকাঠামোর ওপর রাশিয়ার সাম্প্রতিক হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন। জেলেনস্কির সঙ্গে ফোনালাপে তিনি বলেন, “যেভাবে গাজায় শান্তির আলো দেখা দিয়েছে, তেমনভাবে ইউক্রেনের যুদ্ধও শেষ হওয়া উচিত।”
জেলেনস্কি ফেসবুকে জানান, তিনি ম্যাক্রোঁকে আরও ক্ষেপণাস্ত্র ও বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা দেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন। তিনি বলেন, “বিশ্বের মনোযোগ এখন মধ্যপ্রাচ্য ও অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে ব্যস্ত, আর সেই সুযোগেই রাশিয়া হামলা জোরদার করছে।”
ইউক্রেনের দাবি, গত এক সপ্তাহে রাশিয়া ৩,১০০টিরও বেশি ড্রোন, ৯২টি ক্ষেপণাস্ত্র এবং প্রায় ১,৩৬০টি গ্লাইড বোমা নিক্ষেপ করেছে। রবিবার রাতে কিয়েভ অঞ্চলে এক বিদ্যুৎকেন্দ্রে হামলায় দেশটির বেসরকারি জ্বালানি কোম্পানি ডিটিইকে-এর দুই কর্মী আহত হন।
ইউক্রেনের প্রধানমন্ত্রী ইউলিয়া সভিরিদেনকো বলেন, “গত শুক্রবারের হামলা ছিল জ্বালানি খাতের ওপর অন্যতম বৃহত্তম কেন্দ্রীভূত আক্রমণ। এতে দেশের বহু অঞ্চলে বিদ্যুৎ বিভ্রাট সৃষ্টি হয়।” বিশ্লেষকরা বলছেন, টমাহক ক্ষেপণাস্ত্র ইস্যু এখন শুধু ইউক্রেন নয়, গোটা ইউরোপের নিরাপত্তা ভারসাম্যের জন্য এক নতুন উত্তেজনাপূর্ণ অধ্যায় খুলে দিয়েছে।