Friday, December 5, 2025

ইউক্রেন সংকট সমাধানে যুক্তরাষ্ট্রের পরিকল্পনা জোরদার করতে জি২০-এ আলোচনায় মিত্র দেশগুলো


ছবিঃ এ বছরের শুরুর দিকে যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও জার্মানির নেতারা কিয়েভে জেলেনস্কির সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন। (সংগৃহীত)

আন্তর্জাতিক ডেস্ক। PNN 

দক্ষিণ আফ্রিকায় শুরু হওয়া জি২০ সম্মেলনে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের অবসানে যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবিত শান্তি-পরিকল্পনাকে “আরও শক্তিশালী” করার লক্ষ্য নিয়ে একত্র হচ্ছে ইউক্রেনের মিত্র দেশগুলো। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার জানিয়েছেন, এই আলোচনায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রচেষ্টাকে সমর্থন করেই পরবর্তী ধাপের আলোচনার রূপরেখা নির্ধারণ করা হবে।

এদিকে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেন্সকি এক দিন আগেই সতর্ক করে বলেছেন, দেশটি এখন “ইতিহাসের অন্যতম কঠিন মুহূর্তের” মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। কারণ, মার্কিন পরিকল্পনা স্বীকারে যে চাপ তৈরি হয়েছে, তার ফাঁস হওয়া বেশ কিছু শর্তকে অনেকেই মস্কোর স্বার্থের পক্ষে ঝুঁকে থাকা বলে মনে করছেন।

স্টারমার, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এবং জার্মান চ্যান্সলারের সঙ্গে ফোনালাপের পরে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী জানান, ইউক্রেনের “দীর্ঘস্থায়ী শান্তি” নিশ্চিত করতে মিত্ররা এক অবস্থানে রয়েছে। জি২০ শীর্ষ সম্মেলনে না থাকলেও যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন উভয়েই এই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন।

ফাঁস হওয়া খসড়ায় দেখা যায়, ইউক্রেনকে এমন কিছু ছাড় দিতে বলা হয়েছে যা আগে তারা স্পষ্টভাবে প্রত্যাখ্যান করেছিল—এর মধ্যে রয়েছে পূর্বাঞ্চলের কিছু অঞ্চল ত্যাগ করা, সেনাবাহিনী ছোট করা এবং ন্যাটোতে যোগ না দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রনীতি প্রধান কায়া ক্যালাস বলেছেন, এটি একটি “খুব বিপজ্জনক মুহূর্ত”, কারণ একটি আগ্রাসী রাষ্ট্রের কাছে এভাবে সুবিধা দেওয়ার কোনো বৈধতা নেই।

স্টারমার বলেছেন, “ইউক্রেন একদিনের জন্যও আক্রমণ বন্ধের আহ্বান বন্ধ করেনি, কিন্তু রাশিয়া বরাবরই সময়ক্ষেপণ করেছে। তাই টেকসই শান্তি প্রতিষ্ঠায় এখন সমন্বিত প্রচেষ্টা ছাড়া বিকল্প নেই।”

পুতিন জানিয়েছেন যে যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবিত পরিকল্পনা “আলোচনার ভিত্তি” হতে পারে, তবে বিস্তারিত আলোচনা এখনো হয়নি। তিনি দাবি করেন, রাশিয়া নমনীয় হতে প্রস্তুত, যদিও যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার সক্ষমতাও রয়েছে।

কিয়েভে দেওয়া ১০ মিনিটের ভাষণে জেলেন্সকি বলেন, ইউক্রেনকে “দুর্বল বা ভাঙতে অনেক চাপ” দেওয়া হচ্ছে। তবে তিনি শান্ত থাকার এবং যুক্তরাষ্ট্রসহ মিত্রদের সঙ্গে বিকল্প প্রস্তাব তৈরির কথা জানান। তিনি স্বীকার করেন, ইউক্রেন “মর্যাদা হারানো” বা “একজন গুরুত্বপূর্ণ মিত্র হারানোর ঝুঁকি”—এই দুই সংকটময় পরিস্থিতির সামনে দাঁড়িয়ে আছে।

ডোনেতস্ক অঞ্চলের নিয়ন্ত্রিত অংশ থেকে ইউক্রেনীয় সেনাদের সরে যাওয়া, রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে ডোনেতস্ক, লুহানস্ক ও পূর্বে সংযুক্ত করা ক্রিমিয়ার অবস্থান বহাল রাখা, ইউক্রেনের জন্য নির্ভরযোগ্য নিরাপত্তা নিশ্চয়তা, রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়ে তাকে আবার বৈশ্বিক অর্থনীতিতে যুক্ত করা, জি৭-এ রাশিয়ার ফিরে আসার সম্ভাবনা, যা জি৮ হয়ে যাবে বর্তমানে রাশিয়া প্রায় ২০% ইউক্রেনীয় ভূখণ্ড নিয়ন্ত্রণে রেখেছে।

ট্রাম্প বলেছেন, ইউক্রেনকে থ্যাঙ্কসগিভিং-এর মধ্যেই সিদ্ধান্ত জানাতে হবে। তিনি দাবি করেন, এতে দেরি হলে ইউক্রেন “আরও বেশি ভূখণ্ড হারাতে পারে”। ওয়াশিংটন একাধিকবার জানিয়েছে, এই পরিকল্পনা প্রস্তুত করা হয়েছে ইউক্রেনীয় নিরাপত্তা প্রধান রুস্টেম উমেরভের সঙ্গে আলোচনা করেই। রুশ বাহিনী ধীরগতিতে হলেও ফ্রন্টলাইনে অগ্রসর হচ্ছে। ইউক্রেনের প্রতিরক্ষায় যুক্তরাষ্ট্রের উন্নত অস্ত্র সরবরাহ এখনো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। তবে মার্কিন ভাইস-প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স বলেন, “আরও টাকা বা অস্ত্র দিলে দ্রুত বিজয় মিলবে—এ ধারণা পুরোপুরি অবাস্তব।”

Super Admin

PNN

প্লিজ লগইন পোস্টে মন্তব্য করুন!

আপনিও পছন্দ করতে পারেন