- ০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫
আন্তর্জাতিক ডেস্ক। PNN
রাশিয়ার নতুন আগ্রাসনের এক মাস পেরোতে না পেরোতেই পূর্ব ইউক্রেনের ঘিরে থাকা শহর পোকরভস্ক ও মিরনোহরাদকে রক্ষায় মরিয়া প্রতিরোধ গড়ে তুলেছেন ইউক্রেনীয় সেনারা। তিন দিক থেকে রুশবাহিনীর দখলচেষ্টা তীব্রতর হওয়ায় পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠছে।
এমন উত্তপ্ত প্রেক্ষাপটে বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রপতি ভলোদিমির জেলেনস্কি অভিযোগ করেছেন, রাশিয়ার আসলে যুদ্ধ শেষ করার কোনো আগ্রহ নেই। একই সময়ে ওয়াশিংটন ও মস্কোর মধ্যে ২৮ দফা একটি সম্ভাব্য শান্তি পরিকল্পনা খসড়া হয়েছে বলে যে খবর ছড়িয়েছে, সেটিও ইউক্রেনে উদ্বেগ বাড়িয়েছে। ওই প্রস্তাবে ইউক্রেনকে ভূখণ্ড ছাড়তে চাপ দেওয়া হয়েছে বলে দাবি কিয়েভের—যা বরাবরই তাদের জন্য ‘অগ্রহণযোগ্য’ বলে জানানো হয়েছে।
ইউক্রেন জানিয়েছে, রাশিয়া প্রায় দেড় লাখ সেনা মোতায়েন করেছে পোকরভস্ক–মিরনোহরাদ অঞ্চল দখলে নিতে। শহরদুটি এখন তিন দিক দিয়ে অবরুদ্ধ, সরবরাহলাইন কেবল পশ্চিম সীমান্ত দিয়ে খোলা রয়েছে। জেলেনস্কি মার্কিন সিনেটরদের জানিয়েছেন, পোকরভস্কেই রাশিয়া যুদ্ধ শুরুর পর থেকে সবচেয়ে বেশি প্রাণহানি দেখেছে—প্রায় ২৫ হাজার সৈন্য।
ইউক্রেনীয় বাহিনীর প্রতিরোধের একটি নাটকীয় গল্পও সামনে এসেছে। ১৫৫তম মেকানাইজড ব্যাটালিয়নের এক সেনা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়া একটি ভবনের ভেতরে ১০০ দিন বিচ্ছিন্ন অবস্থায় টিকে ছিলেন বলে জানা গেছে।
ইউক্রেনের জেনারেল স্টাফ প্রকাশিত ভিডিওতে দেখা গেছে, পোকরভস্কে নতুন বাহিনী পৌঁছাচ্ছে, যা শহরের উত্তর অংশে ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা জোরদার করছে। কমান্ডার-ইন-চিফ ওলেক্সান্দর সিরস্কি জানিয়েছেন, ছোট ছোট আক্রমণকারী রুশদল ও হালকা অস্ত্রে সজ্জিত যান ধ্বংসের লড়াই চলছে অবিরাম।
উভয় পক্ষই এখন আকাশে ড্রোনের আধিপত্য নিয়ে তীব্র লড়াইয়ে নেমেছে। জাতীয় গার্ডের প্রধান ওলেক্সান্দর পিভনেনকো ড্রোন উৎপাদন বাড়ানোর আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, রাশিয়ার অগ্রযাত্রা থামাতে ড্রোনই এখন প্রধান হাতিয়ার।
ওয়াশিংটনভিত্তিক ইনস্টিটিউট ফর দ্য স্টাডি অব ওয়ার (আইএসডব্লিউ) বলেছে, রুশ সেনারা শহরদুটি পুরোপুরি ঘিরে ফেলার চেষ্টা নাকি সরাসরি অনুপ্রবেশ—দুটি লক্ষ্যই একসঙ্গে অর্জন করতে গিয়ে অগ্রগতি ধীর হয়ে গেছে। দক্ষিণ দিক দিয়ে রুশ অনুপ্রবেশ কিছুটা এগোলেও উত্তরে প্রতিরোধ টিকে রয়েছে।
গত সপ্তাহে রাশিয়া খারকিভ, দিনিপ্রোপেত্রোভস্ক ও জাপোরিঝিয়া অঞ্চলের কয়েকটি গ্রামও দখল করেছে।
রাশিয়া সাম্প্রতিক এক সপ্তাহে প্রায় ১,৬০০ ড্রোন ও ৭৮টি ক্ষেপণাস্ত্র ছুঁড়েছে ইউক্রেনে। ইউক্রেনের দাবি, তারা ৮৬ শতাংশ ড্রোন ও তিন-চতুর্থাংশ ক্ষেপণাস্ত্র ধ্বংস করতে সক্ষম হয়েছে। তবুও বেসামরিক এলাকায় হামলা ভয়াবহ ক্ষতি ডেকে এনেছে। পশ্চিমাঞ্চলীয় তেরনোপিলে এক হামলায় কমপক্ষে ২৫ জন নিহত হয়েছেন, আহত হয়েছেন ৮০ জনের বেশি।
ইউক্রেন পাল্টা হামলায় নভোরোসিস্ক বন্দর, সারাতোভ ও রিয়াজান তেলশোধনাগারে আঘাত হেনেছে। তবে এসব হামলায় রাশিয়ার সামরিক জ্বালানি উৎপাদন কতটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তা নিশ্চিত নয়।
এদিকে তুরস্ক সফরে জেলেনস্কির সঙ্গে রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানের বৈঠকের মধ্যেই খবর ছড়ায়—মার্কিন দূত স্টিভ উইটকফ ২৮ দফা শান্তি প্রস্তাব নিয়ে কিয়েভে দেখা করতে এসেছেন। ইউক্রেন জানিয়েছে, এ প্রস্তাবে ‘ভূখণ্ড ছাড়’ এবং ‘সেনাবাহিনীর আকার কমানো’—দুটি বিষয়ই রাশিয়ার পুরোনো দাবি, এবং কিয়েভের কাছে সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য।