- ০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫
আন্তর্জাতিক ডেস্ক | PNN:
তুরস্কের বৃহত্তম শহর ইস্তাম্বুলে এক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে মিলিত হয়েছেন সাতটি আরব ও ইসলামি সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা। আলোচনার মূল বিষয় ছিল গাজায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর রাখার লক্ষ্যে একটি আন্তর্জাতিক শান্তিরক্ষী বা স্থিতিশীলতা বাহিনী গঠন করা।
সোমবার অনুষ্ঠিত এই বৈঠকে কাতার, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, জর্ডান, পাকিস্তান, ইন্দোনেশিয়া ও তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা অংশ নেন। বৈঠকে অংশগ্রহণকারী কিছু দেশ ভবিষ্যতে গঠিত বাহিনীতে সেনা পাঠানোর সম্ভাবনাও খতিয়ে দেখছে।
তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাকান ফিদান বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের বলেন, “গাজায় প্রস্তাবিত আন্তর্জাতিক বাহিনী নিয়ে এখনো আলোচনা চলছে। বাহিনীর কাঠামো ও দায়িত্ব নির্ধারণের পর অংশগ্রহণকারী দেশগুলো সিদ্ধান্ত নেবে সেনা পাঠাবে কি না।”
বৈঠকে অংশ নেওয়া দেশগুলো জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের মাধ্যমে এই বাহিনী গঠনের প্রস্তাবের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। তারা জোর দিয়ে বলেছে, বাহিনীর আইনি বৈধতা ও ম্যান্ডেট স্পষ্টভাবে সংজ্ঞায়িত না হলে কোনো দেশই এতে যুক্ত হবে না।
বৈঠকে উপস্থিত দেশগুলো ইসরায়েলের ধারাবাহিক যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন নিয়ে তীব্র উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। গত সপ্তাহে ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় ১০০-রও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হন, যাদের মধ্যে ৪৬ জন শিশু। যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ২৩৬ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।
ফিদান বলেন, “ইসরায়েল যুদ্ধবিরতি ভাঙার অজুহাত খুঁজছে এবং তারা চুক্তির শর্ত পূরণ করছে না। এটি আমাদের সকলের অভিন্ন মত।” তিনি আরও যোগ করেন, “গাজায় মানবিক সহায়তা প্রবেশে বাধা দেওয়া অগ্রহণযোগ্য।”
তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান বৈঠকের আগে এক ভাষণে বলেন, “ইসরায়েল বারবার যুদ্ধবিরতি চুক্তি লঙ্ঘন করছে এবং পশ্চিম তীরে দখলদারিত্ব বাড়াচ্ছে। ২০০-রও বেশি নিরপরাধ মানুষকে হত্যার পরও তারা আগ্রাসন চালিয়ে যাচ্ছে।”
তিনি আরও বলেন, “আমরা কখনোই জেরুজালেমের মর্যাদা পরিবর্তনের প্রচেষ্টা বা আল-আকসা মসজিদের পবিত্রতা নষ্ট করার ষড়যন্ত্র মেনে নেব না।”
তবে এখনো পরিষ্কার নয়, এই প্রস্তাবিত বাহিনী কবে গঠিত হবে এবং এর কার্যপরিধি কতটা হবে। বিশ্লেষকদের মতে, ইসরায়েল ও আরব দেশগুলোর মধ্যে আস্থার অভাবই প্রধান বাধা। ইসরায়েলের অনুমতি ছাড়া বিদেশি সেনারা গাজায় মোতায়েন করা কঠিন হবে।
১৯৪৯ সালে প্রথম মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ হিসেবে ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দিয়েছিল তুরস্ক। কিন্তু গাজা যুদ্ধের পর দুই দেশের সম্পর্কের অবনতি ঘটেছে। এরদোয়ান ইসরায়েলের সামরিক অভিযানকে “গণহত্যা” হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
তুরস্ক গাজায় শান্তি প্রতিষ্ঠায় মধ্যস্থতাকারী ভূমিকা রাখতে চাইলেও ইসরায়েলি সরকার স্পষ্ট জানিয়েছে, তারা গাজায় কোনো তুর্কি উপস্থিতি মেনে নেবে না।