- ০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫
আন্তর্জাতিক ডেস্ক। PNN
ফিলিপাইনের বন্যা নিয়ন্ত্রণ প্রকল্পে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগে সাতজনকে গ্রেপ্তার করেছে দেশটির আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। প্রেসিডেন্ট ফের্দিনান্দ মারকোস জুনিয়র সোমবার এক ভিডিও বার্তায় এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, এটি বহু বহুল আলোচিত “ঘোস্ট ইনফ্রাস্ট্রাকচার” কেলেঙ্কারির প্রথম ধাপ মাত্র।
দুর্নীতিবিরোধী বিশেষ আদালত স্যান্ডিগানবায়ান ইতোমধ্যে ডজনখানেক ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা গ্রহণ করেছে। আরও বহু প্রকল্পে তদন্ত চলছে বলে জানিয়েছে সরকার। ফিলিপাইনের অর্থ মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, এসব ভূয়া প্রকল্পে ১১৮.৫ বিলিয়ন পেসো— প্রায় ২ বিলিয়ন ডলার—ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
মারকোস জানান, দুজন অভিযুক্ত আত্মসমর্পণের ইঙ্গিত দিয়েছেন। তবে এখনো সাতজন পলাতক রয়েছে এবং তাদের সহায়তা করলে সংশ্লিষ্ট সবাই আইনের আওতায় আসবে বলে কঠোর সতর্কবার্তা দেন তিনি।
মারকোস বিশেষভাবে উল্লেখ করেন সাবেক সংসদ সদস্য জালদি কো–এর নাম। তার পরিবারের মালিকানাধীন সানওয়েস্ট কর্পোরেশন ওরিয়েন্টাল মিন্ডোরো প্রদেশে মাগ-আসাওয়াং তুবিগ নদীর ওপর ২৮৯ মিলিয়ন পেসো মূল্যের একটি বাঁধ নির্মাণ প্রকল্পে ঠিকাদার ছিল—যা দুর্নীতি তদন্তের প্রথম লক্ষ্যবস্তু।
ফিলিপাইনের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জনভিক রেমুল্লা জানান, জালদি কো দেশ ছাড়িয়ে পালিয়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে যুক্তরাষ্ট্র, নিউজিল্যান্ড ও জর্ডানে অবস্থান করা তিনজন অভিযুক্ত শিগগিরই সংশ্লিষ্ট দূতাবাসে আত্মসমর্পণ করতে পারেন।“বিশ্বের যেখানেই থাকুন, আপনাদের খুঁজে বের করা হবে,” সাংবাদিকদের সামনে হুঁশিয়ারি দেন রেমুল্লা।
ফিলিপাইনের গণমাধ্যম র্যাপলার জানায়, সোমবার পর্যন্ত জনকল্যাণ ও সড়ক বিভাগ (DPWH)–এর অন্তত আট কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এদের মধ্যে আঞ্চলিক পরিচালক, প্রকৌশলী, বিডিং কর্মকর্তাসহ আরও অনেকে রয়েছেন।
প্রেসিডেন্ট মারকোস প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, দুর্নীতিতে জড়িত সিনেটর, সংসদ সদস্য, প্রভাবশালী ব্যবসায়ী—কারও প্রতিই ছাড় দেওয়া হবে না। তাঁর ভাষায়, “অনেকে বড়দিনের আগেই জেলে যাবে।”
এ কেলেঙ্কারিতে অভিযুক্তদের বিলাসবহুল প্রাসাদ, ব্যক্তিগত জেট, ব্যাগভর্তি নগদ টাকা ও মূল্যবান গাড়ির ছবিগুলো সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হওয়ার পর দেশজুড়ে বিক্ষোভ আরও জোরালো হয়েছে। রোমান ক্যাথলিক চার্চের সমর্থনে ৩০ নভেম্বর আরও বড় প্রতিবাদের আয়োজন করা হয়েছে।
অভিযুক্তদের তালিকায় রয়েছেন প্রেসিডেন্টের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ও কাজিন মার্টিন রোমুয়ালদেজ, যিনি অভিযোগ অস্বীকার করলেও স্পিকার পদ থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। সাবেক সেনেট প্রেসিডেন্ট ফ্রান্সিস এসকুদেরোকেও ঘুষ নেওয়ার অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়েছে। তবে তিনি অভিযোগ নাকচ করেছেন।
দুর্নীতির কারণে প্রকৃত বন্যা নিয়ন্ত্রণ অবকাঠামো নির্মাণ বাধাগ্রস্ত হওয়ায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে নিম্ন আয়ের জনগণ। চলতি মাসের শুরুতে মাত্র এক সপ্তাহের ব্যবধানে দুটি সুপার টাইফুন আঘাত হেনে ২৫০ জনের বেশি মানুষের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সমুদ্রের তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে ফিলিপাইনে আরও ঘন ঘন ও তীব্র ঝড় দেখা দেবে। দুর্নীতির কারণে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা দুর্বল থাকলে ভবিষ্যতে প্রাণহানি আরও বাড়বে।