Friday, December 5, 2025

অভ্যুত্থান ষড়যন্ত্রে দোষী: ২৭ বছরের কারাদণ্ড শুরু করলেন ব্রাজিলের সাবেক প্রেসিডেন্ট বলসোনারো


ছবিঃ ৭০ বছর বয়সী বলসোনারোকে সেপ্টেম্বরে দোষী সাব্যস্ত করা হয় ক্ষমতায় টিকে থাকতে পরিচালিত একটি ষড়যন্ত্রের নেতৃত্ব দেওয়ার অভিযোগে। (সংগৃহীতঃ রয়টার্স/দিয়েগো হেরকুলানো)

আন্তর্জাতিক ডেস্ক। PNN 

ব্রাজিলের সাবেক ডানপন্থী প্রেসিডেন্ট জাইর বলসোনারোর বিরুদ্ধে অভ্যুত্থান ষড়যন্ত্র মামলায় সুপ্রিম কোর্টের চূড়ান্ত রায়ে ২৭ বছরের কারাদণ্ড কার্যকর করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। মঙ্গলবার দেশের সর্বোচ্চ আদালত মামলার সব আপিল প্রক্রিয়া শেষ করে এই সিদ্ধান্ত জানায়। এক জরুরি আদেশে বিচারপতি আলেক্সান্দ্রে দে মোরায়েস বলসোনারোকে ব্রাসিলিয়ার ফেডারেল পুলিশ সদর দপ্তরে দণ্ড ভোগ শুরু করার নির্দেশ দেন, যেখানে তিনি ইতোমধ্যে অন্য একটি মামলায় আটক অবস্থায় আছেন।

বলসোনারোর বিরুদ্ধে অভিযোগ তিনি ২০২২ সালের নির্বাচনে পরাজয়ের পর বর্তমান প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিলভার সরকারের বিপক্ষে সামরিক হস্তক্ষেপে ইন্ধন দিয়ে গণতান্ত্রিক কাঠামো ভাঙার ষড়যন্ত্র করেছিলেন। এ ছাড়া ট্রাম্প প্রশাসনের সহায়তা চাওয়ার অভিযোগেও তিনি আগে গৃহবন্দি ছিলেন।

রায় ঘোষণার পর দেশটির প্রগতিশীল নেতারা একে ব্রাজিলের রাজনৈতিক ইতিহাসের মোড় ঘোড়ানো মুহূর্ত হিসেবে অভিহিত করেন। কংগ্রেসম্যান লিন্ডবার্গ ফারিয়াস বলেন, “আমাদের দেশে প্রথমবারের মতো একজন সাবেক প্রেসিডেন্টকে অভ্যুত্থানচেষ্টার দায়ে কারাবন্দি করা হচ্ছে। এটি গণতন্ত্রকে সুরক্ষিত রাখার শক্তিশালী বার্তা।”

অন্যদিকে বলসোনারোর আইনজীবীরা অভিযোগ তুলেছেন যে আদালত যথাযথ সময় না দিয়েই বিচার প্রক্রিয়া দ্রুত শেষ করেছে। তারা রায় পুনর্বিবেচনার দাবি অব্যাহত রাখার কথাও জানিয়েছেন।

মঙ্গলবার প্রথমবারের মতো গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলে বলসোনারোর ছেলে, কংগ্রেসম্যান এদুয়ার্দো বলসোনারো, তার বাবার বিচারকে “মানসিক নির্যাতন” ও “আগে থেকেই সাজানো নাটক” বলে অভিহিত করেন। অন্য ছেলে কার্লোস বলসোনারো কারাগারে গিয়ে বাবার সঙ্গে দেখা করে জানান,
“তিনি মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন।”

যদিও বলসোনারো ঘোষণা দিয়েছেন তিনি ২০২৬ সালের নির্বাচনে আবার প্রার্থী হবেন, তবে তার রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ এখন অনিশ্চিত। বিশেষজ্ঞদের মতে, ক্রমাগত আইনি জটিলতা, জনসমর্থনের পতন এবং তার স্বাস্থ্য নিয়ে নতুন প্রশ্ন সব মিলিয়ে ডানপন্থী শিবিরে নেতৃত্ব সংকট আরও প্রকট হয়ে উঠছে।

ব্রাজিলের রাজনৈতিক বিশ্লেষক পেদ্রো ফাসোনি আরুদা বলেন, “যিনি একসময় নিজেকে শক্তিশালী নেতা হিসেবে তুলে ধরতেন, আজ নিজেই স্বাস্থ্য সংকটকে দায় দেখাচ্ছেন। এটি তার ভাবমূর্তিকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে।”

দীর্ঘদিন বলসোনারোর প্রতি প্রকাশ্য সমর্থন দেখালেও সাম্প্রতিক ঘটনাবলিতে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ধীরে ধীরে দূরত্ব তৈরি করেছেন। শনিবার এক মন্তব্যে তিনি বলসোনারোর গ্রেপ্তারকে ‘দুঃখজনক’ বলে উল্লেখ করলেও আগের মতো ঢালাও সমর্থন আর দেননি বলে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের ধারণা।

২০২৩ সালে কংগ্রেস ভবনে হামলার ঘটনায় যেভাবে বলসোনারোর সমর্থকেরা রাস্তায় নেমেছিলেন, এবার তার তুলনায় দৃশ্যপট ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন। মঙ্গলবার ফেডারেল পুলিশের ভবনের সামনে হাতে গোনা কয়েকজন সমর্থক ছাড়া উল্লেখযোগ্য কোনো বিক্ষোভ দেখা যায়নি।

তবুও বলসোনারোর ঘনিষ্ঠ সহযোগীরা বলছেন, তিনি এখনো ডানপন্থী রাজনীতির গুরুত্বপূর্ণ প্রতীক। ডানপন্থী সিনেটর দামারেস আলভেসের ভাষায়, “তিনি দুর্বল নন, শুধু অসুস্থ। রাজনীতিতে তার প্রভাব এখনো অটুট।”

তথ্যসূত্রঃ রয়টার্স

Super Admin

PNN

প্লিজ লগইন পোস্টে মন্তব্য করুন!

আপনিও পছন্দ করতে পারেন