- ০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫
আন্তর্জাতিক ডেস্ক। PNN
গাজা উপত্যকার দক্ষিণ ও মধ্যাঞ্চলে ইসরায়েলি বাহিনী আবারও একাধিক বিমান হামলা চালিয়েছে যেসব এলাকা যুদ্ধবিরতি চুক্তির তথাকথিত ‘ইয়েলো লাইন’-এর বাইরে, যেখানে বাহিনীর অবস্থান নিষিদ্ধ থাকার কথা। ফলে সাত সপ্তাহ ধরে টিকে থাকা নাজুক যুদ্ধবিরতির পরিস্থিতি আরও সংকটময় হয়ে উঠেছে।
বৃহস্পতিবার সকালে বুরেইজ শরণার্থী শিবির ও পূর্ব খান ইউনুসে বিস্ফোরণ এবং ধ্বংসস্তূপের চিত্র দেখা গেছে বলে জানিয়েছেন আল জাজিরার স্থানীয় প্রতিবেদকেরা। গাজার সিভিল ডিফেন্স বলছে, সাম্প্রতিক দিনগুলোতে শত শত হামলা এ চুক্তির প্রকাশ্য লঙ্ঘন।
একই সময়ে অধিকৃত পশ্চিম তীরের কালকিলিয়া, তুবাস, হেবরন, তুলকারেম ও নাবলুসে অভিযান চালিয়েছে ইসরায়েলি সেনা। তুবাসে কমপক্ষে ২৫ জনকে জিজ্ঞাসাবাদের নামে মারধর করা হয়েছে, যারা পরে চিকিৎসা সহায়তা নিতে বাধ্য হন। স্থানীয় রেড ক্রিসেন্ট কর্মকর্তারা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
যুদ্ধবিরতির প্রথম ধাপ সম্পন্নের দিকে এগোচ্ছে দুই পক্ষ। বুধবার গাজা কর্তৃপক্ষের কাছে ১৫ প্যালেস্টাইনি বন্দির মরদেহ হস্তান্তর করেছে ইসরায়েল। এর আগের দিন হামাস ও ইসলামিক জিহাদ আরেক ইসরায়েলি বন্দির দেহ ফিরিয়ে দেয়।
চুক্তির অংশ হিসেবে এখন পর্যন্ত জীবিত সব বন্দিকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে এবং মোট ২৬ জন ইসরায়েলি নাগরিকের মরদেহ ফেরত এসেছে। হামাসের মুখপাত্র হিজাম কাসেম জানিয়েছেন, কঠিন পরিস্থিতি সত্ত্বেও পুরো প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার ব্যাপারে তারা অঙ্গীকারবদ্ধ।
অন্যদিকে ইসরায়েল প্রায় দুই হাজার প্যালেস্টাইনি বন্দিকে মুক্তি দিয়েছে এবং ৩৪৫ জনের মরদেহ ফেরত দিয়েছে যাদের অনেকের দেহে নির্যাতন ও মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের চিহ্ন পাওয়া গেছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
যুদ্ধবিরতিকে ঘিরে বড় বাধাগুলোর একটি হলো গাজার দক্ষিণাংশে ইয়েলো লাইনের ওপারে ইসরায়েলি নিয়ন্ত্রিত এলাকায় হামাসের বেশ কিছু যোদ্ধার আটকে পড়া। গত এক সপ্তাহে তাদের ২০ জনকে হত্যা করার দাবি করেছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। হামাস বলছে, এসব যোদ্ধা রাফাহর টানেলে অবরুদ্ধ এবং তাদের লক্ষ্য করে ইসরায়েল স্পষ্টভাবে চুক্তি ভঙ্গ করছে। তারা মধ্যস্থতাকারীদের হস্তক্ষেপের আহ্বান জানিয়েছে।
এদিকে যুদ্ধবিরতির দ্বিতীয় ধাপ নিয়ে কূটনৈতিক তৎপরতা চলছে। এ ধাপে গাজায় একটি আন্তর্জাতিক সশস্ত্র স্থিতিশীলতা বাহিনী মোতায়েন, অঞ্চলের সামরিকীকরণ পর্যায়ক্রমে কমানো এবং সাময়িক একটি আন্তর্জাতিক প্রশাসন গঠনের পরিকল্পনা রয়েছে। মঙ্গলবার কায়রোয় তুরস্ক, কাতার ও মিসরের প্রতিনিধিদের বৈঠকে এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়।
তবে বিশ্লেষকদের মতে, প্রায় সব দিকেই বড় প্রশ্ন রয়ে গেছে বিশেষ করে ইসরায়েলের প্রকৃত উদ্দেশ্য নিয়ে। মধ্যপ্রাচ্যবিশেষজ্ঞ মোহাম্মদ শেহাদা মনে করেন, “ইসরায়েল এখনো গাজাকে জনশূন্য ও অবাসযোগ্য করে তোলার পরিকল্পনা পুরোপুরি ত্যাগ করেনি। যুদ্ধবিরতির যেকোনো অস্থিতিশীলতা আবারও সামরিক হামলার অজুহাত হওয়ার আশঙ্কা আছে।”