- ১৩ অক্টোবর, ২০২৫
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে মনোনীত করেছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু, যা হোয়াইট হাউসের পক্ষ থেকে উষ্ণ অভ্যর্থনা পেয়েছে। এই মনোনয়ন এসেছে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর প্রধান ফিল্ড মার্শাল আসিম মুনিরের পক্ষ থেকেও, যা ট্রাম্পের জন্য দ্বিতীয় উচ্চ-প্রোফাইল সুপারিশ।
মঙ্গলবার (৮ জুলাই) হোয়াইট হাউসের প্রেস সচিব ক্যারোলিন লিভিট এক সংবাদ সম্মেলনে নিশ্চিত করেছেন যে, হোয়াইট হাউস পাকিস্তানের সেনাপ্রধানের সুপারিশকে স্বাগত জানিয়েছে।
সোমবার (স্থানীয় সময়) হোয়াইট হাউসে এক বৈঠকের সময় নেতানিয়াহু নিজেই ট্রাম্পের হাতে নোবেল মনোনয়নের আবেদনপত্র তুলে দেন। মঙ্গলবারের প্রতিবেদন অনুযায়ী, নেতানিয়াহু মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠায় ট্রাম্পের অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ এই মনোনয়ন দিয়েছেন। চিঠিতে সুনির্দিষ্টভাবে এই অঞ্চলে শান্তি প্রতিষ্ঠায় ট্রাম্পের ভূমিকার কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
নেতানিয়াহু সাংবাদিকদের বলেন, "গাজা একটি উন্মুক্ত স্থান হওয়া উচিত এবং মানুষকে স্বাধীনভাবে পছন্দ করার সুযোগ দেওয়া উচিত। আমরা এমন দেশগুলোকে খুঁজে বের করার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে খুব ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছি, যারা সবসময় যা বলে তা বাস্তবায়ন করতে চাইবে। ফিলিস্তিনিদের একটি উন্নত ভবিষ্যৎ দিতে তারা কাজ করবে। আমি মনে করি, আমরা বেশ কয়েকটি দেশ খুঁজে বের করার কাছাকাছি চলে এসেছি।"
নোবেল মনোনয়নের চিঠি উপস্থাপনের আগে নেতানিয়াহু ট্রাম্পকে বলেন, "আমি কেবল সমস্ত ইসরায়েলিদের নয়, বরং ইহুদি জনগণের পক্ষ থেকে কৃতজ্ঞতা ও প্রশংসা প্রকাশ করতে চাই। আপনি (ট্রাম্প) এটির যোগ্য।" জবাবে ট্রাম্প বলেন, "বিশেষ করে আপনার কাছ থেকে আসা কথাটি খুবই অর্থবহ।"
এটি ট্রাম্পের জন্য দ্বিতীয় "উচ্চ-প্রোফাইল" মনোনয়ন। গত মাসেই পাকিস্তান ঘোষণা করেছিল যে তারা ট্রাম্পকে একই পুরস্কারের জন্য সুপারিশ করবে। এছাড়া, রিপাবলিকান আইনপ্রণেতা বাডি কার্টারও ট্রাম্পকে নোবেল পুরস্কারের জন্য মনোনীত করেছেন।
বাডি কার্টার নোবেল শান্তি পুরস্কার কমিটিকে লেখা এক চিঠিতে উল্লেখ করেন যে, ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে সশস্ত্র সংঘাতের অবসান ঘটাতে এবং বিশ্বের সবচেয়ে বিধ্বংসী পারমাণবিক অস্ত্র অর্জন থেকে বিরত রাখতে ট্রাম্পের "অসাধারণ ও ঐতিহাসিক ভূমিকা" রয়েছে।
কার্টারের চিঠিতে বলা হয়েছে, "প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের হস্তক্ষেপ দুই দেশের যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে পৌঁছানোর ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল, যা অনেকেই অসম্ভব বলে মনে করেছিল। ট্রাম্প ইরানের পারমাণবিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা রোধ করার জন্য এবং ইরান যাতে পারমাণবিক অস্ত্র অর্জনে সক্ষম না হয়, তা নিশ্চিত করার জন্য সাহসী, সিদ্ধান্তমূলক পদক্ষেপ নিয়েছিলেন।"
ক্যারোলিন লিভিট তার সংবাদ সম্মেলনে বলেন, "প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের এই মনোনয়ন ভারত ও পাকিস্তানের সম্ভাব্য পারমাণবিক যুদ্ধ ঠেকাতে তার কূটনৈতিক জয় প্রমাণ করেছে।"
গত এপ্রিলের শেষ দিকে ভারতের জাম্মু ও কাশ্মীর রাজ্যের পেহেলগামে হামলায় ২৬ পর্যটক নিহত হওয়ার পর গত ৭ মে ভারত পাকিস্তান ভূখণ্ডে 'অপারেশন সিঁদুর' নামে বিমান অভিযান চালায়। এর দু'দিন পর পাকিস্তানও ভারতের সামরিক স্থাপনা লক্ষ্য করে পাল্টা 'অপারেশন বুনিয়ান উল মারসুস' পরিচালনা করে।
এই পাল্টাপাল্টি সংঘাত আরও গুরুতর আকার ধারণ করার আগেই ডোনাল্ড ট্রাম্প কূটনৈতিক হস্তক্ষেপ করেন। তার নিরলস প্রচেষ্টাতেই দিল্লি ও ইসলামাবাদ যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়।
এই প্রেক্ষাপটে, গত ২১ জুন ট্রাম্পের আমন্ত্রণে হোয়াইট হাউসে যান পাকিস্তানের সেনাপ্রধান ফিল্ড মার্শাল আসিম মুনির। সেখানে তিনি ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠক ও মধ্যাহ্নভোজে অংশ নেন। দেশে ফিরে তিনি মন্তব্য করেন যে, বৈশ্বিক শান্তিতে অবদান রাখার জন্য ট্রাম্পকে নোবেল পুরস্কার দেওয়া উচিত। পরবর্তীতে ইসলামাবাদ নরওয়ের নোবেল কমিটির কাছে লিখিতভাবে ট্রাম্পকে শান্তিতে নোবেলের জন্য সুপারিশ পাঠায়।