Tuesday, October 14, 2025

গাজা যুদ্ধবিরতির প্রথম ধাপে ৭ ইসরায়েলি বন্দি মুক্তি, ২ হাজার ফিলিস্তিনি বন্দি মুক্তির পথে


ছবিঃ তেল আভিভে আনন্দ উদযাপন: হামাস সাতজন জীবিত বন্দিকে রেড ক্রসের কাছে হস্তান্তর করেছে জেনে উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়ল ইসরায়েলিরা (সংগৃহীত । আল জাজিরা। মেনাহেম কাহানা / এএফপি )

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | PNN:

গাজা যুদ্ধবিরতির প্রথম ধাপের অংশ হিসেবে হামাস সাত ইসরায়েলি বন্দিকে আন্তর্জাতিক রেড ক্রস কমিটির (ICRC) কাছে হস্তান্তর করেছে। সোমবার (১৩ অক্টোবর) বিকেলে এই বন্দি বিনিময় কার্যক্রম সম্পন্ন হলে ইসরায়েলে আনন্দের ঢেউ ছড়িয়ে পড়ে।

ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানায়, মুক্তিপ্রাপ্তদের মধ্যে রয়েছেন মাতান আংগ্রেস্ট, গালি ও জিভ বারম্যান, আলন ওহেল, আইতান মর, ওমরি মিরান এবং গাই গিলবোয়া দালাল। বন্দিদের ইসরায়েলে ফেরার পর সেনা ও গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের তত্ত্বাবধানে প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হবে বলে নিশ্চিত করেছে কর্তৃপক্ষ।

চুক্তি অনুযায়ী, হামাস মোট ২০ জন জীবিত ইসরায়েলিকে মুক্তি দেবে এবং এর বিনিময়ে ইসরায়েল প্রায় দুই হাজার ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্তি দেবে—যাদের অনেকেই অভিযোগ ছাড়াই আটক ছিলেন। ফিলিস্তিনি সূত্র জানিয়েছে, মুক্তির অপেক্ষায় থাকা বন্দিদের ইতোমধ্যে বিভিন্ন ইসরায়েলি কারাগার থেকে বাসে করে স্থানান্তর করা হয়েছে।

গাজার খান ইউনুসে নাসের হাসপাতালে ফিলিস্তিনি বন্দিদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও পুনর্মিলনের প্রস্তুতি চলছে। হাসপাতালের বাইরে হাজারো মানুষ স্বজনদের ফেরার অপেক্ষায় ভিড় করেছে।

রবিবার রাতে দেওয়া এক টেলিভিশন ভাষণে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু বলেন, “আগামীকাল আমাদের সন্তানরা ঘরে ফিরবে—এটি আমাদের জাতির জন্য ঐক্যের মুহূর্ত।” তিনি আরও বলেন, “এটি এক নতুন পথের সূচনা—পুনর্গঠন, নিরাময় ও ঐক্যের পথ।”

তবে অনেক বন্দির পরিবার নেতানিয়াহুর নেতৃত্বের সমালোচনা করে বলেছে, তিনি রাজনৈতিক স্বার্থে যুদ্ধকে দীর্ঘায়িত করেছেন। শনিবার তেলআবিবে মার্কিন দূত স্টিভ উইটকফ নেতানিয়াহুকে প্রশংসা করলে অনেকেই বিক্ষোভে অংশ নেন।

এই বিনিময় কার্যক্রমের সঙ্গে সমন্বয় করে ইসরায়েলে পৌঁছেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি গাজা যুদ্ধবিরতির মূল মধ্যস্থতাকারী এবং এই সপ্তাহেই মিশরের শারম আল-শেখে আয়োজিত শান্তি সম্মেলনে সভাপতিত্ব করবেন।

ট্রাম্পের সঙ্গে রয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও, যুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী পিট হেগসেথ এবং সিআইএ প্রধান জন র‍্যাটক্লিফ। যাত্রার আগে ট্রাম্প বলেন, “এটি এক বিশেষ সময়—সবাই উৎসাহিত।”

আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, “এটি মূলত ট্রাম্পের কূটনৈতিক প্রদর্শনী।” তিনি ইসরায়েলে বন্দি পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন, কনেসেটে ভাষণ দেবেন এবং পরদিন মিশরে ২০টিরও বেশি দেশের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করবেন।

শারম আল-শেখে অনুষ্ঠিতব্য গাজা শান্তি সম্মেলনে জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস, জর্ডানের রাজা দ্বিতীয় আবদুল্লাহ ও তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রেজেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ানসহ বহু বিশ্বনেতা উপস্থিত থাকবেন।
ইরান অবশ্য যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক হামলার কারণে অংশগ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে।

মিশর জানিয়েছে, এই সম্মেলনে “গাজা যুদ্ধের অবসান” ঘোষণা করে একটি যৌথ নথি স্বাক্ষরিত হতে পারে।

চুক্তির দ্বিতীয় ধাপে ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহার, হামাসের নিরস্ত্রীকরণ, গাজায় নতুন প্রশাসন গঠন ও পুনর্গঠন পরিকল্পনা অন্তর্ভুক্ত থাকবে। যুক্তরাষ্ট্র জানিয়েছে, “যুদ্ধ শেষ হলেও বাস্তব পুনর্গঠনই হবে সবচেয়ে কঠিন কাজ।”

গাজার সাংবাদিক ইব্রাহিম আল-খালিলি জানান, “মানুষ এখন ধ্বংসস্তূপে ফিরে যাচ্ছে—তাদের ঘরবাড়ি নেই, স্কুল নেই, সরকার নেই—শুধু ধ্বংস।”

বর্তমানে গাজায় সীমিত পরিমাণে মানবিক সহায়তা প্রবেশ করছে, তবে জনসংখ্যার বিপুল চাহিদা পূরণে তা অপ্রতুল। খাদ্য, ওষুধ, তাঁবু, সৌরবিদ্যুৎ ও চিকিৎসা সরঞ্জামের ঘাটতি এখনো তীব্র।

এদিকে, বন্দি বিনিময়ের সফল বাস্তবায়ন মধ্যপ্রাচ্যের শান্তি প্রক্রিয়ায় এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করতে পারে—যদিও সামনে পথ এখনো দীর্ঘ ও অনিশ্চিত।

Super Admin

PNN

প্লিজ লগইন পোস্টে মন্তব্য করুন!

আপনিও পছন্দ করতে পারেন