- ০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫
আন্তর্জাতিক ডেস্ক। PNN
গাজা সিটির আব্বাস এলাকায় একটি দগ্ধ গাড়ির পাশেই পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা ধ্বংসস্তূপ সরাচ্ছিলেন ফায়েক আজুর। শনিবার দুপুরে ইসরায়েলি বাহিনীর লক্ষ্যভেদের মুহূর্তে তিনি ঘর থেকে বের হয়ে কাছের সবজি দোকানে যাচ্ছিলেন। কয়েক সেকেন্ডের ব্যবধানে তিনি বেঁচে গেলেও নতুন করে শুরু হওয়া হামলার আতঙ্ক পিছু ছাড়ছে না তাঁর পরিবারের।
ফায়েক বলেন, “আমি অলৌকিকভাবে বেঁচে গেছি। ঠিক রাস্তাটা পেরিয়েই ছিলাম।” ঘটনাস্থলে ফিরে তিনি তাঁর পরিবারকে শারীরিকভাবে নিরাপদ অবস্থায় পেলেও তিন কন্যার আতঙ্ক সামলাতে হিমশিম খেতে হয়। অক্টোবরের যুদ্ধবিরতি সত্ত্বেও এ ধরনের হামলা যে পরিস্থিতি স্থিতিশীল করেনি, তা আবারও প্রমাণ হলো।
ফায়েকের ভাষায়, “এটা কোনো যুদ্ধবিরতি নয় এ যেন প্রতিদিন নতুন করে দুঃস্বপ্ন।” গাজা স্ট্রিপজুড়ে শনিবার ইসরায়েলি বাহিনীর বিভিন্ন আক্রমণে ২৪ জন নিহত হয়, যার পাঁচজন ফায়েকের আব্বাস এলাকার প্রতিবেশী।
ইসরায়েল হামাসের যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের অভিযোগ তুললেও ফিলিস্তিনিরা বলছে, যুদ্ধবিরতি শুরুর পর থেকে বারবার আক্রমণ করেছে ইসরায়েলই। বাড়ছে হতাহত মানুষের সংখ্যা, ভাঙছে যুদ্ধবিরতির অর্থবহতা।
ফায়েকের পরিবার গত দুই বছরে অসংখ্যবার বাস্তুচ্যুত হয়েছে। ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারির হামলায় তাঁর বাবা–মা, চাচাতো ভাই–বোনসহ মোট ৩০ জন আত্মীয় নিহত হয়েছেন। সেই শোকে এখনো কাতর তাঁর পরিবার। স্ত্রী গুরুতর আহত হয়ে একটি আঙুল হারিয়েছেন।“গাজায় জীবন ৯৯ শতাংশ মৃত। যুদ্ধবিরতির সামান্য শান্তিও এখন ধ্বংসস্তূপে চাপা পড়ে গেছে,” বলেন ফায়েক। গাজা সিটির পূর্বাঞ্চলে তাঁদের মূল বাড়িটি এখন সম্পূর্ণ ইসরায়েলি নিয়ন্ত্রণাধীন অঞ্চলে, যেখানে ফিলিস্তিনিদের প্রবেশ নিষিদ্ধ। ফলে পরিবারটি তাঁবু আর অস্থায়ী আশ্রয়ের মধ্যেই কাটাচ্ছে প্রতিদিন।
গাজাকে ঘিরে ভবিষ্যৎ পরিস্থিতি নিয়ে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আলোচনা চললেও স্থানীয় নাগরিকদের কাছে তা এখন অচিন্তনীয় এক অপেক্ষা। যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবিত মধ্যবর্তী প্রশাসন, তথাকথিত স্থিতিশীলতা মিশন কিংবা পুনর্গঠন সবই বহু দূরের সম্ভাবনা।
বিশ্লেষকদের মতে, ইসরায়েল যুদ্ধবিরতির দ্বিতীয় ধাপে যেতে অনাগ্রহী। রাজনৈতিক চাপ, নিজস্ব নিরাপত্তা কৌশল ও অভ্যন্তরীণ টানাপোড়েনের কারণে গাজাকে স্থবির অচলাবস্থায় আটকে রাখতে চাইছে তারা।৩২ বছর বয়সী রাগদা ওবেইদ জানালেন, “যুদ্ধ না থাকলেও আমাদের জীবন যেন প্রতিদিন যুদ্ধেরই সমান। পানি–খাবার খুঁজতে খুঁজতেই দিন শেষ হয়।”গাজা সিটির পশ্চিমাংশে তাঁবুতে থাকা রাগদা সাম্প্রতিক হামলার ভয়াবহ মুহূর্ত বর্ণনা করে বলেন, “ধোঁয়া আর চিৎকার এ দৃশ্য আমাকে প্রথম দিনের যুদ্ধের মতোই ভীত করেছে।”