- ০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫
আন্তর্জাতিক ডেস্ক |PNN
রাশিয়ার জ্বালানি অবকাঠামো ধ্বংসের চেষ্টার জবাবে ইউক্রেনের পাল্টা আঘাতে সীমান্তের ওপারে অন্তত দুটি বড় শহরে বিদ্যুৎ ও তাপ সরবরাহ ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে।
রবিবার গভীর রাতে ইউক্রেনের ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় রাশিয়ার বেলগোরোদ ও ভোরোনেজ শহরের বিদ্যুৎকেন্দ্র ও তাপ সরবরাহ নেটওয়ার্ক মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বেলগোরোদের গভর্নর ভিয়াচেস্লাভ গ্লাদকভ জানিয়েছেন, হামলায় শহরের প্রায় ২০ হাজার পরিবার বিদ্যুৎবিহীন হয়ে পড়েছে এবং প্রধান তাপ সরবরাহ পাইপলাইন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
ভোরোনেজ অঞ্চলের গভর্নর আলেকজান্ডার গুসেভ বলেন, একাধিক ড্রোন প্রতিহত করা হলেও একটি ইউটিলিটি স্থাপনায় আগুন ধরে যায়, যা পরবর্তীতে নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, রাতজুড়ে বিস্ফোরণের শব্দে শহরজুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় তাদের বিবৃতিতে বেলগোরোদ বা ভোরোনেজের ঘটনার কথা উল্লেখ করেনি, তবে দাবি করেছে যে ৪৪টি ইউক্রেনীয় ড্রোন তারা ধ্বংস বা প্রতিহত করেছে। একই রাতে রোস্তভ অঞ্চলের তাগানরগ শহরেও একাধিক ট্রান্সফরমার স্টেশনে আগুন ধরে গিয়ে ঘণ্টাব্যাপী বিদ্যুৎ বিভ্রাট ঘটে।
অন্যদিকে, রাশিয়া পাল্টা হিসেবে ইউক্রেনজুড়ে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে। কিয়েভ ও খারকিভ অঞ্চলের বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোতে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে এবং অন্তত সাতজন নিহত হয়েছেন বলে ইউক্রেনীয় কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
রাষ্ট্রায়ত্ত বিদ্যুৎ কোম্পানি সেন্ট্রেনেরগো জানিয়েছে, ২০২২ সালে যুদ্ধ শুরুর পর এটিই তাদের স্থাপনাগুলোর ওপর সবচেয়ে বড় আক্রমণ, যার ফলে কিয়েভ ও খারকিভ অঞ্চলের একাধিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের কার্যক্রম বন্ধ রাখতে হয়েছে।
রাশিয়া দাবি করেছে, তারা ইউক্রেনের অস্ত্র উৎপাদন কেন্দ্র ও গ্যাস সরবরাহ অবকাঠামোর ওপর ‘সুনির্দিষ্ট ও ব্যাপক’ হামলা চালিয়েছে। অপরদিকে ইউক্রেন বলছে, রাশিয়া ইচ্ছাকৃতভাবে তাদের বেসামরিক জনগণের বিদ্যুৎ ও গরমের ব্যবস্থা ধ্বংস করছে—যা শীতকালকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করার এক প্রমাণ।
এদিকে, কূটনৈতিক অঙ্গনেও নতুন নড়াচড়া দেখা যাচ্ছে। রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ রবিবার রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা RIA নভোস্তি-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, তিনি মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিওর সঙ্গে সাক্ষাতে রাজি আছেন, যাতে ইউক্রেন যুদ্ধ ও রুশ-মার্কিন সম্পর্ক পুনরুদ্ধার নিয়ে আলোচনা করা যায়।
তবে ল্যাভরভ স্পষ্ট করে বলেন, “রাশিয়ার স্বার্থ উপেক্ষা করে কোনো শান্তি সম্ভব নয়।” মস্কো এখনো দাবি করছে, ইউক্রেনকে দোনেৎস্ক, লুহানস্ক, খেরসন ও জাপোরিঝিয়া অঞ্চল থেকে সেনা প্রত্যাহার করতে হবে।
অন্যদিকে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি জানিয়েছেন, কিছু অঞ্চলকে “অস্থায়ীভাবে দখলকৃত” হিসেবে স্বীকার করা যেতে পারে, তবে তিনি কোনো ভূখণ্ড রাশিয়ার কাছে হস্তান্তর করার ক্ষমতা বা ম্যান্ডেট রাখেন না।
যুদ্ধের প্রায় চার বছর পূর্ণ হতে চললেও, যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে শান্তি প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা এখনো অচলাবস্থায় পড়ে আছে, আর দুই দেশ প্রতিদিনই একে অপরের জ্বালানি অবকাঠামোকে নতুন করে লক্ষ্যবস্তু করছে।