- ১৩ অক্টোবর, ২০২৫
আন্তর্জাতিক ডেস্ক |PNN
ইসরায়েলের দুই বছরের রক্তক্ষয়ী হামলা বন্ধে ঘোষিত যুদ্ধবিরতির পর গাজা উপত্যকাজুড়ে উদ্ধার অভিযান শুরু হয়েছে। শনিবার (১১ অক্টোবর) ফিলিস্তিনি সংবাদসংস্থা ওয়াফা জানিয়েছে, ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে অন্তত ১৩৫ জন ফিলিস্তিনির মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।
গাজার বিভিন্ন হাসপাতালেও আরও ডজনখানেক মরদেহ পৌঁছেছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। এর মধ্যে শুধু গাজা সিটির আল-শিফা হাসপাতালে ৪৩ জন এবং আল-আহলি আরব হাসপাতালে ৬০ জনের মরদেহ নেওয়া হয়েছে। বাকি মরদেহগুলো নুসাইরাত, দেইর আল-বালাহ ও খান ইউনুসের হাসপাতালগুলোতে পাঠানো হয়েছে।
চিকিৎসা কর্মকর্তারা জানান, শুক্রবারের ইসরায়েলি বিমান হামলায় আরও ১৯ জন নিহত হন এবং আগের হামলায় আহত এক ব্যক্তি পরে মারা যান। গাজার দক্ষিণে গাবুন পরিবারের বাড়িতে বোমা হামলায় এক পরিবারের ১৬ সদস্য নিহত হন। এছাড়া শেখ রাদওয়ান ও খান ইউনুসের কাছাকাছি এলাকাতেও কয়েকজনের প্রাণহানি ঘটে।
ইসরায়েলি বাহিনী গাজার কিছু এলাকা থেকে সরে যাওয়ার পর আল-রাশিদ সড়ক পুনরায় খুলে দেওয়া হয়। এতে হাজারো বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনি ধ্বংসস্তূপের মধ্যে ফিরে যাওয়ার দীর্ঘ ও কষ্টকর যাত্রা শুরু করেছেন।
আল জাজিরার প্রতিবেদক তারেক আবু আজযুম জানান, “শিশু, নারী, বৃদ্ধ, গাড়ি, রিকশা, এমনকি গাধার গাড়িতে আসবাবপত্র বোঝাই করে মানুষ গাজা সিটির দিকে ছুটছে। অনেক পরিবার তাঁবু খুলে নিয়ে গেছে, যেন নিজেদের ভাঙা বাড়ির জায়গায় আবার সেটি খাটাতে পারে।”
তিনি আরও বলেন, “এই প্রত্যাবর্তন ঐতিহাসিক হলেও বাস্তবে এটি মানবিক সংকট আরও গভীর করছে। আশ্রয়, খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানির তীব্র সংকট তৈরি হয়েছে।”
গাজা সিটি এখন কার্যত বসবাসের অনুপযুক্ত—বলা যায়, কোনো পরিকাঠামো, বিদ্যুৎ বা নিরাপদ পানি অবশিষ্ট নেই। শুধু ছাই আর ভাঙা দেওয়ালের স্তূপ।
বাসিন্দা নাঈম ইরহিম বলেন, “আমার ছেলে নিহত হয়েছে, মেয়েরা সবাই আহত। তবুও আমি ফিরব গাজায়। আমরা তাঁবু খাটাব, যেভাবে পারি বেঁচে থাকব।”
অন্য এক প্রত্যাবর্তনকারী আইশা শামাখ বলেন, “আমরা আমাদের ঘর দেখতে চাই—যে ঘরগুলো যুদ্ধের শুরুতেই ধসে পড়েছিল। সন্তানদের দেহ মাটির নিচে, কিন্তু যুদ্ধবিরতির এই স্বস্তি আমাদের বেঁচে থাকার আশা জাগাচ্ছে।”
আল জাজিরার প্রতিবেদক ইব্রাহিম আল-খলিল বলেন, “মানুষের মুখে একইসঙ্গে কান্না ও হাসি—তারা জানে না ঘরগুলো টিকে আছে কিনা, তবুও ফিরে আসছে, কারণ এটাই তাদের মাটি।”
শেখ রাদওয়ান এলাকার বাসিন্দা মোহাম্মদ শরাফ বলেন, “আমরা ফিরে পেয়েছি ধ্বংসস্তূপ, সবকিছু বদলে গেছে। ভেবেছিলাম কয়েক দিনের জন্য যাচ্ছি, কিন্তু ফিরে এসে কিছুই পেলাম না।”
অমানবিক ধ্বংসযজ্ঞ, অসংখ্য প্রাণহানি ও শোকের মাঝেও গাজাবাসীর ফেরার ইচ্ছা প্রমাণ করে—তাদের কেউই নিজেদের ভূমি থেকে মুছে দিতে পারবে না।