- ০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫
আন্তর্জাতিক ডেস্ক |PNN
সুদানের দারফুর অঞ্চলে ভয়াবহ হত্যাযজ্ঞ চালানোর পর আবারও নতুন সামরিক অভিযানের প্রস্তুতি নিচ্ছে আধাসামরিক বাহিনী র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস (আরএসএফ)। এতে করে হাজারো মানুষ নতুন করে গৃহহীন হয়ে পড়েছে এবং জাতিসংঘ মানবিক বিপর্যয়ের আশঙ্কা প্রকাশ করেছে।
রবিবার (৩ নভেম্বর) প্রকাশিত জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আরএসএফের অব্যাহত হামলায় বিপুল সংখ্যক বেসামরিক মানুষ জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত হচ্ছে, বিশেষ করে পশ্চিম দারফুরের এল-ফাশার শহর থেকে।
আরএসএফ প্রধান মোহাম্মদ হামদান দাগালো, যিনি ‘হেমেদতি’ নামে পরিচিত, একইদিনে একটি ভিডিও প্রকাশ করে দাবি করেন যে তার বাহিনী “বৃহৎ অভিযানের প্রস্তুতি নিচ্ছে এবং শিগগিরই এল-ওবেইদ শহর মুক্ত করা হবে।” এল-ওবেইদ উত্তর কুরদোফান প্রদেশের রাজধানী, যা বর্তমানে সুদানের সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
উভয় পক্ষই এখন এল-ওবেইদে ব্যাপক যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছে। আরএসএফের প্রকাশিত ভিডিওতে দেখা যায়, সশস্ত্র এক যোদ্ধা দাবি করছে, “আমাদের সব বাহিনী এল-ওবেইদের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় বারা এলাকায় একত্রিত হয়েছে।”
আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম) জানিয়েছে, গত শুক্রবারেই বারা ও উম রাওয়াবা থেকে অন্তত ১,২০০ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। গত সপ্তাহে উত্তর কুরদোফানের বিভিন্ন এলাকা থেকে মোট ৩৬,০০০ এর বেশি মানুষ ঘরবাড়ি ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছে।
দক্ষিণ কুরদোফানেও একই পরিস্থিতি বিরাজ করছে। আব্বাসিয়া ও দিলামি শহর থেকে অন্তত ৩৬০ জন মানুষ পালিয়েছে বলে আইওএম জানায়। সংস্থাটি সতর্ক করে বলেছে, “পরিস্থিতি এখনো অত্যন্ত উত্তেজনাপূর্ণ ও অস্থির।”
জাতিসংঘ জানিয়েছে, গত সপ্তাহান্তে শুধু এল-ফাশার শহর থেকেই আরও ৮,৬০০ জনের বেশি মানুষ পালিয়ে গেছে। অক্টোবরের ২৬ তারিখ আরএসএফ শহরটি দখল করার পর থেকে মোট ৭০,০০০ এর বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে।
জাতিসংঘ মহাসচিবের মুখপাত্র স্টেফান দ্যুজারিক জানিয়েছেন, এল-ফাশারে রেড ক্রিসেন্টের স্বেচ্ছাসেবীদের হত্যা ও তাৎক্ষণিক মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের মতো গুরুতর অপরাধের প্রমাণ পাওয়া গেছে।
এলাকার পরিস্থিতি এতটাই ভয়াবহ যে, এখনো দশ হাজারের বেশি মানুষ শহরের ভেতরে ক্ষুধা ও অবরোধে আটকা রয়েছে। বহু নিখোঁজ মানুষের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। সামাজিক মাধ্যমে প্রচারিত ভিডিওতে রাস্তাজুড়ে ছড়িয়ে থাকা লাশের দৃশ্য দেখা গেছে।
জাতিসংঘ-সমর্থিত খাদ্যনিরাপত্তা পর্যবেক্ষণ সংস্থা আইপিসি (Integrated Food Security Phase Classification) সোমবার জানায়, এল-ফাশার ও দক্ষিণ কুরদোফানের কাডুগলিতে আনুষ্ঠানিকভাবে দুর্ভিক্ষ ঘোষিত হয়েছে।
আইপিসির প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, দারফুর ও কুরদোফানের অন্তত ২০টি এলাকা চরম দুর্ভিক্ষের ঝুঁকিতে রয়েছে। সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রায় ৩.৭ লাখ মানুষ দুর্ভিক্ষের মধ্যে জীবনযাপন করছিল এবং দেশের আরও ৬.৩ মিলিয়ন মানুষ চরম খাদ্য সংকটে ভুগছে।
সংস্থাটি সতর্ক করে জানিয়েছে, যদি অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি ও নিরাপদ মানবিক সহায়তার পথ উন্মুক্ত না হয়, তাহলে ক্ষুধা ও অপুষ্টিতে আরও বহু মানুষ মারা যাবে।
এদিকে, আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) সোমবার ঘোষণা করেছে যে, দারফুরে সংঘটিত গণহত্যা ও ধর্ষণের অভিযোগে আরএসএফের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের তদন্ত শুরু হয়েছে।
হেগ থেকে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে আদালত জানিয়েছে, এল-ফাশার দখলের পর সংঘটিত অপরাধগুলোর প্রমাণ সংগ্রহ ও সংরক্ষণের কাজ “তাৎক্ষণিকভাবে” শুরু করা হয়েছে।
আইসিসি বলছে, এসব সহিংসতা জাতিগত ভিত্তিতে সংঘটিত হয়েছে এবং এতে গণধর্ষণ, শিশু অপহরণ, বেসামরিক নাগরিকদের নির্বিচারে হত্যা ও হাসপাতাল টার্গেট করে হামলার মতো অপরাধ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
আদালতের উপপ্রধান প্রসিকিউটর নাজহাত শামীম খান জুন মাসের এক ব্রিফিংয়ে বলেছিলেন, “আমাদের কাছে যুক্তিসঙ্গত প্রমাণ রয়েছে যে দারফুরে যুদ্ধাপরাধ এবং মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত হয়েছে এবং তা এখনও চলছে।”
সুদানের চলমান সংঘাতে এখন পর্যন্ত হাজারো মানুষ নিহত ও কয়েক মিলিয়ন মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় যুদ্ধবিরতি ও মানবিক করিডর খোলার আহ্বান জানালেও, যুদ্ধ থামার কোনো লক্ষণ এখনো দেখা যাচ্ছে না।