Friday, December 5, 2025

পাম সানডের ট্র্যাজেডি: ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র বিস্ফোরণে ইউক্রেনের সুমিতে নিহত ৩৫, আহত ১৪৫


ছবিঃ তেতিয়ানা পোহরেলোভা এবং লিসা (সংগৃহীত । আল জাজিরা)

আন্তর্জাতিক ডেস্ক। PNN 

ইউক্রেনের সুমি শহরে চলতি বছরের এপ্রিল মাসে রুশ ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র বিস্ফোরণে ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয় একটি যাত্রীবাহী বাস ও আশপাশের রাস্তাঘাট। সে দিন পাম সানডেতে মা ও ছেলের স্বাভাবিক কেনাকাটার যাত্রা মুহূর্তেই রূপ নেয় মৃত্যুকূপে। বিস্ফোরণের পর বাসের জানালা ভেঙে ১৪ বছর বয়সী মাকসিম প্রাণ বাঁচাতে দৌড় দেয় পেছনে পড়ে থাকে রক্তাক্ত অবস্থায় তার মা নাতালিয়া তেনিৎসকা।

সীমান্ত থেকে মাত্র ২০ মাইল দূরে সুমি শহরে বাসা। নতুন স্কুল ফটোশুটের পোশাক কিনতে বের হয়েছিলেন তাঁরা। সেদিনের সেই বাস রুট ৬২ শহরের বিশ্ববিদ্যালয়, শপিং মল ও বিমানবন্দরকে সংযুক্ত করে। ভাড়া মাত্র ২০ সেন্ট। তবে সেদিন ভিড় ছিল বেশি, আর ঠিক সেইসময় রুশ বাহিনীর দুটি শক্তিশালী ক্ষেপণাস্ত্র আকাশ চিরে শহরের দিকে ছুটে আসে। এক ক্ষেপণাস্ত্র সুমি স্টেট ইউনিভার্সিটির কনফারেন্স সেন্টার ভেঙে চুরমার করে, আরেকটি ফেটে যায় পিটার অ্যান্ড পল স্ট্রিটে বাসের ঠিক সামনে।

বিস্ফোরণের মুহূর্তের বর্ণনা দিতে গিয়ে নাতালিয়া বলেন, “হঠাৎ অন্ধকার হয়ে গেল। কান বাঝতে লাগল। চারদিকে শুধু চিৎকার ‘দরজা খোলো! বের হও"

ক্ষেপণাস্ত্রটি বাসের সামনে ফেটে যাওয়ায় সামনের সারির যাত্রীরা পিছনের যাত্রীদের জন্য মানবঢালের মতো কাজ করেন। সামনের দিকের বহু লোক ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান। রাস্তায় থাকা পথচারীরাও রেহাই পাননি। বিখ্যাত পিয়ানো বাদক ওলেনা কোগুত (৪৭) শরীরে শার্পনেল লাগার পর ভিডিওতে দেখা যায় ধীরে ধীরে হাঁটতে হাঁটতে তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। পরে হাসপাতালে নেওয়ার আগেই মারা যান। মোট ৩৫ জন বেসামরিক, এর মধ্যে দুই শিশু, মারা যান। ১৪৫ জন আহত হন।

সুমি অঞ্চলের প্রসিকিউটর ভিতালি দোভহাল ঘটনাস্থলে গিয়ে বলেন, “চারপাশে কাদা, ধুলো, রক্ত আর লাশ, বিশৃঙ্খলা ছাড়া কিছুই ছিল না। তিনি এ হামলাকে স্পষ্ট যুদ্ধাপরাধ বলে উল্লেখ করেন।

ইউক্রেনে ২০২২ সালের আগ্রাসনের পর থেকে বেসামরিক লক্ষ্যবস্তুতে হামলার ঘটনা হাজারে হাজারে। দেশের প্রসিকিউটর জেনারেলের হিসেবে এখন পর্যন্ত ১ লাখ ৭৮ হাজারের বেশি যুদ্ধাপরাধ তদন্ত চলছে।

স্কুল, বাড়ি, হাসপাতাল, খেলার মাঠ সবই হামলার টার্গেট হয়েছে। শিশু অপহরণ, জোরপূর্বক রুশিকরণ, পরিবার থেকে আলাদা করা এসব অভিযোগে ২০২৩ সালে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানাও জারি করে।

আমেরিকার বৈশ্বিক ন্যায়বিচারবিষয়ক সাবেক রাষ্ট্রদূত বেথ ভ্যান শ্যাক বলেন, “যেসব এলাকায় কোনো সামরিক লক্ষ্য নেই, সেখানেও হামলা হচ্ছে। এসব হামলার উদ্দেশ্য সন্ত্রাস সৃষ্টি ও জনগণকে দমিয়ে ফেলা।

রুশ নেতৃত্ব হয়তো আন্তর্জাতিক বিচারের মুখোমুখি হবেন না, তবে ইউক্রেন যুদ্ধাপরাধীদের বিরুদ্ধে বিচার চালিয়ে যাচ্ছে। এখন পর্যন্ত ২১১ জনকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে, যদিও অধিকাংশই পলাতক।

দোভহাল জানান, ক্ষেপণাস্ত্রের খণ্ডাংশে থাকা সিরিয়াল নম্বর, ইঞ্জিনের টুকরো, ড্রোনের অবশিষ্টাংশ সবই ভবিষ্যৎ বিচারের জন্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। তিনি দাবি করেন, সুমি শহরের ওই পাম সানডে হামলার পেছনে থাকা রুশ ইউনিটগুলো শনাক্ত করা হয়েছে।

রাশিয়া দাবি করেছে, তারা নাকি সেদিন ওই কনফারেন্স সেন্টারে অনুষ্ঠিত একটি সামরিক অনুষ্ঠানের দিকে হামলা চালিয়েছিল। তবে দোভহাল বলেছিলেন, “একজন সৈন্যও মারা যায়নি, কেবল বেসামরিক মানুষ।”কয়েক মাস পেরিয়েও পোহরেলোভার চোখে আতঙ্কের ছাপ স্পষ্ট। তবুও তিনি প্রতিশোধ চান না।“আমি তাদের মৃত্যু চাই না,” তিনি বলেন। “শুধু চাই, তারা বুঝুক ভয়ে বাঁচা কাকে বলে। আর চাই এই যুদ্ধ শেষ হোক। মানুষ যেন আবার নিজের ঘরে ফিরতে পারে।”

তথ্যসুত্রঃ সিবিএস নিউজ 

Super Admin

PNN

প্লিজ লগইন পোস্টে মন্তব্য করুন!

আপনিও পছন্দ করতে পারেন