Friday, December 5, 2025

ঘোষিত যুদ্ধবিরতির মধ্যেও গাজায় ইসরায়েলি হামলা চলমান; নিহত অন্তত চার ফিলিস্তিনি


ছবিঃ “ইসরায়েলের যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের মধ্যে নিহত স্বজনদের শোকে ফিলিস্তিনিদের আহাজারি” (সংগৃহীত । আল জাজিরা)

আন্তর্জাতিক ডেস্ক। PNN 

ছয় সপ্তাহের ঘোষিত যুদ্ধবিরতির মধ্যেও গাজা উপত্যকা, পশ্চিম তীর এবং লেবানন সীমান্তজুড়ে ইসরায়েলি বাহিনীর হামলা ও অভিযান অব্যাহত রয়েছে। সোমবার দিনজুড়ে গাজায় অন্তত চার ফিলিস্তিনি নিহত ও বেশ কয়েকজন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

গাজার দক্ষিণাঞ্চলের বানি সুহেলায় ড্রোন হামলায় এক ফিলিস্তিনি নিহত হন। এলাকা ‘ইয়েলো লাইন’-এর ভেতরে ইসরায়েলি বাহিনীর নিয়ন্ত্রণাধীন, যেখানে হামলা তীব্রতর হয়েছে বলে স্থানীয়রা জানাচ্ছেন। উত্তরে গাজা সিটিতে ইসরায়েলি বাহিনীর রেখে যাওয়া বিস্ফোরক অবিস্ফোরিত গোলাবারুদে এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে; আহত আরও কয়েকজন শিশুর অবস্থা আশঙ্কাজনক।

গাজা সিটি থেকে আল জাজিরার প্রতিবেদক তায়রেক আবু আজযোম জানিয়েছেন, উত্তর ও দক্ষিণ গাজায় একই দিনে আর্টিলারি শেলিং, বিমান হামলা এবং হেলিকপ্টার আক্রমণ অব্যাহত ছিল। বেইত লাহিয়া ও খান ইউনুসের পূর্বাংশে গোলাবর্ষণে বহু ঘরবাড়ি ধ্বংস হয়েছে। স্থানীয় পরিবারগুলো বলছে, পূর্ব গাজার বহু এলাকাকে ‘অবাসযোগ্য বাফার জোনে’ পরিণত করার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছে ইসরায়েল।

মধ্য গাজার মাঘাজি শরণার্থী ক্যাম্পে আগের এক হামলার ধ্বংসস্তূপ থেকে একই পরিবারের আটজনের মরদেহ উদ্ধার করেছে সিভিল ডিফেন্স। গাজা কর্তৃপক্ষের হিসাবে, যুদ্ধবিরতি শুরুর পর থেকে বিভিন্ন স্থানে ধ্বংসস্তূপ থেকে উদ্ধার হওয়া মরদেহের সংখ্যা ৫৮২—এখনও ৯,৫০০-এর বেশি মানুষ নিখোঁজ।

মধ্য গাজার নুসেইরাত শিবিরে এক ইসরায়েলি বন্দীর মরদেহ উদ্ধারের ঘোষণা দিয়েছে ফিলিস্তিনি ইসলামিক জিহাদ। মরদেহ শনাক্ত হলে যুদ্ধবিরতি চুক্তির প্রথম ধাপ অনুযায়ী আরও দুইজনের দেহ ফেরত আনতে হবে। প্রতি বন্দীর মরদেহের বিপরীতে ১৫ ফিলিস্তিনির মরদেহ ফেরত দেওয়ার কথা রয়েছে।

গাজায় জাতিসংঘ কাঠামোর বাইরে সহায়তা কার্যক্রম পরিচালনা করা যুক্তরাষ্ট্র-সমর্থিত GHF তাদের কার্যক্রম বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সংস্থাটি জানিয়েছে, অক্টোবরের যুদ্ধবিরতি চুক্তির শর্ত মেনে তারা সরে দাঁড়াচ্ছে। জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞদের হিসাব অনুযায়ী, চলতি বছরে GHF-এর ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রগুলোতে ৮৫০ জনের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন—খাদ্য সংগ্রহ করতে যাওয়া মানুষের ওপর ইসরায়েলি বাহিনী ও বিদেশি নিরাপত্তা ঠিকাদারদের গুলিবর্ষণের ঘটনা নিয়মিত ঘটেছে।

দখলকৃত পশ্চিম তীরে রাতভর পৃথক অভিযানে কমপক্ষে ১৬ ফিলিস্তিনিকে গ্রেপ্তার করেছে ইসরায়েলি বাহিনী। টুলকারেম, বেথলেহেম, রামাল্লা ও জেনিনের পার্শ্ববর্তী এলাকায় অভিযান পরিচালনা করা হয়।

রোববার রাতে রামাল্লার উত্তরে দেইর জরির গ্রামে ইসরায়েলি গুলিতে ২০ বছর বয়সী আইন বিভাগের ছাত্র বারাআ খাবিরি আলি মা’আলি নিহত হন। স্থানীয় প্রশাসন জানায়, বসতিদারদের হামলার পর ইসরায়েলি সৈন্যরা গ্রামে ঢুকে বিক্ষুব্ধ ফিলিস্তিনিদের লক্ষ্য করে গুলি চালালে এ হত্যাকাণ্ড ঘটে।

কাফর কাদুমে দুই নারী আহত হন এবং দুই ভাইকে আটক করা হয়। একই সঙ্গে রামাল্লার উত্তরে একাধিক এলাকায় ফিলিস্তিনিদের কৃষিজমিতে বসতিদারদের আগুন লাগানোর ঘটনাও ঘটেছে।

মানবাধিকার সংস্থাগুলোর হিসাবে, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের পর থেকে পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি বাহিনী ও বসতিদারদের হাতে অন্তত ১,০৮১ ফিলিস্তিনি নিহত এবং ২০ হাজারের বেশি গ্রেপ্তার হয়েছে।

রোববার ইসরায়েলি বিমান হামলায় নিহত হিজবুল্লাহর জ্যেষ্ঠ কমান্ডার হায়থাম আলী তাবাতাবাইয়ের জানাজা সোমবার বেইরুটে অনুষ্ঠিত হয়। হাজারো সমর্থক অংশ নেন। হিজবুল্লাহ বলছে, এ হত্যাকাণ্ড যুদ্ধবিরতির আরেকটি বড় লঙ্ঘন।

লেবাননের বিশ্লেষকরা সতর্ক করে বলেছেন, হিজবুল্লাহ প্রতিশোধ নিলে ইসরায়েল তা বড় ধরনের হামলার অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করতে পারে; যদিও প্রতিক্রিয়া না দেখালে দলের ‘নিবারণক্ষমতা’ আরও দুর্বল বলে মনে হবে।

যুক্তরাষ্ট্র মধ্যপ্রাচ্যে ইসরায়েলের বাড়তি অভিযানকে কার্যত সমর্থন দিচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন কয়েকজন ভূরাজনৈতিক বিশ্লেষক। তাদের মতে, আঞ্চলিক উত্তেজনা ইসরায়েলের বর্তমান সরকারকে রাজনৈতিকভাবে টিকিয়ে রাখতে ভূমিকা রাখছে।

Super Admin

PNN

প্লিজ লগইন পোস্টে মন্তব্য করুন!

আপনিও পছন্দ করতে পারেন