- ১৩ অক্টোবর, ২০২৫
ইসরায়েলের রাজনৈতিক-সুরক্ষা মন্ত্রিসভা গাজা সিটির নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পরিকল্পনা অনুমোদন করেছে। শুক্রবার ভোরে এ সিদ্ধান্ত আসে, এর কয়েক ঘণ্টা আগে প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ঘোষণা দেন যে ইসরায়েল গোটা গাজা উপত্যকার সামরিক নিয়ন্ত্রণ নেবে—যদিও আন্তর্জাতিক ও দেশীয় সমালোচনা ক্রমেই বাড়ছে প্রায় দুই বছর ধরে চলা এই বিধ্বংসী যুদ্ধে।
নেতানিয়াহুর কার্যালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়, ইসরায়েলি সেনাবাহিনী (আইডিএফ) গাজা সিটির নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার প্রস্তুতি নেবে এবং যুদ্ধক্ষেত্রের বাইরে থাকা বেসামরিক জনগণকে মানবিক সহায়তা প্রদান করবে। গাজা সিটি উত্তর গাজার সবচেয়ে বড় নগরী, যেখানে সম্ভাব্য অভিযান শুরুর আগে ফিলিস্তিনি নাগরিকদের সরিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনাও আলোচনায় আছে।
ফক্স নিউজকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে নেতানিয়াহু বলেন, ইসরায়েল গাজায় শাসনব্যবস্থা পরিচালনা করতে চায় না, বরং একটি নিরাপত্তা বেষ্টনী গড়ে তুলে পরবর্তীতে এলাকা আরব দেশগুলোর হাতে তুলে দিতে চায়। তবে তিনি স্পষ্ট করেননি কোন আরব দেশ এ দায়িত্ব নেবে বা কীভাবে শাসন কাঠামো তৈরি হবে।
এর আগে সেনাপ্রধান আইয়াল জামির অভিযানের পরিধি বাড়ানোর প্রস্তাবে আপত্তি জানান বলে ইসরায়েলি গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়েছে। নেতানিয়াহুর দাবি, বিকল্প পরিকল্পনাগুলো হামাসকে পরাজিত করতে বা জিম্মিদের ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হবে না। বর্তমানে ধারণা করা হচ্ছে, গাজায় ৫০ জন জিম্মি রয়েছেন, যাদের মধ্যে প্রায় ২০ জন জীবিত।
হামাস নেতানিয়াহুর পরিকল্পনাকে "আলোচনার বিরুদ্ধে স্পষ্ট অভ্যুত্থান" বলে অভিহিত করেছে। সংগঠনটি সতর্ক করেছে, গাজার শাসনভার নিতে গঠিত যেকোনো বাহিনীকে তারা ইসরায়েলের দখলদার শক্তি হিসেবে গণ্য করবে। আরব দেশগুলোও জানিয়েছে, গাজায় নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হলে তা অবশ্যই ফিলিস্তিনিদের বৈধ প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমেই হতে হবে।
জাতিসংঘ সম্ভাব্য নতুন সামরিক অভিযানকে "গভীরভাবে উদ্বেগজনক" বলে মন্তব্য করেছে। একইসঙ্গে ইসরায়েলের অভ্যন্তরে শত শত মানুষ নেতানিয়াহুর কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ করে যুদ্ধবিরতির দাবি তুলেছে এবং জিম্মিদের মুক্তির বিনিময়ে যুদ্ধ বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানায়, তারা ইতিমধ্যে গাজার প্রায় ৭৫% এলাকা নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে। তবে প্রায় দুই মিলিয়ন জনসংখ্যার অধিকাংশই একাধিকবার বাস্তুচ্যুত হয়েছে এবং সহায়তাকারী সংস্থাগুলো সতর্ক করছে যে গাজা দুর্ভিক্ষের দ্বারপ্রান্তে।
নেতানিয়াহুর নতুন এই পরিকল্পনা কার্যকর হলে ২০০৫ সালের গাজা থেকে ইসরায়েলের প্রত্যাহার সিদ্ধান্ত কার্যত উল্টে যাবে, যা অতীতে ডানপন্থি রাজনীতিকরা হামাসের উত্থানের জন্য দায়ী বলে দাবি করে আসছে। এখনো স্পষ্ট নয়, গাজার নিয়ন্ত্রণ স্বল্পমেয়াদি হবে নাকি দীর্ঘস্থায়ী। তবে ইসরায়েলের অবস্থান পরিষ্কার—যুদ্ধের লক্ষ্য হামাসকে সম্পূর্ণভাবে পরাজিত করা এবং সব জিম্মিকে মুক্ত করা।