- ০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫
আন্তর্জাতিক ডেস্ক | PNN
নাইজেরিয়ার পশ্চিমাঞ্চলে আবারও বড় ধরনের অপহরণের ঘটনা ঘটেছে। শুক্রবার ভোরে সশস্ত্র হামলাকারীরা নাইজার স্টেটের আগওয়ারা জেলার পাপিরি এলাকার সেন্ট ম্যারিজ ক্যাথলিক স্কুলে হামলা চালিয়ে দুই শতাধিক শিক্ষার্থীকে তুলে নিয়ে গেছে। ঘটনাটি সাম্প্রতিক বছরগুলোর মধ্যে অন্যতম বৃহৎ স্কুল অপহরণ বলে মনে করছেন নিরাপত্তা বিশ্লেষকেরা।
খ্রিস্টান অ্যাসোসিয়েশন অব নাইজেরিয়া (CAN) জানায়, হামলায় মোট ২১৫ জন শিক্ষার্থী ও ১২ জন শিক্ষককে অপহরণ করা হয়েছে। সংগঠনটির নাইজার স্টেট শাখার মুখপাত্র ড্যানিয়েল আতোরি স্থানীয় পরিবারগুলোর সঙ্গে দেখা করে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেছেন।
তিনি বলেন, “অভিভাবকরা ভেঙে পড়েছেন। আমরা শিশুদের নিরাপদে ফেরানোর জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি।”
নাইজার স্টেট পুলিশ জানিয়েছে, ভোরের আগেই হামলা ঘটে এবং সেনা ও বিশেষ বাহিনী দ্রুত ঘটনাস্থলে পাঠানো হয়। স্যাটেলাইট চিত্রে দেখা যায়—সেন্ট ম্যারিজ সেকেন্ডারি স্কুলের বিশাল কমপ্লেক্সটি পাশের একটি প্রাইমারি স্কুলের সঙ্গে যুক্ত, যেখানে ৫০টিরও বেশি ভবন রয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, স্কুলটিতে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ছিল না। ক্যাথলিক ডায়োসিস অব কনটাগোরা জানিয়েছে, হামলার সময় দায়িত্বে থাকা নিরাপত্তারক্ষীকে গুলিবিদ্ধ করে গুরুতর আহত করা হয়।
৬২ বছর বয়সী দাউদা চেকুলা বলেন, তার সাত থেকে দশ বছর বয়সী চার নাতি-নাতনি নিখোঁজ। “যারা পালাতে পেরেছে তারা ছড়িয়ে পড়েছে। বাকিদের বন্দুকধারীরা জঙ্গলের দিকে নিয়ে গেছে,” তিনি জানিয়েছেন।
নাইজার স্টেট সরকারের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা জানান—আগেই এলাকাটিতে হামলার ঝুঁকি বাড়ার বিষয়ে গোয়েন্দা তথ্য পাওয়া গিয়েছিল। তা সত্ত্বেও স্কুল কর্তৃপক্ষ সরকারের অনুমতি ছাড়াই আবার কার্যক্রম শুরু করে।
অপহরণের প্রেক্ষাপটে নাইজেরিয়ার প্রেসিডেন্ট বোলা টিনুবু দক্ষিণ আফ্রিকায় জি–২০ সম্মেলনে যাওয়ার নির্ধারিত সফর বাতিল করেছেন। তাঁর পরিবর্তে ভাইস প্রেসিডেন্ট কাশিম শেট্টিমা সম্মেলনে যোগ দেবেন।
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নাইজেরিয়ায় খ্রিস্টানদের ওপর ‘লক্ষ্যভিত্তিক হামলা’ হচ্ছে বলে মন্তব্য করে সামরিক পদক্ষেপের হুমকি দেন। নাইজেরিয়া সরকার অবশ্য এই দাবি প্রত্যাখ্যান করেছে এবং জানিয়েছে—সশস্ত্র গোষ্ঠীর হামলায় মুসলিম সম্প্রদায়ই বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
এ ঘটনা ঘটল মাত্র কয়েক দিন পর, যখন কেব্বি স্টেটের একটি স্কুল থেকে ২৫ জন ছাত্রীকে অপহরণ করা হয়। তাদের একজন পরে পালিয়ে এলেও ২৪ জন এখনও নিখোঁজ। ঘটনার পর দেশজুড়ে নিরাপত্তা বাহিনী উচ্চ সতর্কতায় রয়েছে।
এদিকে, পশ্চিম নাইজেরিয়ার আরেকটি গির্জায় মঙ্গলবার বন্দুকধারীদের হামলায় দুইজন নিহত হন এবং অনেক উপাসককে অপহরণ করা হয়।
কোয়ারা স্টেটে অপহৃত ৩৮ উপাসকের মুক্তির জন্য অপহরণকারীরা মাথাপিছু প্রায় ১০০ মিলিয়ন নাইরা (প্রায় ৬৯ হাজার ডলার) মুক্তিপণ দাবি করেছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় চার্চ কর্তৃপক্ষ।
নাইজার স্টেট পুলিশ জানায়, সেনাবাহিনী ও ট্যাকটিক্যাল ইউনিট জঙ্গলে অভিযান চালাচ্ছে। এখন পর্যন্ত উদ্ধার বা যোগাযোগ–সংক্রান্ত কোনো অগ্রগতির তথ্য পাওয়া যায়নি।
অভিভাবকদের অপেক্ষা—তাদের সন্তানরা যেন নিরাপদে ফিরে আসে। আর দেশজুড়ে আতঙ্ক—এ ধরনের হামলার শেষ কোথায়?