- ১৩ অক্টোবর, ২০২৫
ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনা শুধুমাত্র ক্ষেপণাস্ত্র বা রাজনৈতিক বাগাড়ম্বরপূর্ণ ভূ-রাজনৈতিক অচলাবস্থার চেয়ে অনেক বেশি জটিল। এটি শক্তিশালী দেশগুলি, বিশেষ করে পশ্চিমারা, কয়েক দশক ধরে যে সিদ্ধান্তগুলি নিয়েছে, সেগুলোর গভীরে প্রোথিত এবং এই সিদ্ধান্তগুলি সর্বদা ন্যায়সঙ্গত ছিল না। এই সিদ্ধান্তগুলি এখনও এই অঞ্চলের ধারণা ও আচরণকে উল্লেখযোগ্যভাবে প্রভাবিত করে চলেছে।
বর্তমান অস্থির পরিস্থিতিকে সত্যিকার অর্থে উপলব্ধি করতে হলে ইরানের ঐতিহাসিক গতিপথ এবং কীভাবে এটি এই সন্ধিক্ষণে এসে দাঁড়িয়েছে, তা বোঝা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ১৯৭৯ সালের ইসলামিক বিপ্লবের আগে, ইরান শাহ দ্বারা শাসিত ছিল, যিনি একটি কঠোর পশ্চিমাপন্থী পররাষ্ট্রনীতি অনুসরণ করেছিলেন। এই সারিবদ্ধতা পশ্চিমা শক্তিগুলির কাছ থেকে শক্তিশালী সমর্থন পেয়েছিল, প্রধানত শাহ বিদেশি দেশগুলিকে ইরানের বিশাল তেলের মজুদে উল্লেখযোগ্য প্রবেশাধিকার এবং দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে তাদের যথেষ্ট প্রভাব খাটানোর অনুমতি দিয়েছিলেন।
তবে, এই পশ্চিমাপন্থী অবস্থান অনেক ইরানীদের জন্য যথেষ্ট ব্যয়বহুল প্রমাণিত হয়েছিল, যারা তাদের নিজ দেশে ক্রমবর্ধমানভাবে প্রান্তিক ও অধিকার বঞ্চিত বোধ করছিল। একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা যা পশ্চিমা শক্তিগুলির প্রতি ইরানের গভীর অবিশ্বাসকে ক্রমাগত বাড়িয়ে চলেছে, তা ঘটেছিল ১৯৫৩ সালে। সেই বছর, পশ্চিমারা সক্রিয়ভাবে একটি অভ্যুত্থানকে সমর্থন করেছিল যা গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ মোসাদেঘের পতনের দিকে নিয়ে যায়। তার কথিত অপরাধ ছিল ইরানের তেল শিল্পকে জাতীয়করণ করার প্রচেষ্টা, যা পশ্চিমা শক্তিগুলি এই অঞ্চলে তাদের অর্থনৈতিক স্বার্থের জন্য সরাসরি হুমকি হিসাবে দেখেছিল।
এই ঐতিহাসিক হস্তক্ষেপ ইরানের অভিযোগের একটি মূল ভিত্তি হিসাবে কাজ করে এবং পশ্চিমা উদ্দেশ্যগুলির প্রতি তার বর্তমান পররাষ্ট্রনীতি ও অবিশ্বাসকে গভীরভাবে প্রভাবিত করে। এই ধরনের ঘটনা থেকে উদ্ভূত দীর্ঘস্থায়ী ক্ষোভ এই বিষয়টিকে তুলে ধরে যে বর্তমান দিনের উত্তেজনা বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, বরং বাহ্যিক প্রভাব এবং অভ্যন্তরীণ সংগ্রামের একটি দীর্ঘ এবং প্রায়শই বিতর্কিত ইতিহাসের চূড়ান্ত পরিণতি। ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে চলমান বিরোধগুলিকে, তাই, এই অমীমাংসিত ঐতিহাসিক সমস্যাগুলির একটি সমসাময়িক প্রকাশ হিসাবে দেখা যেতে পারে, যা বর্তমান জটিলতাগুলিকে সত্যিকার অর্থে উপলব্ধি করার জন্য অতীতের অন্যায়ের গভীরতর বোঝাপড়া দাবি করে।
সূত্রঃ দ্যা ডেইলি স্টার