Friday, December 5, 2025

আফ্রিকায় বাড়ছে চীনের প্রভাব: যুক্তরাষ্ট্রের বয়কটে নতুন ভূরাজনৈতিক সমীকরণ


ছবিঃ যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এ বছরের জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনে অংশ নেবেন না, আর চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং তাঁর শীর্ষ দূতকে পাঠাবেন। দুই নেতা সর্বশেষ ২০১৯ সালে জাপানের ওসাকায় অনুষ্ঠিত জি-২০ সম্মেলনে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে অংশ নিয়েছিলেন। (সংগৃহীত । আল জাজিরা)

আন্তর্জাতিক ডেস্ক। PNN 

দক্ষিণ আফ্রিকার জোহানেসবার্গে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া এ বছরের জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্রের অনুপস্থিতি নতুন ভূরাজনৈতিক সমীকরণ তৈরি করেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ওয়াশিংটনের এই সিদ্ধান্ত আফ্রিকা মহাদেশে চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব বিস্তারে বাড়তি সুযোগ করে দিচ্ছে।

যুক্তরাষ্ট্র ঘোষণা করেছে, দক্ষিণ আফ্রিকায় শ্বেতাঙ্গ জনগোষ্ঠীর প্রতি ‘অন্যায় আচরণের’ অভিযোগ তুলে তারা দুই দিনের সম্মেলনে অংশ নেবে না। এই বক্তব্যকে ‘ভিত্তিহীন’ উল্লেখ করে দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসা বলেছেন, “বয়কট করে সমস্যার সমাধান হয় না। বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র যে ভূমিকা রাখার কথা, সেটিই তারা এড়িয়ে যাচ্ছে।”

এদিকে এ অবস্থার মধ্যেই চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের হয়ে দেশটির প্রধানমন্ত্রী লি কিয়াং জি-২০ সম্মেলনে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। শি জিনপিং সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিদেশ সফর কমিয়ে তার শীর্ষ কূটনীতিকদের বেশি দায়িত্ব দিয়েছেন।

বাকনেল ইউনিভার্সিটির রাজনীতিবিদ ঝিকুন ঝু বলেন, “যুক্তরাষ্ট্রের অনুপস্থিতি চীনের জন্য এক ধরনের কূটনৈতিক সুযোগ। যখন ওয়াশিংটন সরে দাঁড়ায়, তখন উপস্থিত দেশগুলো নেতৃত্ব খুঁজতে বেইজিং ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের দিকে তাকায়।”

তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, জি-২০ প্ল্যাটফর্মে যুক্তরাষ্ট্র না থাকায় চীনের উপস্থিতি বাড়লেও তা যুক্তরাষ্ট্র কেন্দ্রিক বৈশ্বিক ব্যবস্থাকে তৎক্ষণাৎ বদলে দেবে না। যুক্তরাজ্যের ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের অর্থনীতিবিদ জিং গু বলেন, “এতে চীন স্বয়ংক্রিয়ভাবে বৈশ্বিক নেতৃত্ব পেয়ে যায় না, তবে নিজেকে স্থিতিশীল ও নির্ভরযোগ্য সহযোগী হিসেবে উপস্থাপনের ক্ষেত্র তৈরি হয়।” 

এ বছরের জি-২০ প্রথমবারের মতো আফ্রিকান ইউনিয়নকে পূর্ণ সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করছে এবং আফ্রিকার মাটিতে আয়োজিত হচ্ছে সম্মেলনটি। দক্ষিণ আফ্রিকা জলবায়ু পরিবর্তন, ঋণ সংকট, টেকসই জ্বালানি ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রাখতে চায়—যা চীনের স্বার্থের সঙ্গেও সামঞ্জস্যপূর্ণ।

চীন বর্তমানে আফ্রিকার সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক অংশীদার। লি কিয়াংয়ের সাম্প্রতিক জাম্বিয়া সফর, ১.৪ বিলিয়ন ডলারের তানজানিয়া-জাম্বিয়া রেলওয়ে উন্নয়ন চুক্তি এবং চীনা সৌর প্যানেলের আফ্রিকায় ৬০ শতাংশ আমদানি বৃদ্ধি—সবই ইঙ্গিত দেয় যে মহাদেশটিতে চীনের অর্থনৈতিক অবস্থান আরও মজবুত হচ্ছে।

যুক্তরাষ্ট্র সাম্প্রতিক মাসগুলোতে APEC সম্মেলন ও COP30 থেকে দূরে থাকায় চীন নিজেকে ‘বহুপাক্ষিক বিশ্বব্যবস্থার রক্ষক’ হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা করছে। আফ্রিকান দেশগুলোর জন্য শুল্কমুক্ত সুযোগ ঘোষণা, টেকসই উন্নয়ন ও জলবায়ু উদ্যোগে সমর্থন দেওয়ার প্রতিশ্রুতি—সব মিলিয়ে চীন বিশ্বমঞ্চে যুক্তরাষ্ট্রের বিপরীত অবস্থানকে সামনে আনছে।

অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রোজমেরি ফুট বলেন, “যুক্তরাষ্ট্রের অনুপস্থিতি চীনকে নিজেকে দায়িত্বশীল এবং স্থিতিশীল শক্তি হিসেবে দেখানোর সুযোগ দিচ্ছে। তবে সম্মেলনের এজেন্ডায় চীন কতটা প্রভাব ফেলতে পারবে, তা এখনো অনিশ্চিত।”

বিশেষজ্ঞদের মতে, জি-২০–তে যুক্তরাষ্ট্রের স্থান খালি থাকলেও বৈশ্বিক কূটনীতির কেন্দ্রবিন্দু দখল করতে চীনের জন্য এখনো দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে হবে। তবুও এ বছরের সম্মেলন বেইজিংয়ের কৌশলগত দৃঢ়তা তুলে ধরার এক বড় সুযোগ হয়ে উঠতে পারে।

Super Admin

PNN

প্লিজ লগইন পোস্টে মন্তব্য করুন!

আপনিও পছন্দ করতে পারেন