- ০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫
আন্তর্জাতিক ডেস্ক। PNN
ক্যাথলিক চার্চের নবনির্বাচিত প্রধান পোপ লিও তাঁর প্রথম বিদেশ সফরে তুরস্ক ও লেবাননে যাচ্ছেন। সংঘাতকবলিত মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠার আহ্বান এবং দীর্ঘদিন বিভক্ত খ্রিস্টান গির্জাগুলোর মধ্যে ঐক্যের বার্তা ছড়িয়ে দেওয়াই এ সফরের মূল উদ্দেশ্য হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
তিন দিনের ব্যস্তসূচি নিয়ে পোপ লিও প্রথমে তুরস্কের রাজধানী আংকারা সফর করবেন, এরপর লেবাননে পৌঁছাবেন। বৈশ্বিক অঙ্গনে তাঁর প্রথম বিদেশি ভাষণ এবং বিভিন্ন ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক গুরুত্বসম্পন্ন স্থানে তাঁর সফর আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ব্যাপক আগ্রহের সৃষ্টি করেছে।
রোমের প্রধান বিমানবন্দর থেকে বৃহস্পতিবার সকালে বিশেষ বিমানে আংকারার উদ্দেশে রওনা দেন ৭০ বছর বয়সী পোপ লিও। সেখানে তিনি তুরস্কের রাষ্ট্রপতি রেজেপ তাইয়েপ এরদোয়ান এবং রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের সঙ্গে বৈঠক করবেন।
তুরস্ককে প্রথম সফর গন্তব্য হিসেবে বেছে নেওয়ার পেছনে গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক কারণ রয়েছে। প্রায় ১ হাজার ৭০০ বছর আগে এখানেই অনুষ্ঠিত হয়েছিল বিখ্যাত নাইসিয়া ধর্মসভা, যেখানে প্রণীত হয়েছিল নাইসেন ধর্মমূলনীতি, যা আজও অধিকাংশ খ্রিস্টানের বিশ্বাসের ভিত্তি।
পোপ লিও চলতি বছরের মে মাসে প্রয়াত পোপ ফ্রান্সিসের উত্তরসূরি হিসেবে নির্বাচিত হন। বিশ্বপরিচিতির বাইরে থাকা এই ধর্মযাজক বহু বছর পেরু দেশে ধর্মপ্রচারক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন এবং ২০২৩ সালে ভ্যাটিকানের দায়িত্ব নেন।
আংকারা সফর শেষে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় পোপ লিও ইস্তাম্বুলে পৌঁছাবেন। শহরের সবচেয়ে বড় ক্যাথলিক গির্জা সেন্ট অ্যান্টনি পাদুয়া প্যারিশে তাঁকে বরণ করার প্রস্তুতি চলছে। তুরস্ক সফরকারী তিনি মাত্র পঞ্চম পোপ।
ইস্তাম্বুলেই অবস্থান করেন বিশ্বব্যাপী কোটি কোটি অর্থোডক্স খ্রিস্টানদের আধ্যাত্মিক নেতা প্যাট্রিয়ার্ক বার্থলোমিউ। ১০৫৪ সালে পূর্ব-পশ্চিম খ্রিস্টান বিভেদের পর দুই পক্ষ সাম্প্রতিক দশকে সম্পর্ক উন্নয়নের উদ্যোগ নিলেও পুরোপুরি সমন্বয় এখনো হয়নি। শুক্রবার দুজন ধর্মীয় নেতা একসঙ্গে ইজনিক নগরী সফর করবেন, যেখানে প্রথম দিকের খ্রিস্টান ধর্মগুরুদের সম্মেলনে নাইসেন ধর্মমূলনীতির সূত্রপাত হয়েছিল।
এ সফরে পোপ লিও সাধারণ নিয়ম ভেঙে ইতালীয় ভাষার পরিবর্তে ইংরেজির বদলে সম্পূর্ণরূপে বাংলা রাখার মতো কোনো প্রসঙ্গ নেই তবে তিনি বিদেশ সফরে ভিন্ন ভাষায় বক্তব্য দেবেন বলে ভ্যাটিকান জানিয়েছে।
রবিবার পোপ লিও লেবাননের উদ্দেশে যাত্রা করবেন। বহু ধর্মের মানুষের আবাস লেবানন ২০১৯ সাল থেকে ভয়াবহ অর্থনৈতিক বিপর্যয় ও রাজনৈতিক অস্থিরতায় দুঃসময় পার করছে। এর সঙ্গে প্রায় প্রতিদিনই ইসরায়েলের বিমান হামলায় পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। এক বছরের যুদ্ধবিরতি সত্ত্বেও গত বছরে এসব হামলায় ৩৩০ জনের বেশি লেবাননবাসী নিহত হয়েছেন।
সম্প্রতি বৈরুতের দক্ষিণাঞ্চলে ইসরায়েলের বিমান হামলায় লেবাননের সশস্ত্র সংগঠন হিজবুল্লাহর প্রধানের সহকারী হায়থাম আলী তাবাতাবাই নিহত হন।
অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতিতেও লেবাননে পোপ লিওর সফর নির্বিঘ্ন রাখতে সব ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন ভ্যাটিকানের মুখপাত্র মাত্তেও ব্রুনি। তবে তিনি নিরাপত্তা পরিকল্পনা সম্পর্কে বিস্তারিত জানাতে অস্বীকৃতি জানান।