Friday, December 5, 2025

জাতিসংঘে মার্কিন খসড়ায় ভোট দিলেও শর্তজুড়ে দিল ইসলামাবাদ


ছবিঃ মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তাকিয়ে আছেন, আর পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ বক্তব্য দিচ্ছেন ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে গাজা যুদ্ধবিরতির প্রথম ধাপের চুক্তি স্বাক্ষরের পর। গাজা যুদ্ধের অবসান নিয়ে অনুষ্ঠিত শীর্ষ সম্মেলনটি ১৩ অক্টোবর ২০২৫-এ মিশরের শার্ম আল-শেখ শহরে অনুষ্ঠিত হয়। (সংগৃহীত । আল জাজিরা । ইভলিন হকস্টিন/রয়টার্স)

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | PNN

ইসলামাবাদ: গাজার জন্য একটি আন্তর্জাতিক ট্রানজিশনাল প্রশাসন ও ইন্টারন্যাশনাল স্ট্যাবিলাইজেশন ফোর্স (ISF) গঠনের পথ তৈরি করে দিতে সোমবার জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে যুক্তরাষ্ট্র প্রস্তাবিত যে খসড়াটি গৃহীত হয়েছে, সেটির পক্ষে ভোট দিলেও বিষয়টি নিয়ে পাকিস্তান অবস্থান নিয়েছে বেশ সতর্কতার সঙ্গে।

সভাপতিত্বকারী দেশ হিসেবে পাকিস্তানের স্থায়ী প্রতিনিধি আসিম ইফতিখার আহমেদ যুক্তরাষ্ট্রকে ধন্যবাদ জানালেও পরিষ্কার ভাষায় বলেন, “গুরুত্বপূর্ণ কিছু প্রস্তাব আমাদের পক্ষ থেকে দেওয়া হলেও তা চূড়ান্ত নথিতে রাখা হয়নি।”

খসড়াটিতে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনের ‘বিশ্বস্ত রোডম্যাপ’ উল্লেখ করা হলেও, পাকিস্তান মনে করে—এটি এখনো অস্পষ্ট; বিশেষ করে জাতিসংঘের ভূমিকা, নতুন প্রস্তাবিত বোর্ড অব পিস (BoP) এবং ISF-এর কার্যনির্বাহী কাঠামো নিয়ে পরিষ্কার ব্যাখ্যা প্রয়োজন।

তবু যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ২০ দফা পরিকল্পনার প্রতি পাকিস্তানের পূর্ব সমর্থন এবং মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য জোট-বান্ধব রাষ্ট্রের সঙ্গে সাম্প্রতিক কূটনৈতিক অনুরাগ—পাকিস্তানকে এ উদ্যোগের কেন্দ্রীয় ভূমিকায় নিয়ে এসেছে বলে বিশ্লেষকদের মত।

ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধের পর থেকেই জর্ডান, মিশর এবং সৌদি আরবের সঙ্গে পাকিস্তানের উচ্চ পর্যায়ের কূটনৈতিক সমন্বয় বেড়েছে। জর্ডানের বাদশাহ দ্বিতীয় আবদুল্লাহ সম্প্রতি ইসলামাবাদ সফর করেন এবং পাকিস্তানের সেনাপ্রধান ফিল্ড মার্শাল আসিম মুনিরের সঙ্গে বৈঠক করেন।

সেপ্টেম্বরে সৌদি আরবের সঙ্গে পাকিস্তানের স্ট্র্যাটেজিক মিউচুয়াল ডিফেন্স এগ্রিমেন্ট (SMDA) সই হওয়ায়, গাজা-পরবর্তী পরিস্থিতি মোকাবিলায় রিয়াদ ইসলামাবাদের সামরিক সহায়তা চাইবে—এমন ধারণাও জোরালো হয়েছে।

পাকিস্তানে ফিলিস্তিন ইস্যু অত্যন্ত সংবেদনশীল। ইসরায়েলের সঙ্গে কোনো ধরনের সামরিক বা প্রযুক্তিগত সমন্বয়—প্রকাশ্যে বা পরোক্ষে—রাজনৈতিক বিতর্ক সৃষ্টি করবে বলে ধারণা পর্যবেক্ষকদের।

প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ বলেছেন, “গাজায় মানবিক প্রয়োজনে পাকিস্তান ভূমিকা রাখলে সেটি আমাদের জন্য গৌরবের।” তবে তিনি এটিও স্পষ্ট করেন যে, সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে সংসদসহ জাতীয় নিরাপত্তা নীতিনির্ধারকদের মতামত নেওয়া হবে।

বিশ্লেষকদের মতে, ISF-এর কাঠামো, নিয়মাবলী ও ভূমিকার স্পষ্ট ব্যাখ্যা পাওয়া না গেলে পাকিস্তানের পক্ষে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া কঠিন হবে।

সাবেক লেফটেন্যান্ট জেনারেল মুহাম্মদ সাঈদ মনে করেন, “এ ধরনের সংবেদনশীল সিদ্ধান্ত গোপনে নেওয়া সম্ভব নয়। সংসদ ও জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিলের আলোচনার ওপরই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নির্ভর করবে।”

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক কিছু প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে—পাকিস্তান, আজারবাইজান ও ইন্দোনেশিয়া ISF-এর সম্ভাব্য প্রধান বাহিনী হতে পারে। তবে কত সংখ্যক সেনা লাগবে বা কোন দেশের অধীনে কমান্ড পরিচালিত হবে—এসব এখনো চূড়ান্ত নয়।

অর্থনৈতিক সংকটের কারণে যুক্তরাষ্ট্র ও উপসাগরীয় মিত্রদের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করা পাকিস্তানের জন্য গুরুত্বপূর্ণ—তাই সামরিক অবদান দিয়ে কূটনৈতিক অবস্থান আরও শক্তিশালী করা হতে পারে। এর বিপরীতে রয়েছে ইসরায়েলের সঙ্গে সমন্বয় হলে সম্ভাব্য জনঅসন্তোষের ঝুঁকি।

গাজায় প্রায় ৯০ শতাংশ মানুষ বাস্তুচ্যুত; ধ্বংসস্তূপের নিচে এখনও হাজারো পরিবার অনিশ্চয়তা নিয়ে দিন কাটাচ্ছে। এই প্রেক্ষাপটে আন্তর্জাতিক শান্তিরক্ষী বাহিনীর ভূমিকা কতটা কার্যকর হবে—তা অনেকটাই নির্ভর করছে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর রাজনৈতিক সদিচ্ছা, বাস্তবসম্মত লক্ষ্য এবং স্থানীয় গ্রহণযোগ্যতার ওপর।

পাকিস্তান কী সিদ্ধান্ত নেবে—তা জানা যাবে পরবর্তী কূটনৈতিক আলোচনার পর। কিন্তু স্পষ্টতই—ইসলামাবাদ ইতোমধ্যেই এমন এক ভারসাম্যের রাজনীতিতে প্রবেশ করেছে, যেখানে প্রতিটি পদক্ষেপই হবে অত্যন্ত সূক্ষ্ম ও গুরুত্ববহ।

Super Admin

PNN

প্লিজ লগইন পোস্টে মন্তব্য করুন!

আপনিও পছন্দ করতে পারেন