- ১৩ অক্টোবর, ২০২৫
ইউক্রেনের আকাশে রুশ বাহিনীর ব্যাপক ড্রোন, ক্রুজ ও ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা প্রতিহত করতে গিয়ে এক ইউক্রেনীয় এফ-১৬ যুদ্ধবিমানের পাইলট নিহত হয়েছেন। ইউক্রেনের বিমান বাহিনী রবিবার জানিয়েছে, যুদ্ধের চতুর্থ বছরে রাশিয়ার রাতের বিমান হামলা বৃদ্ধির মধ্যেই এই মর্মান্তিক ঘটনা ঘটলো।
প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি নিহত পাইলট মাকসিম উস্টিমেঙ্কোর বীরত্ব ও আত্মত্যাগের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। তাকে মরণোত্তরভাবে ইউক্রেনের সর্বোচ্চ সামরিক সম্মান, "ইউক্রেনের বীর" উপাধিতে ভূষিত করা হয়েছে।
এই ভয়াবহ হামলার পর জেলেনস্কি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা মিত্রদের কাছে ইউক্রেনের বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা আরও জোরদার করার জন্য জরুরি সহায়তা চেয়েছেন। স্থানীয় কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী, এই হামলায় ইউক্রেনজুড়ে বহু বাড়িঘর ও গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং অন্তত ১২ জন আহত হয়েছেন।
কিয়েভের বাসিন্দারা বিমান হামলার সাইরেন বাজার পর নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য মেট্রো স্টেশনগুলোতে ভিড় করেন। রাজধানী জুড়ে এবং পোল্যান্ড সীমান্তবর্তী পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর লভিভে, যেখানে সাধারণত এ ধরনের হামলা কম দেখা যায়, সেখানেও মেশিনগানের গুলি ও বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে। লভিভ অঞ্চলের গভর্নর জানিয়েছেন, এই হামলা গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো লক্ষ্য করে চালানো হয়েছিল।
গত বছর থেকে মার্কিন-নির্মিত এফ-১৬ যুদ্ধবিমান ইউক্রেনের প্রতিরক্ষায় এক গুরুত্বপূর্ণ ও ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত অংশ হয়ে উঠেছে। তবে, এই ঘটনায় ইউক্রেন তাদের তৃতীয় এফ-১৬ যুদ্ধবিমান হারালো। যদিও কিয়েভ তাদের এফ-১৬ বহরের সঠিক সংখ্যা প্রকাশ করেনি, এটি নিঃসন্দেহে তাদের জন্য একটি বড় ক্ষতি।
ইউক্রেনীয় বিমান বাহিনীর টেলিগ্রাম পোস্ট অনুযায়ী, শহীদ পাইলট তার ক্ষতিগ্রস্ত বিমানটিকে জনবসতিপূর্ণ এলাকা থেকে দূরে সরিয়ে নিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছিলেন, কিন্তু বিধ্বস্ত হওয়ার আগে তিনি বিমান থেকে বের হওয়ার সুযোগ পাননি। বিমান বাহিনী আরও জানিয়েছে, "পাইলট তার বিমানে থাকা সমস্ত অস্ত্র ব্যবহার করে সাতটি আকাশ লক্ষ্যবস্তু ভূপাতিত করেছেন। শেষটি ভূপাতিত করার সময় তার বিমান ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং উচ্চতা হারাতে শুরু করে।"
চলতি মাসের শুরুতে ইউক্রেনের সামরিক বিশেষজ্ঞ রোমান স্বিতান উল্লেখ করেছিলেন যে, এফ-১৬ যুদ্ধবিমান যুদ্ধের সব ধরনের পরিস্থিতির জন্য আদর্শভাবে উপযুক্ত নয়। বিশেষ করে ইউক্রেনের শহরগুলোতে যে ড্রোন হামলাগুলো হচ্ছে, সেগুলো প্রতিহত করার চেয়ে দ্রুতগতির লক্ষ্যবস্তু মোকাবিলায় এটি বেশি কার্যকর।
প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি তার রাতের ভিডিও বার্তায় বলেন, মাকসিম উস্টিমেঙ্কো ২০১৪ সাল থেকে রুশ-সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদীদের বিরুদ্ধে শুরু হওয়া অভিযানে অংশ নিচ্ছিলেন, যারা পূর্ব ইউক্রেনের কিছু অংশ দখল করেছিল। জেলেনস্কি বলেন, "তিনি চার ধরনের বিমান চালনায় পারদর্শী ছিলেন এবং ইউক্রেনকে রক্ষায় তার অসামান্য অবদান ছিল। এমন মানুষকে হারানো খুবই বেদনাদায়ক।"